১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শাশা ডেনিমসের বিদ্যুৎ কোম্পানি বন্ধ

পতনেই সপ্তাহ শেষ পুঁজিবাজারের

-

ধারাবাহিক পতনের মধ্য দিয়েই সপ্তাহ শেষ করেছে দেশের পুঁজিবাজার। গতকাল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসেও বাজার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি, বরং পাঁচ দিন টানা পতনের মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে সপ্তাহটি। এর আগে গত সপ্তাহের শেষদিন নামমাত্র উন্নতি ঘটে পুঁজিবাজার সূচকের। গতকাল লেনদেনের শুরুতে বাজার সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেও পরে সৃষ্ট বিক্রয়চাপ বাজার পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়। দিনশেষে লেনদেন হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগই দর হারায়।
প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৮ দশমিক ৩২ পয়েন্ট হ্রাস পায়। ৫ হাজার ২৩০ দশমিক ৬২ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি গতকাল দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ২২২ দশমিক ৩ পয়েন্টে। একই সময়ে দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় ৩ দশমিক ১৯ ও ৩ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট। এ নিয়ে গত ৫টি কর্মদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচকটি হারিয়েছে ১৫৮ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট। দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি রেকর্ড করা হয় ৫৭ দশমিক ৩৭ ও ২৯ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট। এখানে সিএসই শরিয়াহ হারায় ১ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট।
সূচকের পাশাপাশি গতকাল বাজারগুলোর লেনদেনও হ্রাস পায়। ডিএসই গতকাল ৩৫১ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৫৭ কোটি টাকা কম। বুধবার ডিএসইর লেনদেন ছিল ৪০৮ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে ১৮ কোটি টাকা থেকে ১২ কোটিতে নেমে আসে লেনদেন। সূচকের ধারাবাহিক অবনতির ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরায় লেনদেনের এ অবনতি, এমনটিই ধারণা বিশ্লেষকদের। তারা মনে করেন, বাজেটের পর বাজারে এমনিতেই মন্দা বিরাজ করছিল। তার ওপর সম্প্রতি আর্থিক খাতের একটি প্রতিষ্ঠান অবসায়নের খবরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুঁজিবাজার। ওই কোম্পানিতে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে তারা তো বড় ধরনের লোকসানের শিকার। আবার একটি কোম্পানির এ অবস্থা ব্যাংকসহ পুরো আর্থিক খাতে নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের পুঁজিবাজার আচরণকে পরোক্ষভাবে এরই প্রভাব বলে মনে করছেন তারা।
এ দিকে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে গতকাল থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শাশা ডেনিমসের একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। তবে কোম্পানিটি আরো দুই বছরের জন্য চুক্তির মেয়াদ নবায়নের আবেদন করেছে। বিপিডিবির কাছ থেকে মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন পেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আবারো উৎপাদনে যাবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তারা।
গত বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কোম্পানিটি জানায়, শাশা ডেনিমসের সাবসিডিয়ারি এনার্জিস পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (ইপিসিএল) ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বিপিডিবির সঙ্গে ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি করে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে গতকাল ১১ জুলাই থেকে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে। তবে এরই মধ্যে আরো দুই বছরের জন্য চুক্তির মেয়াদ নবায়ন করতে গত বছরের ৩০ আগস্ট বিপিডিবির কাছে আবেদন করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অনুমোদন পেলে আবারো বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু হবে।
বিগত সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান শাশা ডেনিমস। ২০১৫ সালে বস্ত্র খাতের এ কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনার্জিস পাওয়ার করপোরেশন লি: যেটির মালিকানার বেশির ভাগ শাশা ডেনিমসের। ফলে কোম্পানিটির মুনাফায় বিদ্যুৎ কোম্পানির মুনাফাও যোগ হতো। বিদ্যুৎ কোম্পানি বন্ধের খবরে গতকাল শাশা ডেনিমস বড় ধরনের দরপতনের শিকার হয়। গতকাল দিনশেষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দরপতনের হার ছিল ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
দুই পুঁজিবাজরের বেশির ভাগ খাতেই দরপতন ঘটে গতকাল। তবে ব্যাংকিং খাত গতকাল হারানো দরের একটি অংশ ফিরে পায়। ফলে বড় পতন থেকে রক্ষা পায় বাজারগুলো। এ ছাড়া গত ক’দিন ধরে মূল্যবৃদ্ধির ধারায় থাকা মিউচুয়াল ফান্ডে গতকাল বড় ধরনের সংশোধন ঘটে। একইভাবে সংশোধনের শিখার ছিল টেক্সটাইল, প্রকৌশল, জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতও। ঢাকায় লেনদেন হওয়া ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১০৮টির মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২১৯টি। অপরিবর্তিত ছিল ২৬টির দর। অপর দিকে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া ২৬৩টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৬৪টির দাম বাড়ে, ১৭৫টির কমে এবং ২৪টির দর অপরিবর্তিত থাকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement