তিন কোম্পানির লেনদেন সাসপেন্ড, ৫ কোম্পানি স্পটে
সপ্তাহের শেষ দিন পুঁজিবাজার সূচকের বড় উন্নতি- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
সূচকের বড় ধরনের উন্নতি দিয়েই সপ্তাহ শেষ করেছে পুঁজিবাজার। গতকাল দেশের দুই পুঁজিবাজারেই একই আচরণ দেখা যায়। ইতিবাচক প্রবণতায় দিন শুরু করা বাজারগুলো বড় কোনো বিক্রয়চাপ ছাড়া লেনদেন এগিয়ে নেয়। ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমাসহ অন্য খাতগুলোর ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি দিন শেষে উন্নতি ঘটায় বাজার সূচকের। এ সময় বাজারগুলোতে লেনদেন হওয়া কোম্পানির প্রায় ৬৫ শতাংশ কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।
প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৫৯ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ৫ হাজার ৪০৮ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি বৃহস্পতিবার দিন শেষে পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৪৬৭ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে। এ সময় ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৮৫ ও ৪ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।
দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ২২৯ দশমিক ৮৫ ও ১৩৫ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট। এখানে সিএসই-৫০ ও শরিয়াহ সূচক যথাক্রমে ২১ দশমিক ১৬ ও ১১ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়।
সূচকের উন্নতি ঘটলেও গতকাল ঢাকা শেয়ারবাজারের লেনদেন আগের দিনের মতো ৫৮০ কোটিতেই স্থির ছিল। তবে লেনদেন সামান্য বেড়েছে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে। বাজারটিতে ২২ কোটি টাকা থেকে ২৫ কোটিতে পৌঁছে লেনদেন।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, হঠাৎ করে সূচকের বড় ধরনের উন্নতির ফলে বিনিয়োগকারীরা ছিলেন খুবই সতর্ক। তা ছাড়া ঈদের ছুটির আগে নতুন করে বিনিয়োগ ঝুঁকি নিতে চাননি বিনিয়োগকারীরা। কারণ বিগত দিনগুলোতে টানা নেতিবাচক প্রবণতার শিকার ছিল বাজারগুলো। তা ছাড়া সামনের দিনগুলোতে বাজার আচরণ কেমন যেতে পারে তা নিয়েও সংশয়ে আছেন তারা। এ কারণে সূচকের বড় উন্নতিও বিনিয়োগকারী টানতে পারেনি বাজারগুলো।
সূচকের উন্নতির সুযোগে গতকাল আবারো অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পায় মৌলভিত্তিহীন ‘জেড’ শ্রেণির কোম্পানিগুলো। গতকাল ডিএসই’র মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় আটটিই ছিল ‘জেড’ শ্রেণীর। কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই এ দিন সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে পৌঁছে যায়। এমনকি সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে শেয়ারের বিক্রেতার অভাবে লেনদেন বন্ধ থাকে।
অথচ মাত্র ক’দিন আগে এসব কোম্পানি নিয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষ যেমন বিনিয়োকারীদের সতর্ক করে তেমনি কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম তদন্ত করার ঘোষণা দেয়। এর পর ক’দিন সাময়িকভাবে কোম্পানিগুলো দর হারাতে দেখা যায়। গতকাল আবার এসব কোম্পানির অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায়। দিনের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানি ছিল সমতা লেদার। কোম্পানিটির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১০ শতাংশ। অথচ গত মঙ্গলবারই ১০ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। এ তালিকায় আরো রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত দুইটি চিনিকল ঝিল বাংলা ও শ্যামপুর সুগার মিলস।
এ ছাড়া অরো রয়েছে মাত্র ক’দিন আগে লভ্যাংশ ঘোষণা না দেয়ায় ‘জেড’ শ্রেণীতে নেমে আসা জীবন বীমা কোম্পানি পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সও। অথচ লভ্যাংশ না দেয়ায় মঙ্গলবারও কোম্পানিটি দিনের সর্বোচ্চ দরপতনের শিকার ছিল। এ ছাড়া দুলা মিয়া কটন, সাইন পুকুর সিরামিকস, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ব্যাংকের মতো কোম্পানিগুলোর মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। এ তালিকায় অপর দুইটি কোম্পানি ছিল ‘বি’ শ্রেণীতে লেনদেন হওয়া আজিজ পাইপস ও ‘এ’ শ্রেণীর মাইডাস ফিন্যান্স।
এ দিকে সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কয়েকটি কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তিনটি কোম্পানিকে ৩০ দিনের জন্য ট্রেড সাসপেন্ড এবং পাঁচটি কোম্পানিকে স্পট ট্রেডিংয়ের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুইটি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ট্রেড সাসপেন্ড করা কোম্পানিগুলো হলো মুন্নু স্টাফলার, লিগেসি ফুটওয়্যারও বিডি অটোকারস। আগামী ১৯ আগস্ট থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে। এর পাশাপাশি ২ কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑলিগ্যাসি ফুটওয়ার এবং বিডি অটোকারস। এসব কোম্পানির শেয়ার দর দীর্ঘ দিন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।
কমিটির সদস্যরা হলেনÑবিএসইসির উপপরিচালক শামসুর রহমান এবং সরকারি পরিচালক মো: শহিদুল ইসলাম। কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র বলছে, কোম্পানি দুইটির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক শেয়ার ভলিয়ম, অস্বাভাবিক লেনদেনসহ বেশ কিছু বিষয় পরিলতি হওয়ায় এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে আরো ছয়টি কোম্পানিকে তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। যার তদন্ত প্রক্রিয়া এখনো চলছে। ১৯ আগস্ট রোববার আগামী ট্রেডিং দিবস থেকে এসব নির্দেশনা কার্যকর হবে। এ নির্দেশনা উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া স্পটে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে মুন্নু সিরামিকস, আজিজ পাইপস, স্টাইলক্রাফট, ড্রাগন সোয়েটার ও কে অ্যান্ড কিউ লি.। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নগদ টাকা দিয়েই বিনিয়োগকারীদের এসব শেয়ার কিনতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা