১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলাদেশের পানিসীমায় মা ইলিশ শিকার করছে মিয়ানমার ও ভারতীয় জেলেরা

বাংলাদেশের জলসীমায় মা ইলিশ শিকার করছে মিয়ানমার ও ভারতীয় জেলেরা - ফাইল ছবি

উপকূলীয় বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলারসহ দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ গভীর সমুদ্রে গিয়ে ইলিশসহ সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছ শিকার করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। অন্যদিকে সরকারও রাজস্ব আয় করছেন বিপুল পরিমাণে। পরোক্ষভাবে এ পেশার সাথে জড়িয়ে রয়েছে কয়েক হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা। পাশাপাশি এ পেশা থেকে উপার্জন হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু চলতি বছর ইলিশ মৌসুমের শুরুতে ধরা না দিলেও মৌসুমের শেষ ভাগে এসে জেলেদের জালে ধরা দেয় ইলিশ।

আকারে বড় না হলেও প্রছুর মাছ ধরা পড়ায় হাসি ছিল জেলেসহ মৎস্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মুখে। কিন্তু সে হাসি ম্লান হয়ে গেছে ইলিশ প্রজনন মৌসুমের অবরোধে। মা ইলিশের সঠিক ও নিরাপদ প্রজননের জন্য ৯ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর ২২ দিন ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে জেলেরা শিকার করতে পারবেন না ইলিশ। এ সুযোগে বাংলাদেশের বঙ্গোবসাগরের পানিসীমায় প্রবেশ করে নির্বিঘ্নে মা ইলিশ শিকার করছে ভারতীয় জেলেরা। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী বাংলাদেশী জেলেদের।

জেলে হানিফ মোল্লা জানান, জেলেদের জালে যেসব ইলিশ ধরা পড়ছে তার অধিকাংশ মাছের ডিমে পরিপক্কতা আসেনি । এখনো এসব ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। মাঝি বশির মিয়া একই কথা জানিয়ে বলেন, মৎস্য অবরোধের সুফল আমরাই ভোগ করছি। বিগত বছর থেকে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। এবছর মৌসুমের শেষে এসে বিগত বছরের চেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পরেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা এ সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলেরা বন্ধ করেনি মাছ ধরা, তারা মা ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ ধরে নিয়ে যায়। তাদের মাছ ধরা বন্ধে সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, মৎস্য গবেষকরা আশ্বিন মাসের মধু পূর্ণিমার আগের তিন দিন থেকে পরবর্তী ১৫ দিন মা ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজননকাল চিহ্নিত করেছেন। তাই এ বছরই প্রথম ১১ দিনের পরিবর্তে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময় সীমা ২২ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু আহরণই নয়, ইলিশ সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপণনও এ সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, ইলিশ শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশী জেলেরা মানলেও মিয়ানমার ও ভারতীয় জেলেরা এসব নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশ করে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করে যাচ্ছে। এতে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ ও প্রজননে বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে।

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে সরকারের নেয়া পদক্ষেপে প্রতি বছরেই বৃদ্ধি পাচ্ছে জাতীয় সম্পদ রুপালী ইলিশের উৎপাদন। ফলে এ পদক্ষেপকে সমর্থন করে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকছে জেলেরা। কিন্ত জেলেসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইলিশের প্রজনন মৌসুম পাল্টে গেলেও মৎস্য অধিদফতর নিষেধাজ্ঞার সময় পাল্টায়নি। আর জেলেদের সাথে সমন্বয় না করে যে অবরোধ আরোপ করা হয়েছে, তার প্রকৃত সুফল পাওয়া নিয়ে রয়েছে শংকা। এমন দাবি উপকূলীয় এলাকার জেলে ও ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি এ সময়ের প্রণোদনা বৃদ্ধিসহ পার্শ্ববর্তী ভারতের জেলেদের মাছ ধরা বন্ধে কঠোর নজর দারি না থাকা নিয়ে জেলেদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মান্নান মাঝি বলেন, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি বছরের জলদস্যু সমস্যা তো রয়েছেই। তার উপরে কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে ভিনদেশি ট্রলি ও ট্রলারের অত্যাচার। এত সমস্যার বেড়াজালে দেশীয় জেলেরা আর কুলিয়ে উঠতে পারছে না। শুধু ইলিশ প্রজনন মৌসুমেই নয়, বছর জুড়েই বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ সীমানায় চলে এসব বিদেশি ট্রলারের রামরাজত্ব।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য অফিসার মো: আবুল কালাম আজাদ নয়াদিগন্তকে বলেন, ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসনের বিষয়টি নিয়ে এর আগেও জেলার মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক ও শ্রমিকরা একাধিকবার মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। ইতোমধ্যে সরকার জরুরি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। যার ফলে সমুদ্রে নৌ-বাহিনী ও কোস্ট গার্ড নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement