কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুঁজিবাজার
- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ২০ মে ২০১৯, ০০:০০
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া সিদ্ধান্তের কারণে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। গতকাল দেশের দুই পুঁজিবাজারেই সূচকের বড় ধরনের উন্নতি হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ব্যাংকের বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারের বাইরে হিসাব করার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। গতকাল বাজার আচরণের এ পরিবর্তনের কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্তকেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারের যখনই ধারাবাহিক পতন হয় তখন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আঙুল ওঠে বাংলাদেশ ব্যাংকের দিকে। কারণ পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহের সব চেয়ে বড় যে মাধ্যম সেই ব্যাংকিং খাতকে নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এ খাতে যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে বরাবরই প্রভাবিত করে থাকে। ২০১০ সালের পুঁজিবাজারে বিপর্যয়ের জন্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দায়ী করা হয়। একইভাবে সাম্প্রতিক সময়ের টানা দরপতনের কারণ হিসেবেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নির্দেশনাকেই চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সংজ্ঞা নিয়ে দীর্ঘদিন দেনদরবার করে আসছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) সংেিশ্লষ্ট সব পক্ষ। তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ফান্ডের বাইরে ব্যাংকের বিনিয়োগকে হিসাবের বাইরে রেখে সংজ্ঞায়িত করার পক্ষেই ছিল তাদের যুক্তি। এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে সায় দিলো। গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সংস্থাটি।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। কারণ অতালিকাভুক্ত কোম্পানি ও বিভিন্ন ফান্ডে ব্যাংকের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে যা এতদিন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসাবে ধরা হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে। এ ধারণা থেকেই গতকাল বাজার আচরণে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন তারা। দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা এ বিষয়টির নিষ্পত্তি হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারাও মনে করেন, এখন ব্যাংকগুলো চাইলে বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। গত তিন মাস ধরে যেভাবে এসব প্রতিষ্ঠান বাজারে বিক্রয়চাপ বাড়িয়েছে এখন তার উল্টোটা হলেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে বাজার।
প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ১০৪ দশমিক ৯১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ৫ হাজার ২৩০ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি গতকাল দিনশেষে পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৩৩৫ দশমিক ৭ পয়েন্টে। এটি গত এক বছরের মধ্যে একদিনে ডিএসইর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি। এর আগে গত ৫ মে একদিনে ১০৮ পয়েন্ট উন্নতি হয় ডিএসইর প্রধান সূচকটি। ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচক যথাক্রমে ৩১ দশমিক ৬৪ ও ১৭ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৩০৫ দশমিক ২১ ও ১৮৪ দশমিক ২২ পয়েন্ট। সিএসই শরিয়াহ সূচক বৃদ্ধি পায় ১৩ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট।
সূচকের পাশাপাশি বড় ধরনের অবনতি ঘটে বাজারগুলোর লেনদেনেও। ডিএসই গতকাল ৪৪৩ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে, যা আগের দিন অপেক্ষা ১৫৩ কোটি টাকা বেশি। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর লেনদেন ছিল ২৯০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম স্টকের লেনদেন পৌঁছে ৩২ কোটিতে। বৃহস্পতিবার এখানে মাত্র ১২ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি হয়েছিল।
গতকাল সকালে লেনদেনের শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল দুই বাজার সূচক। সূচককে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটি ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। লেনদেনের শুরুতেই এ খাতগুলোর ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি হতে থাকে। বেড়ে যায় এ খাতে লেনদেনও। দীর্ঘদিন পর গতকাল ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানিতে তাই প্রাধান্য দেখা যায় ব্যাংকিং খাতের। প্রথম দশটি কোম্পানির ছয়টিই ছিল ব্যাংক। এর ফলে একদিনেই বড় ধরনের মূলধন ফিরে পেল পুঁজিবাজারগুলো। একদিনেই ডিএসই সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি মূলধন ফিরে পেল। তিন লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা মূলধন নিয়ে দিন শুরু করা বাজারটির মূলধন গতকাল দিনশেষে পৌঁছে যায় তিন লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা