১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্ত্রীর পরকীয়ায় খুন হন দলিল লেখক রিয়াজ

স্ত্রীর পরকীয়ার খুন হন দলিল লেখক রিয়াজ - সংগৃহীত

স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে খুন হয়েছেন বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর এলাকার বাসিন্দা ও দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজ (৪০)। সম্পত্তির লোভ ও সার্বিকভাবে সুখে থাকার আশায় স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজার পরিকল্পনায় স্বামী রিয়াজকে গলাকেটে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করে রোববার দুপুরে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা (৩০)।

রোববার দুপুরে মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রুনা লায়লা, সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার মোঃ রাসেল, কোতয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম পিপিএম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বশির আহমেদ।

উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতে রিয়াজের স্ত্রী লিজা ছাড়া আরও দুইজন জড়িত ছিলেন। তাদের একজনের নাম মাসুম ও অন্যজন হালিম। মাসুম নিহত রেজাউল করিমের সহকারী ও লিজার পরকীয়া প্রেমিক।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে লিজা ও নিহতের ভাইকে পুলিশ আটক করে। পরে লিজার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহতের ভাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত মাসুমসহ বাকি দুইজনকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে।

ঘটনার বিবরণে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, চার বছর আগে বন্দর থানাধীন চরকাউয়া এলাকার দেলোয়ার খানের কন্যা আমিনা আক্তার লিজার সাথে চরমোনাই ইউনিয়নের রাজধর গ্রামের ছাত্তার হাওলাদারের পুত্র দলিল লেখক রেজাউল করিমের বিয়ে হয়। এর আগে লিজার দুইবার ও নিহত রিয়াজের একবার বিয়ে হয়েছিলো। আগের বিয়ে বিচ্ছেদের পর তারা নতুন সম্পর্কে জড়ান।

লিজার পূর্বের স্বামী ছিলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধ। তার কাছ থেকে জমি ও বাড়ি কৌশলে লিখে নিয়ে বৃদ্ধকে তালাক দেন আমিনা আক্তার লিজা। আর রেজাউল করিম আগের স্ত্রীর সাথে ১০ বছর সংসার করার পর তাকে তালাক দেন।

নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেফতারকৃত লিজার বরাত দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, যেহেতু রেজাউলের আগের সংসারে কোনো সন্তান হয়নি এবং লিজারও কোনো সন্তান নেই। এনিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিলো। এছাড়া পলাশপুরের ১৬ দশমিক ৫০ শতক জমি লিজা তার নামে লিখে দিতে বললেও তাতে রাজি ছিলেন না স্বামী রেজাউল।

এরইমধ্যে রিয়াজের সহকারী মাসুমের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পরেন লিজা। মাসুম তাকে আশ্বস্ত করেন তিনি রেজাউলের চেয়েও লিজাকে বেশি সুখে রাখবেন। এসব চিন্তা করে লিজা তার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে মতে লিজা মাসুমের সাহায্যে দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রেজাউলকে খাইয়ে অচেতন করে রাখেন। ঘটনার দিন রাতে আগে থেকেই ঘরের ভেতরের মাচায় পরকীয়া প্রেমিক ও তার সহযোগীকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে লিজা।

পরে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে তিনজনে মিলে ধারালো ক্ষুর ও দা দিয়ে কুপিয়ে রেজাউলকে হত্যা করে। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে হত্যাকারীরা খাটের নিচে সিঁদ কেটে রাখে। পরে মাসুম ও তার সহযোগী পালিয়ে গেলে লিজা পোশাক পাল্টে ঘরের বাইরে এসে ডাকচিৎকার করতে থাকেন।

তিনি জানান, এর ধারাবাহিকতায় ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে কাটা সিঁধ থেকে পুলিশের সন্দেহ হয়, কারণ তা দিয়ে কেউ প্রবেশ করার কোনো আলামত ছিল না। আর ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর বিষয়টিও সামনে আসলে রিয়াজ আর তার স্ত্রী ছাড়া ওই ঘরে কেউ না থাকায় লিজাকে আটক করা হয়। লিজাকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের মধ্যদিয়ে ঘটনার মূল রহস্য খুব অল্প সময়ে উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। লিজাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও হত্যার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement