২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ঈদ-পরবর্তী বাজেটমুখী পুঁজিবাজার ছিল গতিশীল

-

বাজেটকে সামনে রেখে ঈদ-পরবর্তী পুঁজিবাজার ছিল যথেষ্ট গতিশীল। এ সময় পুঁজিবাজারে উন্নতি ঘটেছে লেনদেন ও সূচকের। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে আগে থেকেই বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনার কথা বলা হচ্ছিল। ফলে ঈদের ছুটির আগে থেকেই ইতিবাচক ধারায় ফিরে দেশের পুঁজিবাজার। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট পেশের দিন পর্যন্ত এ ধারা বজায় ছিল। এ নিয়ে বিগত দশটি কর্মদিবসের আটটিতেই সূচকের উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয় দেশের দুই পুঁজিবাজার। এতে বৃদ্ধি পায় বাজারের লেনদেনও।
গত সপ্তাহের (০৯-১৩ মার্চ) মোট ৫টি কর্মদিবসের ৪টিতেই উন্নতি ঘটে পুঁজিবাজার সূচকের। এর আগে টানা আট দিন উন্নতির পর বুধবার দেশের উভয় পুঁজিবাজারই কিছুটা সূচক হারায়। ফলে সপ্তাহান্তে পুঁজিবাজারের সবগুলো সূচক ছিল ইতিবাচক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এ সময় ৯৬ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। রোববার ৫ হাজার ৩৭৭ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট থেকে সপ্তাহ শুরু করা সূচকটি বৃহস্পতিবার সপ্তাশেষে পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৪৭৪ দশমিক ৩১ পয়েন্টে। অনুরূপভাবে ডিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০৯ ও ডিএসই শরিয়াহর উন্নতি ঘটে ২৯ দশমিক ৭১ ও ২৯ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট।
সূচকের ধারাবাহিক এ উন্নতি বাজারে কমবেশি আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়। ফলে উন্নতি ঘটে বাজারের লেনদেনে। এ সময় ডিএসই ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ৩৯ লাখ ৬ হাজার টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। ঈদের আগের সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেন ছিল ১ হাজার ৮৪১ কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। একই হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বাজারটির গড় লেনদেনও। আগের সপ্তাহের ৩৬৮ কোটি টাকা থেকে ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে গত সপ্তাহে ডিএসইর গড় লেনদেন দাঁড়ায় ৪৯২ কোটিতে।
সূচকের ধারাবাহিক উন্নতির ফলে বড় ধরনের উন্নতি ঘটে ডিএসইর বাজার মূলধনের। এ সময় ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ হয় বাজার মূলধনে। রোববার ৩ লাখ ৯৪ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে সপ্তাহ শুরু করা বাজারটির মূলধন সপ্তাহান্তে দাঁড়ায় ৪ লাখ ২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ২ দশমিক ০২ শতাংশ বেশি। একই কারণে বেড়ে যায় বাজারটির গত মূল্য-আয় অনুপাতও (পিই)। ১৩ দশমিক ৯৬ থেকে ২ দশমিক ০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে সপ্তাহান্তে ডিএসইর পিই পৌঁছে যায় ১৪ দশমিক ২৫ এ।
গত বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার সাময়িকভাবে গতি ফিরে পেলেও তা স্থায়ী ছিল এক সাসেরও কম সময়। পরে জাতীয় মুদ্রানীতি ঘোষণার পর থেকে ফের নেতিবাচক প্রবণতার শিকার হয় পুঁজিবাজার। পরবর্তী চার মাসে টানা পতন ঘটতে থাকে বাজার সূচকের। চার মাসে ৭০০ পয়েন্টের বেশি হারায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচকটি। ২০১০ সালের মতো আবার রাস্তায় নামেন বিনিয়োগকারীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব মহল তৎপর হয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠকে ২০১৯-’২০ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনার আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রীর দেয়া আশ্বাসে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে পুঁজিবাজার। গত ১৫ মে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচকটি সাম্প্রতিক সময়ের সর্বনি¤œ ৫ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। গত গত বৃহস্পতিবার মাত্র ১৬ কর্মদিবসের ব্যবধানে সূচকটি পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৪৭৪ পয়েন্টে। এ ক’দিনে প্রায় ৩০০ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে সূচকটির। বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগকারীদের সূরক্ষা দিতে বেশ কিছু প্রণোদনার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী সামনের দিনগুলোতে, যা বাজার স্থিতিশীলতায় কমবেশি অবদান রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে মূল্যবৃদ্ধিতে বীমা খাতের প্রাধান্য দেখা যায়। সাপ্তাহিক মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় ছিল এ খাতের বেশ কয়েকটি কোম্পানি।
এ সময় ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি ইউনাইটেড পাওয়ার। ৯৬ কোটি ৭৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় কোম্পানিটির ২৬ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার এ সময় হাতবদল হয়। ৬৬ কোটি ২৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় ৬৫ লাখ ৮৭ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে প্রকৌশল খাতের বিবিএস ক্যাবলস ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল জেএমআই সিরিঞ্জ, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন হাউজিং, খুলনা পাওয়ার, এসকে ট্রিমস, ব্র্যাক ব্যাংক, বিএটিবিসি ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।

 


আরো সংবাদ



premium cement