২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রুস্তুম আলী ফরাজীকে প্রার্থী হিসেবে চায় না মঠবাড়িয়ার তৃণমূল আ’লীগ

ডা: রুস্তুম আলী ফরাজী -

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-৩ আসনে মহাজোট থেকে মনোনীত প্রার্থী ডা: রুস্তুম আলী ফরাজীকে মানতে নারাজ মঠবাড়িয়ার তৃণমূলের আওয়ামী লীগ। তাদের দাবি প্রার্থী দিতে হবে আওয়ামী লীগ থেকে। আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তাদের বক্তব্য রুস্তুম আলী ফরাজী তার লোকজন দিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন।

মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ উদ্দিন পলাশ বলেন, ২০০১-এর নির্বাচনে ডা: রস্তুম আলী ফরাজী বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মামলা হামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন। তিনি দলীয় কর্মী দিয়ে তিন মুক্তিযোদ্ধাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করিয়েছেন। আবার ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে। তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছেন। এলাকার উন্নয়ন দৃশ্যমান দেখাতে পারেননি। একারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে।

ডা: রস্তুম আলী ফরাজীকে মহাজোটের প্রার্থী দেয়া হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানবেন না বলে জানান জাহিদ উদ্দিন পলাশ।

দলে কোন্দল আছে এ বিষয়টি স্বীকার করে জাহিদ উদ্দিন পলাশ বলেন, নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে কোনো কোন্দল থাকবে না। নৌকা প্রতীক যাকে দেয়া হবে আমরা তার পক্ষে কাজ করবো।

ডা: রুস্তুম আলী ফরাজী যদি নৌকা প্রতীক নিয়ে আসেন তাহলে কি করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফরাজীর নৌকা প্রতীক নিয়ে আসার কোনো সুযোগ নাই। কারণ তিনি এখন জাতীয় পার্টি করেন।

মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের (তৎকালীন থানা ছাত্রলীগ সাল ১৯৬৫) প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শরণখোলা থানার কমান্ডিং অফিসার মজিবুল হক খান মজনু বলেন, ডা: রস্তুম আলী ফরাজী মঠবাড়িয়ার তিন বারের সংসদ সদস্য। এ সময়ে তার মুখ থেকে জয়বাংলা শ্লোগান শোনা যায় নাই।

মজিবুল হক খান মজনুর ভাষ্য, ২০১৪ সালের নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ নৌকাকে হারিয়ে ফরাজীকে বিজয়ী করেছে। তিনি বলেন, জয়বাংলা বলবে না এমন প্রার্থী দেয়া হলে আমরা তাকে মেনে নেব, এটা হতে পারে না।

মঠবাড়িয়ার শাপলেজা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও শাপলেজা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: মিরাজ মিয়া বলেন, রুস্তুম আলী ফরাজী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৫শ’ নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছেন তার অনুগতদের দিয়ে। এরপর তিনি বলেন, শুধু শাপলেজা ইউনিয়ন যুবলীগ-ছাত্রলীগের নামে ১১টি মামলা দেয়া হয়েছে, যা আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে।

মিরাজ মিয়া বলেন, যাদের নামে রুস্তুম আলী ফরাজী মামলা দিয়েছেন তারা কি তার পক্ষে কাজ করবে? রস্তুম আলী ফরাজী প্রকাশ্য সভায় ছাত্রলীগ-যুবলীগকে চোর-ডাকাত বলেছেন, অভিযোগ করেন তিনি।

মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আরিফ-উল-হক জানান, রুস্তুম আলী ফরাজী গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাংশের উপর ভর করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর তিনি সবচেয়ে বেশি জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর। বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে আমাদের যে দলীয় সদস্য ছিল তা তিনি সব বাদ দিয়েছেন এবং বিভিন্ন হয়রানীমূলক মামলা দিয়েছেন। আমরা চাই এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেয়া হোক।

আরিফ-উল-হক আরো বলেন, ফরাজী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে দুদকেও মামলা দিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, কি করে সেই নেতাকর্মীরা তার পক্ষে থাকবেন?

ডা: রুস্তুম আলী ফরাজী গেল বছরের শেষের দিকে ঢাকায় এরশাদের উপস্থিতিতে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এরপর এরশাদ ফেব্রুয়ারিতে মঠবাড়িয়ায় এক জনসভায় রুস্তুম আলী ফরাজীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি।

আলাপকালে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ডা: রুস্তুম আলী ফরাজী বলেন, মঠবাড়িয়ার বিশাল জনগোষ্ঠী আমার শক্তি তারা আমর পক্ষে ছিলেন, এবারো থাকবেন। গুটিকয়েক লোক বিরোধী অবস্থানে আছে। আর এটা থাকাই স্বাভাবিক। আমি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করি না। এ কারণে মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে। কাউকে আমি হয়রানী করেছি একথা ঠিক না।

পিরোজপুরের সবচেয়ে বড় উপজেলা মঠবাড়িয়া। একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। যেটির সংসদীয় আসন হল পিরোজপুর-৩। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫শ’ ৮৬ জন।


আরো সংবাদ



premium cement