২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মতবিনিময় সভায় বাড়লো পুঁজিবাজারের পতন

একীভূত হচ্ছে বিএসআরএম গ্রুপের ২ কোম্পানি
-

অস্থিরতা থামাতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে বড় ধরনের মতবিনিময় সভা করেও তার কোনো ইতিবাচক ফল পেল না দেশের পুঁজিবাজার। বরং পতনের মাত্রা আরো বাড়ল। গতকাল দেশের দুই পুঁজিবাজারই বড় ধরনের সূচক হারায়। লেনদেন শুরুর মাত্র আধঘণ্টা বাজার সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও বাকি সময় পার করেছে বিক্রয়চাপের মধ্য দিয়ে। এ সময় উভয় পুঁজিবাজারেই লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও দর হারিয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ কোম্পানি।
প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৩০ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট হ্রাস পায়। ৫ হাজার ৯৫৯ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি মঙ্গলবার দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ৪২৮ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট। এ সময় ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের অবনতি ঘটে তিন দশমিক ৯৩ ও আট দশমিক ৬৪ পয়েন্ট। দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে ১১২ দশমিক ৩৮ ও ৬৯ দশমিক ১৭ পয়েন্ট। এখানে সিএসই-৫০ ও সিএসই শরিয়াহ সূচক হারায় সাত দশমিক ৫৩ ও ৯ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট।
সূচকের অবনতি ঘটলেও গতকাল দুই পুঁজিবাজারে লেনদেনের উন্নতি ঘটে। ডিএসই গতকাল ৪৩৫ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে, যা আগের দিন অপেক্ষা ৪৭ কোটি টাকা বেশি। সোমবার ডিএসইর লেনদেন ছিল ৩৮৮ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম স্টকে ৩৩ কোটি টাকা থেকে ৩৯ কোটিতে পৌঁছে লেনদেন।
প্রসঙ্গত: পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দরপতন রোধে সংশ্লিষ্ট সব স্টেক হোল্ডার ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে গত সোমবার এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন অর্থমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই সভায় পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে নিজ নিজ মতামত তুলে ধরেন। তবে এ সভা থেকে বাজারের চলমান অস্থিরতা নিরসনে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসেনি, যা চরমভাবে হতাশ করে বিনিয়োগকারীদের। ফলে গতকাল দিনের শুরুতে স্বল্প সময়ের জন্য বাজারগুলো ঊধ্বমুখী থাকলেও শেষদিকে ব্যাপক বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যে বিশৃঙ্খলা চলছে তারই প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। এখানে মতবিনিময় সভা করে কোনো লাভ নেই। বাজারে বিনিয়োগ আনতে যেসব উপাদান দরকার, তা এ মুহূর্তে অনুপস্থিত। নতুনভাবে কোনো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। তা ছাড়া বাজার এখন পুরোটাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠাননির্ভর। কিন্তু এ খাতেও শৃঙ্খলার অভাব। চলছে তারল্য সঙ্কট। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজারকে আস্থায় নিতে পারছেন না। এ কারণেই ধারাবাহিকভাবে পতন ঘটছে পুঁজিবাজারের।
এ দিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (বিএসআরএম) একই গ্রুপের অপর এক কোম্পানি (অতালিকাভুক্ত) বিএসআরএম স্টিল মিল লিমিটেডকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত সোমবার অনুষ্ঠিত কোম্পানি বিএসআরএমের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর ২২৮ ও ২২৯ ধারার আওতায় কোম্পানি দুটি একীভূত হচ্ছে। তবে একীভূতকরণের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হলে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন ও উচ্চ আদালতের সম্মতি প্রয়োজন হবে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় বিএসআরএমের এজিএমে একীভূত করার ইস্যুটি শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতির জন্য উত্থাপন করা হবে। বিএসআরএম লিমিটেড ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২৩৬ কোটি টাকা, শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৬০ লাখ।
জানা গেছে, বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড তালিকাবহির্ভূত কোম্পানি। এটি বিএসআরএমের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি বিলেট উৎপাদন করে থাকে। ২০১৭-১৮ সালে কোম্পানিটি আট লাখ ৬০ হাজার টন বিলেট উৎপাদন করেছিল। ওই বছর কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয় ৯৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বিএসআরএম লিমিটেড বর্তমানে বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেডের ৪৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এখন বাকি ৫৫ দশমিক ০৩ শতাংশ শেয়ারও তারা অধিগ্রহণ করতে চায়। কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি ও হাইকোর্টের সম্মতি পেলে বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডারদের বিপরীতে বিএসআরএম স্টিলের শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে সেটি অধিগ্রহণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement