২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৬৫ দিনের অবরোধ

উপকূলের কয়েক লাখ জেলে পরিবারে দুঃসহ জীবন

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ইলিশের ভরা মওসুমে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের মধ্য চরম হাহাকারের সৃষ্টি হয়েছে। এই ইলিশের মৌসুমে আড়ৎদারসহ বিভিন্ন মহাজনরা ইলিশ ধরা জেলেদের টাকা দেয়ার জন্য বাড়ী বাড়ী গিয়ে ধর্ণা দিত সেই জেলেরা উল্টো তাদের কাছে ধর্ণা দিয়ে অপমানিত হতে হচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়ার ফলে অনেক জেলে চুরি, দস্যুতা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জরিয়ে পরার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ইলিশের ভরা মওসুমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়ায় উপকূলের প্রায় কয়েক লাখ জেলে পরিবার বেকার হয়ে পরবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কয়েক দফায় মানববন্ধন, মিছিল, স্মারকলিপি দিয়েও সরকারের দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় জেলেরা হতাশ হয়ে পরেছেন।

সরেজমিনে জেলে পল্লীগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিবছরের ন্যায় এবারো তারা মৌসুম শুরুর আগ থেকেই জাল-ট্রলার মেরামত করে সাগরে যাবার অপেক্ষায়। এজন্য মহাজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আগাম দাদনসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণগ্রহণ করেছেন।

কিন্ত হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় জেলেরা হতভম্ব। ট্রলার মালিক ও মাঝি কালাম খা বলেন, চড়াসুদে টাকা এনে জাল, ট্রলাররসহ মাঝি মাল্লা রেখেছি এখন যদি সাগরে যেতে না পারি তা হলে আত্নহত্যা করব বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। এ ছাড়া অনেকে জেলে চড়াও সুদে টাকা এনে সাগরে যেতে না পেরে এখন দেনায় হাবু-ডুবু খাচ্ছে। জেলে পল্লীগুলোর পরিবারে নেমে এসছে হতাশা।

উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটার জেলে আব্দুর রহিম, মনির, বেলাল, আবুল কালাম, হানিফাসহ প্রায় শতাধিক জেলে জানান, এ উপকূলের মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস সাগরে ইলিশ শিকার। ইলিশ মৌসুমে আমাদের বাড়ীতে বাড়ীতে আড়ৎদারসহ মহাজনেরা আসত টাকা দেয়ার জন্য এখন আমরা তাদের বাড়ীতে টাকা চাইতে গেলে বের করে দেয়।

তারা জানান, রমজান মাস চলছে, সামনে ঈদ, আয়ের একমাত্র পথ যদি বন্ধ থাকে কীভাবে পরিবার-পরিজনের মুখে ঈদের হাসি ফোটাব? আমাদের একমাত্র আয়ের পথ বন্ধে করে দিলে সরকার কেন আমাদের অন্য পথ বের করে দেন না। জেলেরা অন্য কাজে গেলে তাদের কোন কাজে নেন না বলেও জানান তারা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ও কঠিন আবরণযুক্ত জলজ প্রাণী বসবাসের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং মাছের মজুদ সংরক্ষণ সুষ্ঠু ও সহনশীল আহরণ নিশ্চিত করার স্বার্থে ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার গত ১০ মে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য-২ (আইন) অধিশাখা মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

বাংলাদেশ ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ফাইশ্যা, টেংরা, তপসি, পোমাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা রক্ষার জন্য ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ঐ পোনা গুলি ফিশিং ট্রলিং জাহাজের আধা ইঞ্চি ফাঁশের জাল দিয়ে পোনাগুলো ধ্বংস করে দেয়। ইলিশ ধরার জেলেরা চার ইঞ্চি ফাঁসের জাল ব্যবহার করে যা দিয়ে শুধু বড় ইলিশ ধরা হয়। বঙ্গোপসাগরে নিষেধাজ্ঞা দিতে হলে প্রতিবেশী দেশের সাথে একই সময়ে দিতে হবে তা না হলে আমাদের ইলিশ তারা ধরে নিয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement