২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আর্থিক খাতই নিয়ন্ত্রণ করছে পুঁজিবাজার বিও হিসাব কমেছে ১ লাখ ৬৭ হাজার

-

পুঁজিবাজারে বরাবরই সূচকের নিয়ন্ত্রণ থাকছে আর্থিক খাতগুলো ঘিরেই। বাজার মূলধনের বড় অংশ এ খাতগুলোর হওয়ায় বাজারের ভালো মন্দের নিয়ন্ত্রণও থাকছে এ খাতগুলোর হাতে। পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক আচরণে এটি আরো স্পষ্ট হয়েছে। জুলাই মাসের শুরু থেকে টানা পতনের পর দু’দিন পুঁজিবাজার সূচকের কিছুটা উন্নতি ঘটলেও ফের নেতিবাচক ধারায় ফিরে যায় পুঁজিবাজার। ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানÑ তিনটি খাতের দরপতনই ছিল এ জন্য দায়ী।
আগের দুই সপ্তাহের মতো গত সপ্তাহেও দেশের পুঁজিবাজার সূচকের নেতিবাচক আচরণ দিয়েই পার করেছে। লেনদেন ও সূচক দুই ক্ষেত্রেই অবনতি ঘটে এ সময়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে ৯১ দশমিক ৬১ পয়েন্ট হ্রাস পায়। রোববার ৫ হাজার ২২২ দশমিক ৩১ পয়েন্ট থেকে সপ্তাহ শুরু করলেও বৃহস্পতিবার সপ্তাহান্তে সূচকটি নেমে আসে ৫ হাজার ১৩০ দশমিক ৭ পয়েন্টে। একই সময় ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচক হারায় ২৮ দশমিক ১৩৪ ও ১৮ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট। একই সময় অবনতি ঘটেছে পুঁজিবাজারটির লেনদেনেরও। ডিএসই গত সপ্তাহে ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ৭৭ লাখ ২৮ হাজার টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ২২ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে বাজারটির মোট লেনদেন ছিল ২ হাজার ১১২ কোটি ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
সূচকের অবনতির ফলে গত সপ্তাহে ডিএসই বাজার মূলধনের একটি বড় অংশ হারায়। ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে সপ্তাহ শুরু করা বাজারটির মূলধন সপ্তাহশেষে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ১ দশমিক ১২ শতাংশ তথা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা কম। একই কারণে হ্রাস পেয়েছে বাজারের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই)ও। আগের সপ্তাহের ১৩ দশমিক ৬৭ থেকে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়ে গত সপ্তাহে ডিএসইর গড় পিই দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৪১।
গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট তালিকাভুক্ত ৩৫৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৬৬টির মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ২৭৩টি। অপরিবর্তিত ছিল ১৫টির দর।
এ দিকে গত দেড় মাসে পুঁজিবাজারে ১ লাখ ৬৭ হাজার বিও হিসাব কমে গেছে। নির্ধারিত সময়ে রক্ষণাবেক্ষণ ফি পরিশোধ না করায় মূলত এসব হিসাব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পুঁজিবাজারে চলমান টানা মন্দাবস্থা, নতুন বাজেট ঘোষণার পরও বাজারে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন না আসা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) প্রবাহ অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কারণে সংশ্লিষ্ট হিসাবধারীরা বার্ষিক নবায়ন ফি পরিশোধ করেননি বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এছাড়া সম্প্রতি আইপিও আবেদনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিএসইসি প্রতিটি বিও হিসাবে পৃথক মোবাইল নম্বর ও পৃথক ব্যাংক হিসাবের বাধ্যবাধকতা আরোপ করার পর অনেকে বিও হিসাব নবায়ন করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
সিডিবিএলের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ৩ জুন মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ২৬টি। গত ১৭ জুলাই তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩৯টি। আলোচিত সময়ে পুরুষ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ২৪০টি কমে ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫৬ জন হয়েছে। আর নারী বিনিয়োগকারী বা বিও হিসাবের সংখ্যা ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৭৫ থেকে কমে ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫১ হয়েছে। নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে ৫০ হাজার ১২৪ জন।
বিও হিসাব হচ্ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষায়িত হিসাব। একবার খোলার পর প্রতিবছর ৩০ জুনের মধ্যে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে এ হিসাব নবায়ন করতে হয়, যা বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি নামে পরিচিত। বর্তমানে এ ফি’র পরিমাণ ৪৫০ টাকা। এর মধ্যে সিডিবিএল ১০০ টাকা, হিসাব পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান (ডিপি ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক) ১০০ টাকা, বিএসইসি ৫০ টাকা পেয়ে থাকে। আর বিএসইসির মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হয় বাকি ২০০ টাকা।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল