২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

হঠাৎ চাঙাভাব শেয়ারবাজারে

-

ধারাবাহিক পতনে ধুঁকতে থাকা শেয়ারবাজারে হঠাৎ চাঙাভাব তৈরি হয়েছে। রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে দেশের দুই পুঁজিবাজারেই এ ঘটনা ঘটে। লেনদেনের শুরুতে কিছুটা নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দুই বাজার। দিনশেষে উভয় বাজারের সবগুলো সূচকের উন্নতি ঘটে ১ শতাংশের বেশি। আর এর ফলে বাজারগুলো ফিরে পায় হারানো মূলধনের একটি বড় অংশ। কিছুটা স্বস্তিতে ফিরেন বিনিয়োগকারীরা।
পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক পতন ঠেকাতে পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানা উদ্যোগ ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসে অর্থমন্ত্রণালয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বৈঠক। কিন্তু এ উদ্যোগও মাঠে মারা যায়। পরবর্তী ৩ দিনে পতনের গতি আরো তীব্র আকার ধারণ করে। তিন দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম দুই স্টক এক্সচেঞ্জই হারায় সূচকের ২ শতাংশের বেশি। কিন্তু গতকাল পুঁজিবাজারের নতুন সপ্তাহ শুরু হয় চাঙাভাব নিয়ে। আর্থিক খাতের পাশাপাশি গ্রামীণফোন ও স্কয়ার ফার্মার মতো কয়েকটি বড় মূলধনের কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধি সূচকের এ উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।
প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ডিএসইএক্স সূচকটি গতকাল ৬৪ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট তথা ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ৪ হাজার ৮৫৫ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি গতকাল দিনশেষে পৌঁছে যায় ৪ হাজার ৯২০ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে। একই সময় ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের উন্নতি ঘটে ৩০ দশমিক ৫৯ ও ২৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অনুরূপভাবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে ১৮৫ দশমিক ৪২ ও ১১৫ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট। এখানে দুই বিশেষায়িত সূচক সিএসই-৫০ ও সিএসই শরিয়াহ ১৭ দশমিক ৫৩ ও ১৮ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়।
হঠাৎ এ চাঙাভাব পুঁজিবাজারে স্বস্তি আনলেও গতকাল বিনিয়োগকারীদের লেনদেনে খুবই সতর্ক দেখা যায়। পরিবর্তিত বাজার আচরণের ওপর এখনো তারা আস্থাশীল হতে পারছে না। এতে ঢাকা বাজারের লেনদেন কিছুটা হ্রাস পায়। ডিএসই গতকাল ৩০৪ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৮০ কোটি টাকা কম। গত বৃহস্পতিবার বাজারটির লেনদেন ছিল ৪৮৪ কোটি টাকা। তবে চট্টগ্রামে লেনদেন সামান্য বেড়েছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বাজার আচরণের হঠাৎ এ পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও তা কতটুকু টেকসই হবে তা নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে চান না। তারা মনে করেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাতে পরিবর্তন আনায় বাজারে তারল্যপ্রবাহ কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু শুধু এর মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য ভালো ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির মাধ্যমে এর গভীরতা বৃদ্ধিসহ নীতিসহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। দেশী বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের পরিকল্পনা ও মাঠপর্যায়ে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা টেকসই হবে না।
দুই পুঁজিবাজারে বেশির ভাগ খাতেই মূল্যবৃদ্ধি ঘটে গতকাল। দাম বাড়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ কোম্পানির। এছাড়া গ্রামীণফোন ও স্কয়ার ফার্মাসহ সম্প্রতি বড় রকম মূলধন হারানো বেশ কয়েকটি কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। এছাড়া বরাবরের মতো স্বল্প মূলধনের কোম্পানিগুলো গতকালও ছিল মূল্যবৃদ্ধিতে এগিয়ে। তবে বড় ধরনের দরপতনের মুখে ছিল বীমা খাত। বাজারের সাম্প্রতিক দরপতনের সময় এ খাতটিই মোটামুটি ভালো অবস্থায় ছিল।
গতকাল অন্য খাতগুলো মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও এ খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির দরপতন ঘটে। ঢাকায় লেনদেন হওয়া ৩৫১টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৮৫টির মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ১০৬টি। অপরিবর্তিত ছিল ৬০টির দর। অপর দিকে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া ২৩২টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ১২২টির দাম বাড়ে, ৭৪টির কমে এবং ৩৬টি সিকিউরিটিজের দাম অপরিবর্তিত থাকে।
ডিএসইতে গতকাল টানা দ্বিতীয় দিনের মতো লেনদেনের শীর্ষে ছিল গ্রামীণফোন। ৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ১০ লাখ ৭২ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়। ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকায় ১ লাখ ১৪ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে মুন্নু স্টাফলারস ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল জেএমআই সিরিঞ্জ, ন্যাশনাল টিউবস, ফরচুন স্যুজ, স্কয়ার ফার্মা, মুন্নু সিরামিকস, ওয়াটা কেমিক্যালস, ইউনাইটেড পাওয়ার ও স্টাইলক্রাফট।

 


আরো সংবাদ



premium cement