২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভালো কোম্পানিগুলোই মূলধন হারাচ্ছে বেশি পতনের মাত্রা আরো বাড়ছে পুঁজিবাজারে

-

আস্থাহীনতার চরম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষের পর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া পদক্ষেপও মাঠে মারা গেল। পতন থামা তো দূরের কথা প্রতিদিন তা আরো বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বড় ধরনের মতবিনিময় সভার পর গতকাল টানা দ্বিতীয় কর্মদিবস পতনের মুখে ছিল দেশের দুই পুঁজিবাজার। সোমবার অনুষ্ঠিত এ সভার পর মঙ্গলবার ৩০ পয়েন্টের বেশি সূচক হারায় ঢাকা শেয়ারবাজার। বুধবার পতন আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়।
বরাবরের মতো গতকালও সূচকের উন্নতি দিয়ে দিন শুরু করে দুই পুঁজিবাজার। কিন্তু প্রথমদিকের এ আচরণ বেশিক্ষণ টেকেনি। মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায় শুরু হয় বিক্রয়চাপ। দিনের বাকি সময় আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাজার। বেলা যতই বাড়ছিল পতনের মাত্রা আরো বাড়ছিল। এভাবে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দরপতনের শিকার হয় প্রায় ৭০ শতাংশ কোম্পানি। এ ছাড়া হ্রাস পায় উভয় পুঁজিবাজারের লেনদেনও।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৪০ দশমিক ০৯ পয়েন্ট হারায়। ৪ হাজার ৯২৮ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি বুধবার দিনশেষে নেমে আসে ৪ হাজার ৮৮৮ দশমিক ০১ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় ১৫ দশমিক ৯৬ ও ১৬ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট। দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে ১০২ দশমিক ০৫ ও ৬২ দশমিক ৭১ পয়েন্ট। দুই বিশেষায়িত সূচক সিএসই-৫০ ও সিএসই শরিয়াহ হারায় ৬ দশমিক ২১ ও ১১ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট।
সূচকের পাশাপাশি অবনতি ঘটে দুই বাজারের লেনদেনে। ঢাকা শেয়ারবাজার গতকাল ৩৭১ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৬৪ কোটি টাকা কম। মঙ্গলবার ডিএসইর লেনদেন ছিল ৪৩৫ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে ৩৯ কোটি টাকা থেকে ৩৫ কোটিতে নামে লেনদেন।
এ দিকে পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক ধারাবাহিক দরপতনে বেশি লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে বাজারের ভালো তথা মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে। আর এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীরাই পড়ছেন বেশি লোকসানে। বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি দেশীয় ভালো কোম্পানিগুলোই মার খাচ্ছে বেশি। শুধু গ্রামীণফোনই গত কয়েক মাসে মূলধন হারিয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। কোম্পানিটির কাছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনন্স রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) দাবি করা পাওনা নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার কারণে বাজারে ব্যাপকভাবে দর হারায় কোম্পানিটি। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের। এর আগে বিইআরসির একটি সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে করা দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক লোকসানের মুখে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেন।
অনুরূপভাবে দেশীয় ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মা গত কিছু দিনের দরপতনে মূলধন হারায় ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি যার সবই বিনিয়োগকারীদের পকেটের টাকা। একইভাবে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বাটা স্যু, অ্যাপেক্স ট্যানারি ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মতো কোম্পানিগুলো বাজারে লেনদেন হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের সর্বনি¤œ দরে। এর ফলে বিপুল লোকসানে রয়েছেন এ ধরনের ভালো কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীরা। অন্য দিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় খাত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকে টানা দরপতনের মধ্য দিয়ে পার করছে। এতে সক্ষমতা হারাচ্ছে এ খাতগুলোতে বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলো যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে গোটা পুঁজিবাজারে। কারণ সক্ষমতা হারিয়ে ইতোমধ্যে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান হাত গুটিয়ে বসে আছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ভালো কোম্পানিগুলো যেভাবে প্রতিদিন দর হারাচ্ছে তাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি দিন আর সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। একপর্যায়ে তারা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দ্রুত কোনো গঠনমূললক সিদ্ধান্ত আসা জরুরি যা পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক করে তুলতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement