২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত - ছবি : নয়া দিগন্ত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেয়ার পরও লিখিত প্রতিশ্রুতি না পাওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার সকাল ১০টায় ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে প্রধান ফটক আটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম বলেন, ভিসির পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। কারণ মৌখিক আশ্বাসে আস্থার বিষয়টি আগেই হারিয়ে ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।তিনি বলেন, ১২ দিন ধরে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেই এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এদিকে শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত লিখিত এক নোটিশে রোববার থেকে ক্লাস ও পরীক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেয়া হয়।

ঘোষণা অনুযায়ী সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা একাডেমিক ভবনের সামনে এসে অবস্থান নিলেও প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। পাশাপাশি সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল তাদের কার্যক্রম শুরু করলেও বাসগুলোতে আশানুরূপ শিক্ষার্থীর দেখা মেলেনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান হেনা রানী বিশ্বাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চালুর ঘোষণা অনুযায়ী সকালেই শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসেছেন। ক্লাসও শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ভেতরে যেতে পারিনি।

তিনি বলেন, তাদের বোঝানো হয়েছে। কিন্তু লিখিত না পেয়ে আমাদের ভেতরে যেতে দেবে না শিক্ষার্থীরা। তারা কথাও শুনছে না, আমাদেরও কিছু করার নেই। আমরা শিক্ষক, আমাদেরও নীতি-নৈতিকতা রয়েছে।
‘এভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তেমনি আমরাও আমাদের কাজগুলো করতে পারছি না। এমনকি ব্যক্তিগত কাজও করতে পারছি না।'

তবে ১৩ দিন ধরে চলা আন্দোলনের কারণে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় যে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হাসিনুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের বিভিন্ন গেটের তালায় একধরনের গাম দিয়ে দিয়েছে। তাই তা খোলা যাচ্ছে না। পাশাপাশি তারা গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে রেখেছে। তাই সিদ্ধান্ত থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

ভিসির ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার ক্ষমতার বাইরে। এ ব্যাপারে শনিবারের মিটিংয়ে যে আলোচনা হয়েছে, সে হিসেবে মন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বরিশালের সুশীল সমাজের যারা ছিলেন তারাই ব্যাপারটি দেখবেন।

এদিকে শনিবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের রুদ্ধদার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ভিসি প্রফেসর ড. ইমামুল হককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হবে। ভিসি পদত্যাগের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সহমত পোষণ করে জানানো হয় ড. ইমামুল হক যাতে আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে না আসতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হবে। এরজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছেও সুপারিশ করা হবে। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপি শিক্ষার্থীদের এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাশাপাশি বৈঠকে শিক্ষার্থীদের ২২ দফা দাবি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ছুটির ব্যাপারে আমি অফিসিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। কোনো চিঠি পেলে তারপর সিদ্ধান্ত নেব ছুটিতে যাব কিনা।

এদিকে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত বৈঠকের সিদ্ধান্তের সাথে সহমত পোষন করলেও পরে সন্ধ্যা ৬টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা ২৬ জনের প্রতিনিধি দল বৈঠকে উপস্থিত হই। তবে তারা ছুটি বা পদত্যাগ করার যে বিষয়টি বলেছেন সেটা আমরা লিখিতভাবে চাই। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যদি পদত্যাগ বা ছুটিতে যান তাহলে সেটা লিখিতভাবে দেয়া না পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ হানিফ, বিএমপি কমিশনার মোশারফ হোসেন, বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস, জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের না জানানোর কারণে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেন ভিসি। ফলে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। তবে শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ না করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement