২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মা হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী, সৎ বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ

মা হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী, সৎ বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঝালকাঠিতে জোড় পূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য হওয়া ষষ্ঠ শ্রেণির সেই স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার (১৩) মা হয়েছে। বুধবার সকালে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে সে পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। হাসপাতালের গাইনি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই ছাত্রী। আপন মা সাহেরা আক্তার কাজল এবং সৎ বাবা কাজী আলম স্কুল ছাত্রী সুমাইয়াকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করে। এমনকি সৎ বাবা নিজেও জোর পূর্বক বিভিন্ন সময় সুমাইয়ার সাথে মেলামেশা করতো। এতে এক পর্যায়ে সে গর্ববতী হয়ে পড়ে বলে সুমাইয়া অভিযোগ করে। সুমাইয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ মামলা নিয়ে তার মা ও সৎ বাবাকে গ্রেপ্তার করে। সুমাইয়ার জন্ম দেয়া সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য নবজাতক এবং সৎ বাবা কাজী আলমের শরীর থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকা সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, ঝালকাঠি সদর উপজেলার মহদীপুর গ্রামের ইউনুস হাওলাদারের সাথে ১৫ বছর আগে বিয়ে হয় একই এলাকার সাহেরা আক্তার কাজলের। তাদের ঘরে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। নাম রাখা হয় সুমাইয়া আক্তার। পারিবারিক কলোহের জেরে সাহেরা ও ইউনুসের সংসার ভেঙে যায়। তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। একমাত্র কন্যা সন্তান নিয়ে সাহেরা আক্তার কাজল ঝালকাঠি শহরের কাঠপট্টি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় চলে আসেন। ২০১৪ সালে কাজল শহরের কালীবাড়ি সড়কের টেলিভিশন মেকার কাজী আলমকে দ্বিতীয় বিয়ে করে।

কাজলের মেয়ে সুমাইয়া আক্তা তাদের সঙ্গেই থাকতো। মেয়েটি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তখন থেকেই তাকে জোর করে মা ও সৎ বাবা অন্য পুরুষের সাথে অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন। এমনকি সৎ বাবাও তাকে ধর্ষণ করতো। বর্তমানে সুমাইয়া ঝালকাঠি উদ্বোধন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী বলে দাবি করেন। তার রোল নম্বর ৫৭। সুমাইয়া অন্তসত্তা হয়ে পড়লে তার মা ও সৎ বাবা শহরের মৌ-মিতা ক্লিনিকে গর্ভপাত করাতে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে পরদিন আসতে বলা হয়। খবর পেয়ে ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে পুলিশ কাঠপট্টির বাসা থেকে সুমাইয়াকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি থানায় নিয়ে আসে। একইদিন রাতে শহরের কালীবাড়ি সড়কে অভিযান চালিয়ে সুমাইয়ার মা সাহেরা আক্তার কাজল ও সৎ বাবা কাজী আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সুমাইয়া অভিযোগ করে, আমাকে জোর করে এ কাজে বাধ্য করা হয়েছে। আমার মা ও সৎ বাবা অন্য পুরুষ ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে পাহারা দিতো। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ ধরণের কাজ করা হয়েছে। এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হত। আমার সৎ বাবাও প্রায়ই আমার সাথে শারীরিক সর্ম্পক করতেন। সৎ বাবার কারনেই আমি অন্তসত্তা হয়েছি।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজনিন বেগম বলেন, সুমাইয়ার প্রসব বেদনা শুরু হলে বুধবার সকালে ঝালকাঠি হাসপাতালে আসে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই জরুরী বিভাগে সে স্বাভাবিকভাবে একটি ছেলে সন্তান প্রসব করে। এরপর তাকে গাইনি ওয়ার্ডে আনা হয়। অপরিণত বয়সে মা হওয়ায় সুমাইয়া কিছুটা অসুস্থ। নবজাতক স্বভাবিক ও সুস্থ রয়েছে।

ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু তাহের বলেন, সুমাইয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমারা মামলা নিয়ে তার মা ও সৎ বাবাকে গ্রেপ্তার করেছি। সুমাইয়ার জন্ম দেয়া সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য নবজাতক এবং সৎ বাবা কাজী আলমের শরীর থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকা সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement