সৎ ছেলের কোপে হাত হারানো সেই মাকে ঘর তুলে দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা
- ঝালকাঠি সংবাদদাতা
- ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:৩২
পরম মমতায় যাকে হাত দিয়ে মুখে ভাত তুলে দিয়েছিলেন, সেই মায়েরই একটি হাত কুপিয়ে কেটে ফেলেন সৎ ছেলে। সামান্য একটি ঘটনার জেরে ছেলের এমন আচরণে হতবাক পুরো গ্রামের মানুষ।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার পরমহল গ্রামের এক হাত হারানো সেই মিনারা বেগমের (৪০) পাশে দাঁড়িয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহমুদ হাসান। চিকিৎসার দায়িত্বও নেন তিনি। এমনকি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর তাকে বসবাসের জন্য নিজের টাকায় একটি বসতঘর তুলে দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
মিনারা বেগম বলেন, ‘মাহমুদ স্যার আমাকে বাঁচার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমাকে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সহযোগিতা করেছেন। একটি খুপড়ি ঘরে থাকতাম, আমাকে বসতঘর তুলে দিয়েছেন তিনি। মাঝে মাঝে তিনি আমাদের বাড়িতে এসে টাকা দিয়ে যান। আমাকে মেরে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো সৎ ছেলে মাসুদ সরদার। তাকেও পুলিশ সাবধান করে দিয়েছে। স্যারের মতো লোক হয় না।’
জানা যায়, গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাড়ির পেছনে একটি বাগানে ক্রিকেট খেলার বল নিয়ে মিনারা বেগমের ছেলে রিমন সরদারের সাথে সৎ ছেলে মাসুদ সরদারের ছেলে সাইফুলের ঝগড়া হয়। ঝগড়া থামাতে ছুটে যান মিনারা বেগম। এসময় সৎ ছেলে মাসুদ একটি দা নিয়ে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই কুপিয়ে মিনারা বেগমের ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
মায়ের আর্তনাদ শুনে মেয়ে রাবেয়া বেগম ঘটনাস্থলে আসলে তাকেও কুপিয়ে হাতের আঙুল বিচ্ছিন্ন করে দেয় সৎ ভাই। গুরুতর অবস্থায় তাদের ভর্তি করা হয় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে।
এ ঘটনায় মিনারা বেগমের ছেলে রিপন সরদার বাদী একটি মামলা করেন।
মিনারা বেগমের স্বামী আবদুল আজিজ সরদারও খোঁজখবর নিচ্ছেন না তার। এ অবস্থায় মিনারা বেগম ছেলে-মেয়ে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। কুপিয়ে তার হাত বিচ্ছিন্ন করার পরেও থেমে ছিলো না সৎ ছেলে মাসুদ। তাকে বাড়িতে ফিরলে টুকরো টুকরো করে ফেলার ঘোষণা দেয় সে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন মিনারা।
ঠিক এ সময় তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহমুদ হাসান। তাকে নিজের টাকায় চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি নিরাপদে মিনারাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেন। ব্যক্তিগত অর্থায়নে তাকে একটি বসতঘর তুলে দেন। এতে বেজায় খুশি মিনারা বেগম। নিজের বেঁচে থাকার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়নি তার। পুলিশের সহযোগিতায় তিনি ফিরে পেলেন মাথা গোঁজার স্থান।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহমুদ হাসান বলেন, ‘মিনারা বেগমকে তার সৎ ছেলে কুপিয়ে একটি হাত বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাকে বাড়িতে ফিরলে টুকরো টুকরো করার ঘোষণা দেয় সেই ছেলে। আমি কয়েক দফায় ওই বাড়িতে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি। মিনারা বেগমের চিকিৎসা করিয়েছি, তাকে থাকার জন্য একটি বসতঘর তুলে দিয়েছি। তাদের নিরাপত্তার জন্য সবসময় পুলিশ নজর রাখছে। সৎ ছেলে মাসুদকে সাবধান করে দেয়া হয়েছে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা