২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বরিশালে সর্বত্র ‘কল্লাকাটা’ আতঙ্ক

-

বরিশাল নগরীসহ জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকানের আড্ডায়, হাট-বাজার, বিদ্যালয় থেকে বাসাবাড়িতে গত কয়েকদিন ধরে একটি বিষয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। আর সেটি হলো ‘কল্লাকাটা বা মাথাকেটে নিয়ে যাওয়া’।

এনিয়ে আজব আজব গল্পও ছড়াচ্ছে মুখে মুখে। যা সবই আতকে ওঠার মতো। কোন এক সেতুতে নাকি মানুষের ‘কল্লা’ লাগবে! কেউ শুনেছেন ১০০টি আবার কেউ শুনেছে বিশ হাজার ‘কল্লা’। কেউ শুনেছে ত্রিশ হাজার ‘কল্লা’ দিতে হবে। সে ছোট ছেলে-মেয়ে হোক বা যেকোন বয়সের। এমন কথা মুখে মুখে।

কেউ শুনেছে নগরীর রূপাতলী থেকে দু’জনের ‘কল্লা’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেউ শুনেছে ছোট বাচ্চাদের ‘কল্লা’ নেওয়ার সময় নগরীতে একজনকে ও গৌরনদীতে তিনজনকে আটক করেছে স্থানীয় লোকজন। এনিয়ে রীতিমত বাগ্বিতণ্ডাও চলছে।

যদিও এসব বিষয়ে কেউই চোখে দেখেননি। সবাই শুনেছেন। আর এই শোনা থেকে আলোচনা। এখন যা ক্রমেই আতংকে রূপ নিয়েছে।
ফলে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতেও সন্তানদের একা ছাড়ছেন না অভিভাবকরা। সময়ের অভাবে অভিভাবকরা সাথে যেতে না পারলে সন্তানকে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে না। ফলে গত এক সপ্তাহ থেকে বিদ্যালয়গুলোতে শিশু শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে গেছে।

শুধু শিশুদের জন্যই নয়; আতংক রয়েছে বড়দের জন্যও। নগরীর ২৬নং ওয়ার্ড হরিণাফুলিয়া এলাকার বাসিন্দা নয়ন হাওলাদার বলেন, একটু রাত করে বাড়িতে ফিরলেই বউয়ের ঝাঁঝালো কথা শুনতে হয়। বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত পরিবারের লোকজন থাকে দুশ্চিন্তায়। এই বুঝি তিনি (নয়ন) বিপদে পড়লো এমন আতঙ্কের কথা বলছেন স্বজনরা। ডেফুলিয়া এলাকার বাসিন্দা কোব্বাত আলী হাওলাদার জানান, তার স্ত্রী শুনেছেন ঘর থেকেও কল্লা কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের টিনের ঘর তাই নির্ঘুম রাত কাটে কোব্বাত হাওলাদারের স্ত্রীর।

নগরীর ২৭নং ওয়ার্ডের ইন্দ্রকাঠী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, এ ধরণের গুজবে অভিভাবকরা স্বভাবতই উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন। তবে গত কয়েকদিনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও অভিভাবকদের সংখ্যা বেড়েছে বলেও শিক্ষকরা উল্লেখ করেন।

সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের ধর্মাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ হানিফ হাওলাদার জানান, গুজবটি এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। সবার মধ্যেই বিরাজ করছে আতঙ্ক। এ আতঙ্ক এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।

সূত্রমতে, গত শুক্রবার রাতে নগরীর ডেফুলিয়া এলাকার নুরু খান মাথায় সাজিতে ‘বড়া’ (বড়শি ) নিয়ে মাছ ধরতে বের হন। রাত ১২টার দিকে ভাঙ্গারপুল নামক স্থান দিয়ে যাবার সময় জানালা দিয়ে এক নারী তাকে দেখে ভয়ে ‘কল্লাকাটা, কল্লাকাটা’ বলে চিৎকার শুরু করেন। এসময় চারদিক থেকে লাঠি-সোটা নিয়ে স্থানীয়রা তাকে (নুরু খান) ঘিরে ফেলে। ওই নারীর বক্তব্য ছিলো, সাজি ভর্তি ‘কল্লা’ অর্থাৎ মানুষের মাথা। অবশেষে দেখা যায় তার মাথায় বরশি আর লোকটিও স্থানীয়, দূরের কেউ নয়। ধারণা করা হচ্ছে এভাবেই ছড়াচ্ছে এই গুজব।

একাধিক অভিভাবক জানান, কোথায় নাকি ‘কল্লা’ দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই সন্তানদের সাথে স্কুলে যেতে হচ্ছে। কখনো একা পাঠালে ঘরে না ফেরা পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। তাদের দাবি বিষয়টি গুজব হলেও সরকারের উচিত ভয় কাটানোর ব্যবস্থা করা।

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। আমাদের কাছে এধরণের কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে কোনো এলাকায় সন্দেহজনক নতুন লোক দেখলে নিকটস্থ পুলিশকে জানানোর জন্যও তিনি এলাকাবাসীর প্রতি আহবান করেন।

বিষয়টি পুরোপুরি গুজব দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের ফেসবুক পেজে একাধিক স্ট্যাটাস পোষ্ট করেছেন। অপরদিকে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান এধরনের আজগুবি গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement