১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন ডিএসইর

-

বড় পতনের পর ফের উন্নতি ঘটেছে পুঁজিবাজার সূচকের। গতকাল সারাদিন সূচকের অস্থির ওঠানামার পর দেশের দুই পুঁজিবাজারই সূচকের উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। তবে ৪ ঘণ্টা লেনদেন সময়ের পুরোটাই যেন ছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রতিযোগিতা। ক্ষণে প্রচণ্ড বিক্রয়চাপে পড়ে যাচ্ছে সূচক আবার পরক্ষণেই ক্রয়চাপ ঊর্ধ্বমুখী করে তুলছে সূচককে। এভাবে অস্থির বাজারআচরণ শেষে শেষ হাসিটা হেসেছেন ক্রেতারাই। গত তিন দিনের প্রায় দেড় ’ পয়েন্ট অবনতির বিপরীতে ২৯ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে পুঁজিবাজার সূচকের।
দিনভর সূচকের এ সীমাহীন ওঠানামায় সতর্ক ছিলেন বিনিয়োগকারীরা যা প্রভাব পড়ে দিনের লেনদেনে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল ৪৮৭ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি হয়, যা ছিল গত তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারটির সর্বনি¤œ লেনদেন। এ বছরের ১৬ জুনের পর আর ৫০০ কোটির নিচে নামেনি ডিএসইর লেনদেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেশের প্রধান পুঁজিবাজারটির লেনদেন ছিল হাজার কোটি টাকার ওপরে। তবে লেনদেন বেড়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল ৬৪ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি হয়, যা আগের দিন অপেক্ষা ২৯ কোটি টাকা বেশি। সোমবার সিএসইর লেনদেন ছিল ৩৫ কোটি টাকা।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ২৯ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ৫ হাজার ৩৫৭ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি মঙ্গলবার দিনশেষে পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৩৮৬ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে। একই সময় ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের উন্নতি ঘটে ৮ দশমিক ২২ ও ৭ দশমিক ৬১ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টকে সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে ৮৯ দশমিক ৫১ ও ৫৭ দশমিক ২২ পয়েন্ট। এখানে সিএসই-৫০ ও সিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ দশমিক ০৪ ও ৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখে।
সূচকের পতন রোধ হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করলেও সামনের দিনগুলো নিয়ে এখনো সংশয়ে আছেন। গতকাল বিভিন্ন ব্রোকার হাউজ ঘুরে কয়েকজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা তাদের এ আশঙ্কার কথা জানান। তাদের মতে, দিনের বাজার আচরণ দেখলেই বোঝা যায় বিক্রয়চাপ ঠেকাতে গতকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সক্রিয় ছিল। তারাই বাজারের পতন ঠেকায়। কিন্তু এভাবে প্রতিদিন পতন ঠেকানো সম্ভব নয়। বাজারকে তার নিজস্ব শক্তিতেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা গত ক’দিনে কমবেশি হ্রাস পেয়েছে। এখন এ আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে দু-এক দিন বাজারকে স্বাভাবিক আচরণে ফিরতে হবে। আর এটা করতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিক্রয়চাপ হ্রাস করতে হবে।
মঙ্গলবার সূচকের উন্নতি দিয়েই দিন শুরু করে দুই পুঁজিবাজার। ঢাকায় ডিএসইএক্স সূচকের ৫ হাজার ৩৫৭ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট থেকে যাত্রা করে ১৫ মিনিটে সূচকটি পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৩৮২ পয়েন্টে। কিন্তু প্রচণ্ড বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে পরবর্তী ১৫ মিনিটেই সূচকটি নেমে আসে ৫ হাজার ৩৪৭ পয়েন্টে। সূচকের এ অবস্থান থেকে ফের ঊর্ধ্বমুখী হয় ডিএসই সূচক। বেলা সাড়ে ১১টায় সূচকটি ফের পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৩৮৯ পয়েন্টে।
লেনদেনের এ পর্যায়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হলে দুপুর ১২টা না বাজতেই সূচকটি নেমে আসে ৫ হাজার ৩৬২ পয়েন্টে। এখান থেকে আবার ঊর্ধ্বমুখী হওয়া সূচকটি বেলা পৌনে ১টায় পৌঁছে যায় দিনের সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩৯০ পয়েন্টে। কিন্তু বেশিক্ষণ সূচকের এ অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি ডিএসই। বেলা ১টার দিকে ফের বিক্রয়চাপ বাড়লে বেলা পৌনে ২টার দিকে সূচক নেমে আসে ৫ হাজার ৩৫৩ পয়েন্টে। লেনদেনের শেষ আধঘণ্টা আবার ঊর্ধ্বমুখী হলে দিনশেষে ২৯ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে ডিএসই সূচকের।
ব্যাংকিং খাতে মিশ্র প্রবণতা থাকলেও বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে বেশির ভাগ কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধিই গতকাল দিনের সূচককে এগিয়ে নেয়। অন্য খাতগুলোও আগের তিন দিনের হারানো দরের একটি অংশ ফিরে পায় গতকাল। সিমেন্ট, খাদ্য, জ্বালানি, রসায়ন, সেবা ও টেক্সটাইল খাতে মূল্যবৃদ্ধির ধারায় ফিরে বেশির ভাগ কোম্পানি। ফলে ঢাকা শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানি উঠে আসে মূল্যবৃদ্ধির তালিকায়। এখানে লেনদেন হওয়া ৩৩৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৫৩টির মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ১৪০টি। অপরিবর্তিত ছিল ৪১টি কোম্পানির শেয়ারদর। অপর দিকে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া ২৩১টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ১০০টির দাম বাড়ে, ১০০টির কমে এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত থাকে।
বরাবরের মতো ডিএসইতে গতকালও লেনদেনের শীর্ষস্থানটি দখলে রাখে খুলনা পাওয়ার। ৫২ কোটি ২১ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৪৩ লাখ ৯৪ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় গতকাল। ২০ কোটি ৬১ লাখ টাকায় ১৫ লাখ ৮৫ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে ইফাদ অটোস ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস, শাশা ডেনিমস, ন্যাশনাল লাইফ, বিবিএস ক্যাবলস, ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স, ইউনাইটেড পাওয়ার, ইনটেক অনলাইন ও আমান ফিড।


আরো সংবাদ



premium cement