২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সর্বনিম্ন মূল্যস্তরে পুঁজিবাজার সাপ্তাহিক পুঁজিবাজার

-

টানা মন্দার মধ্য দিয়ে পার করছে দেশের পুঁজিবাজার। চলতি বছরের শুরু থেকে চলতে থাকা এ মন্দায় এবার যোগ হয়েছে নির্বাচন পূর্ববর্তী অস্থিরতা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে চলতে থাকা এ মন্দা থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না পুঁজিবাজারগুলো। এভাবে টানা পতনের ফলে সাম্প্রতিক সময়ের সবনি¤œ মূল্যস্তরে রয়েছে এখন পুঁজিবাজার। এর ফলে এ সময় পুঁজিবাজারগুলো বড় অঙ্কের মূলধন হারিয়েছে। আর এ মূলধনের যার পুরোটাই গেছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পকেট থেকে। একই সাথে পতন ঘটছে বাজার সূচকের।
গত এক বছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ হারায় প্রধান সূচকটির এক হাজার ১০০ পয়েন্ট। বছরের শুরুতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছিল ৬ হাজার ৩১৮ দশমিক ২৭ পয়েন্টে। আর গত বৃহস্পতিবার সূচকটি নেমে আসে ৫ হাজার ২৫১ দশমিক ০১ পয়েন্টে। একই সময় ডিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ৪৫০ ও ২০০ পয়েন্টের বেশি। সূচকের ধারাবাহিক অবনতির কারণে বিনিয়োগের একটি বড় অংশই এখন ঝুঁকিতে।
এ বছরের ৩ জানুয়ারি ছিল পুঁজিবাজারের প্রথম কর্মদিবস। এদিন ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ২৮ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ছোট-বড় ১৪টির মতো কোম্পানির তালিকাভুক্তির বাজারটিতে কয়েক হাজার কোটি টাকার মূলধন যোগ হলেও এ মুহূর্তে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৭৯ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরেরও কম সময়ে মূলধনের প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজারটি। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিপুল মূলধন যোগ হওয়ার পরও এ পরিমাণ মূলধন হারানোয় শঙ্কায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে পুঁজিবাজারের মূল্যস্তর নেমে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ের সর্বনি¤œ মূল্যস্তরে। বিশেষ করে বাজারের মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোই এর শিকার হয়েছে সব চেয়ে বেশি। সিমেন্ট খাতের হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, এমআই সিমেন্ট ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট, প্রকৌশল খাতের বিএসআরএম লিমিটেডে, টেলিকমিউনিকেশন খাতের গ্রামীণফোন, ওষুধ ও রসায়ন খাতের এসি আই লিমিটেড, এসিআই ফরমুলেশন, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস, স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা ও একমি ল্যাবরেটরিজ বর্তমানে লেনদেন এ বছরের সর্বনি¤œ দরে।
উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর বাইরে থাকা অন্যান্য মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির মধ্যে জ্বালানি খাতের মোবিল যমুনা লুব্রিকেন্ট, সামিট পাওয়ার, শাহজিবাজার পাওয়ার, ডরিন পাওয়ার, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে বার্জার পেইন্টস, গ্লাক্সো স্মিথকিন (বাংলাদেশ) এ মুহূর্তে স্বাভাবিক দর ধরে রাখতে পারছে না। অন্য দিকে মন্দা বাজারের সুযোগ নিয়ে দুর্বল কোম্পানিগুলোর চলছে রমরমা।
ডিএসইর সাম্প্রতিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় ধারাবাহিক এ দরপতনে ঢাকা শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রায় ২০ শতাংশ বর্তমানে অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে। এর মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ডের অবস্থাই সব চেয়ে শোচনীয়। এ খাতের ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র পাঁচটি ফান্ড এ মুহূর্তে অভিহিত মূল্য ধরে রাখতে পেরেছে। বাকি ৩২টি ফান্ডই লেনদেন হচ্ছে অভিহিত মূল্যের নিচে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ফান্ডের দর রয়েছে ৫ টাকার মধ্যে।
মিউচুয়াল ফান্ডের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে দর হারিয়েছে অন্যান্য খাতের বেশ কিছু কোম্পনি। এর মধ্যে অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে ২৬ কোম্পানির শেয়ার দর। আর বাজারের এ অবস্থায় এসব কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ব্যাংকিং খাতের কোম্পানি যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, টেক্সটাইল, জ্বালানি, প্রকৌশল ও বিবিধ খাতের কোম্পানি। তবে ব্যাংক ছাড়া এসব কোম্পানির বেশির ভাগই জেড গ্রুপের।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক যে দরপতন তা আরো দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, যৌক্তিক কোনো কারণ না থাকলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হওয়া অস্থাহীনতা প্রতিনিয়ত বাজারের পতন ঘটাচ্ছে। কয়েকটি ব্যাংকসহ বেশি কিছু কোম্পানি অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি বেচাকেনা হচ্ছে। বাজারে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দরও ফেস ভ্যালুর নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement