২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

চাকরি করেন স্ত্রী, ৩ বছর ধরে অফিস করেন স্বামী

নিয়োগ পেয়েছিলেন স্ত্রী, কিন্তু টানা তিন বছর ধরে অফিসে স্ত্রীর চেয়ার-টেবিলে বসেই অফিস করেন স্বামী শুভ সিকদার (গোল চিহ্নিত ব্যক্তি) - নয়া দিগন্ত

পিআইও অফিসে চাকরি পেয়েছিলেন ঝুমুর রাণী। কিন্তু কর্মস্থলে যোগদানের পর একদিনের জন্যও অফিসে দেখা যায়নি তাকে। এরপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ তিন বছর। এই দীর্ঘ তিন বছর ধরেই ঝুমুর রাণীর স্বামী শুভ সিকদার স্ত্রীর কর্মস্থলে স্ত্রীর চেয়ারে বসেই প্রক্সি দিয়ে যাচ্ছেন। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার পিআইও অফিসে। এদিকে অফিসে কেবল স্ত্রীর প্রক্সি নয়, রাঙ্গাবালী পিআইও অফিসের ঘুষের লেনদেনও হয় ঝুমুর রাণীর স্বামী অভিযুক্ত শুভ সিকদারের মাধ্যমে।

বিষয়টি নিয়ে অনেকের ক্ষোভ থাকলেও পিআইও’র স্নেহধন্য হওয়ায় অভিযুক্ত শুভ বা তার স্ত্রী ঝুমুর রাণীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। স্ত্রীর কর্মস্থলে স্ত্রীর চেয়ার-টেবিলে বসে প্রক্সি দিয়েই অভিযুক্ত শুভ বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মানুষ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযুক্ত শুভ সিকদার

 

জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া অভিযোগে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে ঝুমুর রাণীকে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কার্য সহকারী পদে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু যোগদানের তিন বছরে একদিনের জন্যও অফিস করেনি ঝুমুর। তার বদলে প্রকাশ্যে তার স্বামী শুভ সিকদার দায়িত্বপালন (স্ত্রীর প্রক্সি) করে আসছেন। ওই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমারের স্নেহভাজন হওয়ার অফিসের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই ঘটনার কোনো প্রতিবাদ করেন না।

এদিকে স্ত্রীর বদলে অফিস করার ছাড়াও পিআইও অফিসের সকল ঘুষ লেনদেন হয় এই শুভর হাত ধরে হয় বলে অভিযোগে বলা হয়। পিআইও’র কাজ ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ফাইলপত্র থাকে শুভর আয়ত্তে। উপজেলাবাসীর কাছে শুভ এখন ‘দ্বিতীয় পিআইও’ বা ‘কমিশন পার্সন’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ঘুষ লেনদেনসহ নানা অপকৌশল-অপকর্মে শুভর দক্ষতা থাকায় বিগত দিনের কর্মকর্তারাও ব্যবস্থা নেয়নি এই শুভর বিরুদ্ধে। টিআর, কাবিখা, টাবিকাসহ নানা প্রকল্পের বরাদ্দ পেতে প্রথমে শুভর প্রত্যয়ন নিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়- সকল উন্নয়ন প্রকল্প থেকে পিআইও অফিসের ঘুষ লেনদেন হয় শুভর মাধ্যমে। ইউনিয়ন ঘুরে ঘুরে ঘুষের এই অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন শুভ। ২০১২ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত পিআইও তপন কুমার ঘোষ রাঙ্গাবালীতে চাকরিরত আছেন। তপন কুমার পিরোজপুর থেকে রাঙ্গাবালীতে আসার সময় শুভকে সাথে নিয়ে যোগদান করেন তিনি।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ বলেন, শুভ আমাদের অফিসের কর্মকর্তা বা কর্মচারী না হলেও সে আমাদেরকে হেল্প করে। তার স্ত্রী যদি অফিসে না এসে থাকে তাহলে আপনারা তার বিরুদ্ধে নিউজ করে দিন। আমার কোনো আপত্তি নেই।

এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাশফাকুর রহমান জানান, ‘স্ত্রীর চাকরিতে স্বামীর প্রক্সি দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। এটি সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত কাজ। আমরা তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’


আরো সংবাদ



premium cement