২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আর্থিক খাতে ভর করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুঁজিবাজার

-

দেরিতে হলেও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। গতকাল টানা দ্বিতীয় দিনের সূচক বেড়েছে দেশের দুই পুঁজিবজারে। সূচকের বড় উন্নতি দিয়ে দিন শুরু করা বাজারগুলো শেষ দিকে এসে বিক্রয়চাপে পড়লেও দিনশেষে সূচকের উন্নতি ধরে রাখে। এ সময় উভয় পুঁজিবাজারে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বৃদ্ধি পায় লেনদেনও। সাত দিনের টানা পতন শেষে পুঁজিবাজারের এ ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে স্বস্তিতে ফিরেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ভর করে পুঁজিবাজার সূচকের উন্নতি ঘটছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৩২ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ৫ হাজার ৪৭২ দশমিক ৬ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি বুধবার দিনশেষে পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৫০৫ দশমিক ০৫ পয়েন্ট। একই সময় ডিএসই-৩০ সূচক ৬ দশমিক ১১ পয়েন্ট বাড়লেও দশমিক ৯৫ পয়েন্ট অবনতি ঘটে ডিএসই শরিয়াহ সূচকের। এ নিয়ে গত দুই দিনে প্রধান সূচকটির ৬০ পয়েন্টের বেশি ফিরে পায় ডিএসই। এর আগে সাত দিনে সূচকটির ১২৭ পয়েন্ট হারিয়েছিল ডিএসই। আর এ সাত দিনের ৫ দিনই ব্যাংকিং খাত দর হারায়। দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসএিক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ১১৫ দশমিক ০২ ও ৬৭ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট। এখানে সিএসই-৫০ ও সিএসই শরিয়াহ সূচক যথাক্রমে ৬ দশমিক ২৭ ও ১ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়।
সূচকের পাশাপাশি গতকাল দুই পুঁজিবাজারে লেনদেনেরও উন্নতি ঘটে। ঢাকা শেয়ারবাজার গতকাল ৮২৪ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি হয়, যা আগের দিন অপেক্ষা ৯৩ কোটি টাকা বেশি। মঙ্গলবার ডিএসইর লেনদেন ছিল ৭৩১ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে ২৭ কোটি থেকে ৩১ কোটি টাকাতে পৌঁছে লেনদেন।
সূচক ও লেনদেনের উন্নতি বিনিয়োগকারীদের হতাশা কিছুটা দূর করলেও তারা মনে করেন, বাজার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি ঘটছে না। এখনো বাজারে মৌলভিত্তিহীন কোম্পানিগুলোর টানা মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই ‘জেড’ শ্রেণীতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর কয়েকটি পৌঁছে যাচ্ছে দিনের সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে। তা ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোম্পানিগুলোর দর বাড়ছে সেদিন উন্নতি ঘটছে পুঁজিবাজার সূচকের। এর দ্বারা বাজারের সত্যিকার চিত্র ফুটে উঠছে না। এখনো বাজারে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের সর্বনি¤œ দলে লেনদেন হচ্ছে। বাজার সূচকের উন্নতি ঘটলেও তাতে মৌলিকভাবে বাজার আচরণের খুব একটা পরিবর্তন ঘটছে না। তারা মনে করেন, বাজারের সাম্প্রতিক এ প্রবণতার কারণেই ভালো কোম্পানি দর হারাচ্ছে। আর এতে বিদেশীসহ ভালো বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাচ্ছেন।
গতকাল সূচকের বড় ধরনের উন্নতি দিয়েই দিন শুরু করে দুই পুঁজিবাজার। ঢাকা স্টকে ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৪৭২ দশমিক ৬ পয়েন্ট থেকে যাত্রা করে কোনো বিক্রয়চাপ ছাড়াই দুপুর ১২টায় পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৫৩৯ পয়েন্টে। এ সময় ডিএসই সূচকের উন্নতি ঘটে প্রায় ৬৭ পয়েন্ট। সূচকের এ অবস্থান থেকে সাময়িকভাবে বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ চাপ খুব একটা কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারেনি। বেলা দেড়টা পর্যন্ত ডিএসই সূচক ৫০ পয়েন্টের বেশি উন্নতি ধরে রাখে। লেনদেনের এ পর্যায়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হয়, যা অব্যাহত থাকে লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত। এ সময় বৃদ্ধি পাওয়া সূচকের একটি অংশ হারিয়ে বসে ডিএসই।
গতকাল দুই বাজারের বেশির ভাগ খাতেই ছিল মিশ্র আচরণ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ৭০ শতাংশের বেশি কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও অন্য খাতগুলোতে তার কোনো প্রভাব ছিল না। বরং আগের দিন মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া বেশ কিছু কোম্পানি এ দিন দর হারায়। আর ব্যাংক খাত দিনের শুরুতে যেভাবে শতভাগ মূল্যবৃদ্ধির ধারায় ছিল, দিনের শেষভাগে তার পুরোটা ধরে রাখতে পারেনি। এ ছাড়া প্রকৌশল, টেক্সটাইল ও বীমার মতো বড় খাতগুলোতে মিশ্র প্রবণতা থাকায় লেনদেন হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগ উঠে আসে মূল্যবৃদ্ধির তালিকায়। ঢাকায় লেনদেন হওয়া ৩৩৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৫৭টির মূল্যবৃদ্ধিও বিপরীতে দর হারায় ১৩২টি। অপরিবর্তিত ছিল ৪৭টির দর। অপর দিকে চট্টগ্রামে লেনদেন হওয়া ২৫২টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ১৩২টির দাম বাড়ে, ৮৮টির কমে এবং ৩২টি সিকিউরিেিটজর দাম অপরিবর্তিত থাকে।
ডিএসইতে গতকালও লেনদেনের শীর্ষস্থানটি দখলে রাখে খুলনা পাওয়ার। ৮১ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৬০ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় গতকাল। ৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ৫২ লাখ ৯৬ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে ইনটেক অনলাইন উঠে আসে দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস, ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলসবিবিএস ক্যাবলস, সায়হাম টেক্সটাইলস কনফিডেন্স সিমেন্ট, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও আমান ফিড।

 


আরো সংবাদ



premium cement