২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অচল ববিতে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অর্থায়নে দিনভর বাংলা বর্ষবরণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
অচল ববিতে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অর্থায়নে দিনভর বাংলা বর্ষবরণ - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উদযাপন করেনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রশাসন। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি। জানা গেছে, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কোনো নোটিশ পর্যন্ত প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে প্রশাসনের উদাসীনতার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব উদ্যোগে দিনভর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উদযাপন করছে।

শিক্ষার্থীরা নিজ অর্থায়নে মঙ্গল শোভাযাত্রা, হাড়ি ভাঙ্গা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হক বাবার মাথা ফাঁটানো (ঢিল ছুরে হাড়ি ভাঙ্গা), রম্য বিতর্ক এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা আয়োজনের মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ (বাংলা নববর্ষ) উদযাপন করছে।

রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে তারা। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তমঞ্চ ঘুরে আবার প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় এসে শেষ হয়। এসময় তাদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও বাঙালি সংস্কৃতির নানা অনুসঙ্গ ছিল। প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আঁকা হয়েছে হরেক রঙের আলপনা।

এদিকে পহেলা বৈশাখ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন কর্মে ক্ষুদ্ধ, হতবাক শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছে, পহেলা বৈশাখের মতো জাতীয় একটি উৎসবের দিনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন নির্বিকারিত্ব তাদের দেওলিয়াত্বেরই বহিঃপ্রকাশ। এতে তারা ক্ষুদ্ধ, মর্মাহত।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পহেলা বৈশাখ উদযাপন না করলেও আমরা (সাধারণ শিক্ষার্থীরা) নিজ অর্থায়নে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করছি। মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেছি, যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অমঙ্গল দূর হয়ে যায়। তাছাড়া সারা দিনই আমাদের বিভিন্ন আয়োজন রয়েছে।

শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম জানান, ক্যাম্পাসে থাকা সব শিক্ষার্থীদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে দু’দিন আগেই আমরা বৈশাখ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেই। তাই ভিসির পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলন দু’দিন স্থগিত রাখা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ১০টায় অমঙ্গল দূর করতে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। যা একাডেমিক ভবনের সামনে থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে এসে শেষ হয়।

এরপর সকাল ১১টায় মুড়ি-মুড়কি, বাতাসার আপ্যায়নের সাথে সাথে নেচে-গেয়ে বৈশাখ উদযাপন করেন। দুপুর ১২টায় যেমন খুশি তেমন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও দুপুর ১টায় হাড়িভাঙা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় উন্মুক্ত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আন্দোলন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এসএম ইমামুল হক শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়। এর প্রতিবাদে জোরদার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।

২৬ মার্চ থেকে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, ডিসি অফিস ঘেরাও, বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ, নিজেদের শরীরের রক্ত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে লিখে ভিসির পদত্যাগ দাবি, ভিসির কুশপুতুল দাহ ও মশালমিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। ১৫ এপ্রিল সোমবার থেকে নতুন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পুনরায় আন্দোলন শুরু হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গগত, টানা ২০ দিন ধরে ভিসি প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হকের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কার্যত অচল রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে খোলা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে গত ১০ এপ্রিল ১৫ দিনের ছুটি জন্য আবেদন করেন ভিসি। শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগ বা পূর্ণকালীন ছুটি চেয়ে আন্দোলনে অনড় রয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement