২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হাতে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে নতুন রাস্তার কার্পেটিং

- ছবি : নয়া দিগন্ত

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ ফুট প্রশস্তের নির্মিত রাস্তার কার্পেটিং হাত দিয়ে টেনে তুলছেন স্থানীয় জনগন। নিম্নমানের কাজ করতে গিয়ে জনতার তোপের মুখে ঠিকাদারের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জনগন।

পুনঃরায় সড়ক নির্মাণের জন্য স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহসহ সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার ভুক্তভোগী জনগন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় আগৈলঝাড়া উপজেলা সদর থেকে রাজিহার হয়ে ঘোষেরহাট পর্যন্ত বরিশাল অংশে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি কালভার্টসহ ১৮ ফুট প্রশস্তের ১২ দশমিক ৭০ কিঃ মিঃ সড়ক নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করছে বরিশালের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএম এন্টারপ্রাইজ এর সত্বাধিকারী মাহফুজ খান।

সওজ বিভাগের একই কার্যাদেশে ওই প্রতিষ্ঠান আগৈলঝাড়া উপজেলায় বিভিন্ন সড়ক উন্নয়নে আরও প্রায় ৫৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পর কাজ বাস্তবায়ন করছে।

বরিশাল এলাকার উত্তরে ২০ কিলোমিটার অংশে ১নং খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাকাই সুধীর মেম্বরের বাড়ির সামনের ব্রীজ থেকে বাকাই ফিরোজার মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে বলে জানান ওই এলাকার ১নং খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য সুধীর রঞ্জন ও ৩নং ওয়ার্ড সদস্য কাওসার আহম্মেদ মানিকসহ বিক্ষুব্ধ অর্ধশতাধিক লোকজন।

সরেজমিনে দেখা গেছে স্থানীয় লোকজন সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে নতুন পিচ রাস্তার কার্পেটিং হাত দিয়ে টেনে তুলে দেখাচ্ছেন। এলাকাবাসী অভিযোগে বলেন, ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট শামসুল হকের উপস্থিতিতে রাস্তা ঢালাই করা হয়। তাকে ভাল করে প্রাইম করে কার্পেটিং ও সিলকোড করার অনুরোধ জানালেও তা কোন কাজে আসেনি। নিম্নমানের কাজ করার এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা ঠিকাদারের লোজজনকে লাঞ্ছিত করে। আত্মগোপন করে ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট শামসুল হক। এরপরে কাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয়রা।


ভুক্তভোগী জনগন অভিযোগে আরও বলেন, ঠিকাদারের এলএ-৩৫ গ্রেডের পাথর ও সিলেট চান বালু সমপরিমান মিশ্রনে (অর্ধেক-অর্ধেক) যাকে বলে “বেস্ট ওয়ান” ম্যাকাডাম দিয়ে সড়ক নির্মাণের কথা। ম্যাকাডাম শেষে লুচ পাথরে ঢেকে সিলেট চান বালু দিয়ে কমপ্যাকশন করে প্রাইম করার কথা। প্রাইম শেষে পুনরায় সিলেট চান বালু দিয়ে ঢেকে দিয়ে তা পরিস্কার করে ৪০ মিলি মিটার কার্পেটিং শেষে ১০ মিলি মিটার সিল কোড করার কথা রয়েছে।

কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন সড়ক বিভাগের কর্মচারীদের ম্যানেজ করে তাদের উপস্থিতিতে সড়কে শুধু ৩ থেকে ৪টি লোকাল বালু দিয়ে তার উপর কিছু মরা পাথর দিয়ে ম্যাকাডামের কাজ করেছে। সেই ম্যাকাডামে পাথরের পরিবর্তে ইটের খোয়াও রয়েছে। এভাবে ম্যাকাডাম করে তার উপর লোকাল বালু দিয়ে নামকাওয়াস্তে প্রাইম করে তার উপর আবার লোকাল বালু ছিটিয়ে কমপ্যাকশন ও ভালভাবে পরিস্কার করা ছাড়াই কার্পেটিং করায় ওই ঢালাই সড়ক স্থায়ী করনের জন্য কোন কাজেই আসছে না। মাগুরা থকে ঘোষেরহাট পর্যন্ত সড়কের সব জায়গাই একই অবস্থা। সিডিউলের অর্ধেকও কার্পেটিং করা হচ্ছে না। সিলকোড করা হয়নি নির্মিত সড়কের কোথাও।

এছাড়াও সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাইড ওয়াল দিয়ে পাইলিং করার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে বাঁশ ও ড্রাম সীট দিয়ে করা হয়েছে পাইলিং এর কাজ। যা সড়ক কার্পেটিংয়ের পর পরই ধ্বসে পরেছে। স্থানীয়রা নিম্নমানের কার্পেটিং করা সড়কটি চাষ দিয়ে ভেঙ্গে পুনঃরায় সড়ক কার্পেটিং এর জন্য স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আশু দৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার মাহফুজ খান বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। লেবাররা সাইট চুক্তিতে কাজ করে। সাইট বুঝিয়ে দিয়েই তাদের দ্বায়িত্ব শেষ হয়। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানের সুনাম দুর্নাম নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নেই। তারা ভুল করলেও তিনি নিজে প্রকল্প সাইট পরিদর্শন করে কাজের মান খরাপ হলে পুনরায় প্রাইম করে নতুন করে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

প্রকল্পর কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সড়ক বিভাগের এসও মো. আবু হানিফ মিয়া জানান, কাজ নিয়ে সমস্যার কথা তিনি শুনেছেন। জুন মাসে ব্যস্ততার জন্য প্রতিদিন তিনি সাইটে যেতে পারছেন না। কাজের মান খারাপের জন্য ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট, ঠিকাদারের লোকজনকে তিনি ভর্ৎসনা করেছেন। সাইট লেবার সর্দার বাবুল কন্ট্রাকে কাজ করে। তাকে এজন্য চরম অপদস্থ করেছেন তিনি।

শিঘ্রই তিনি সাইটে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা জানান, বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। কাজের কোয়ালিটির ব্যাপারে কোন আপোষ করা হবে না। কাজ খারাপ হলে ঠিকাদারকে পুনরায় কাজ করতে হবে। সময় সুযোগ করে তিনি সাইট পরিদর্শন করবেন বলেও জানান।


আরো সংবাদ



premium cement