১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উজিরপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় ৪ সহোদরসহ আহত ১০

হামলায় আহত ৪ সহোদর - নয়া দিগন্ত

বরিশালের উজিরপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে শালিস বৈঠকে হামলা চালিয়ে ৪ সহোদরকে পিটিয়ে আহত করেছে প্রতিপক্ষ। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে আহত চার সহোদরকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিপক্ষের হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে উভয়পক্ষের সংঘর্ষে শালিসকারীসহ দু’পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন।

গত শনিবার বিকেলে উপজেলার শোলক ইউনিয়নের আটক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ পরস্পরকে দায়ী করে উজিরপুর মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছে।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শোলক ইউনিয়নের আটক গ্রামের একই বাড়ির মন্টু হাওলাদার গং ও মহিলা লীগ নেত্রী লাকী ভূইয়া গংদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এ ঘটনার নিষ্পত্তির জন্য শনিবার বিকেল ৫টার দিকে ওই এলাকায় এসডিএফের একটি গ্রাম সমিতির মধ্যে বিচার শালিসে বসে দুই পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজনসহ স্থানীয় লোকজন।

এ সময় শালিসে উপস্থিত ছিলেন শোলক ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহজাহান হাওলাদার, আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জেল কাজী, মিজান তালুকদার, শহিদুল তালুকদার, সেকেন্দার তালুকদার, মাসুম হাওলাদারসহ স্থানীয় আরো অনেকে। শালিস চলা অবস্থায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মহিলা লীগ নেত্রী লাকী ভূইয়ার ছেলে আশিক ভূইয়া ২০/৩০ জনের একদল ভাড়াটিয়া স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রতিপক্ষ মন্টু গংদের ওপর অতর্কিত হামলা করে।

হামলায় এ সময় গুরুতর আহত হন মন্টু হাওলাদার (৪৫) ও তার সহোদর মিন্টু হাওলাদার (৩৮), সাহেদুল হাওলাদার (৩০), হাফিজুল হাওলাদার (২৮)। তারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এসময় সংঘর্ষে লাকী ভূইয়ার পক্ষেরও চারজন আহত হন। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া শালিসকারীসহ আরো দুইজন আহত হন। তাদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

আহত মন্টুর সহোদর শহিদুল অভিযোগ করেন, তাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে মন্টু একাই গ্রামের বাড়িতে থাকেন এবং অন্য সবাই ঢাকায় চাকরি করেন। মৃত বাবার নামে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করতে বৃহস্পতিবার তারা সবাই গ্রামের বাড়িতে এসেছেন।

তিনি আরো বলেন, তাদের ও একই বাড়ির লাকী ভূইয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো। সেই বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্যই উভয়পক্ষের সম্মতিতে শনিবার বিকেলে ওই শালিস বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু শালিসের মধ্যে বিচারকগন প্রতিপক্ষের কথা শুনে তাদের পক্ষের কথা শোনার সময় পূর্ব পরিকল্পিভাবে প্রতিপক্ষ লাকী ভূইয়ার ছেলে আশিক একদল ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে শালিস বৈঠকে হামলা চালিয়ে তার চার সহোদরসহ শালিসে উপস্থিত কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে।

এ ঘটনায় আহত মন্টুর স্ত্রী পারভীন বেগম বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ লাকী ভূইয়াসহ ১১জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাসহ মোট ৩৩ জনকে আসামী করে উজিরপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এদিকে শালিস বৈঠকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন শোলক ইউনিয়ন মহিলা লীগের সভাপতি লাকী ভূইয়া। হামলার জন্য প্রতিপক্ষকে দায়ী করে তিনি বলেন, প্রতিপক্ষরা আমাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ ব্যাপারে ওই শালিসের বিচারক শোলক ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহজাহান হাওলাদার, আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জেল কাজী, মিজান তালুকদার, শহিদুল তালুকদার, সেকেন্দার তালুকদারসহ অন্যরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, শালিস বিচার চলাকালীন অবস্থায় হঠাৎ করে কিছু বহিরাগত লোকজন হামলা চালায়। এতে শালিসে উপস্থিত উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১০জন আহত হয়েছেন। তবে হামলায় মন্টু গংদের পক্ষের লোকজন গুরুতর আহত হয়েছে।

তারা আরো জানান, বহিরাগত ওই সকল লোকজনকে লাকী ভূইয়ার ছেলে আশিক তার বন্ধু বাটাজোর এলাকার আফ্রিদির মাধ্যমে এনেছিল।

এ ব্যাপারে উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পাল বলেন, খবর পাওয়ার পরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরস্পরকে দায়ী করে উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement