২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পুঁজিবাজারে পিপলস লিজিংয়ের লেনদেন স্থগিত বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা ফের রাস্তায়

-

অস্বাভাবিক দরপতনে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা ফের রাস্তায় নেমেছেন। বিগত ছয়টি কর্মদিবসে ২০০ পয়েন্টের বেশি সূচক পতনের পর গতকাল আবার প্রায় ৯০ পয়েন্ট হারায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এরই প্রতিবাদে এবং পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দাবিতে গতকাল দুপুরের দিকে আবারো রাস্তায় নেমে আসেন তারা। লেনদেনের শুরুতেই সৃষ্ট প্রচণ্ড বিক্রয়চাপ যখন সূচকের পতন ১০০ পয়েন্টে যাচ্ছিল তখনই ডিএসইর বিভিন্ন ব্রোকার হাউজ থেকে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন।
বিক্ষোভকারীরা তাৎক্ষণিক এক সমাবেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্লিপ্ততার সমালোচনা করেন। তারা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে দ্রুততম সময়ে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
এদিকে গতকাল লেনদেনের শুরুতেই বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে পুঁজিবাজারগুলো। রোববার সূচকের বড় পতনের পর যেখানে বিনিয়োগকারীরা বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় ছিলেন সেখানে গতকাল পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নেয়। লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলো একে একে দরপতনের শিকার হতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পতনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিয়ে যে পতনের শুরু তাতে যোগ হতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানিসহ দেশীয় অন্যান্য মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোও। দিনশেষে দুই পুঁজিবাজারেই দরপতনের তালিকায় ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৮৮ দশমিক ০১ পয়েন্ট হারায়। ৫ হাজার ১৭৯ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি সোমবার দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ৯১ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে। একই সময় ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচক হারায় যথাক্রমে ৩৪ দশমিক ৭৫ ও ২৪ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট। এ নিয়ে গত সাত কর্মদিবসের টানা পতনে প্রধান সূচকটির ২৮৮ পয়েন্ট হারায় ডিএসই।
দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ২৬১ দশমিক ৭৪ ও ১৫৭ দশমিক ২৩ পয়েন্ট। এখানে সিএসই-৫০ ও সিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ১৬ দশমিক ১২ ও ১৯ দশমিক ৭২ পয়েন্ট।
সোমবার সকালে লেনদেনের শুরুতেই বিক্রয়চাপের কবলে পড়ে পুঁজিবাজারগুলো। ঢাকায় ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ১৭৯ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট থেকে যাত্রা করে বেলা সোয়া ১১টায় নেমে আসে ৫ হাজার ১১৯ পয়েন্টে। এ পর্যায়ে সূচকের ৬০ পয়েন্টের বেশি হারায় ডিএসই। প্রথমদিকে এ চাপ সামলে সাময়িকভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয় ডিএসই সূচক। দুপুর পৌনে ১২টায় সূচকটি ফের ৫ হাজার ১৪৭ পয়েন্টে পৌঁছে। সূচকের এ অবস্থান থেকে নতুন করে বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হয়। দিনের বাকি সময় এ চাপ অব্যাহত থাকলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাজার। দিনশেষে ৮৮ পয়েন্টের বেশি হারিয়ে ৫ হাজার ৯১ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে স্থির হয় সূচকটি।
অন্য দিকে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। লিস্টিং রেগুলেশনের ৫০ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গতকাল থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করেছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অবসায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত থাকবে বলে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
লিস্টিং রেগুলেশনের ধারা ৫০(১) অনুসারে, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি লিস্টিং রেগুলেশনের বিধান লঙ্ঘন করলে কিংবা কোম্পানির শেয়ারদরে প্রভাব পড়তে পারে, এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে ঘাটতি থাকলে স্টক এক্সচেঞ্জ এ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করতে পারবে। লিস্টিং রেগুলেশনের ধারা ৫০(৩) অনুসারে, প্রথম দফায় ৩০ কার্যদিবস পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত থাকবে। পরবর্তী সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জ চাইলে আরো ১৫ কার্যদিবসের জন্য এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়াতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ক্রমাগত লোকসানের মুখে থাকা পিপলস লিজিংকে অবসায়নের জন্য সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর কোম্পানিটিকে অবসায়নের জন্য উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ১০ জুলাই এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে জানানো হয়, কোম্পানিটির অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। এজন্য একজন অবসায়ক নিয়োগ করা হবে। অবসায়ক কোম্পানির দায়দেনা নির্ধারণ করে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে অবসায়ন করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement