২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সিডরের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে যাওয়া সেই ডলি এখন ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী

সিডরের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে যাওয়া সেই ডলি এখন ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী - নয়া দিগন্ত।

ঘূর্ণিঝড় সিডরের সাথে আট ঘন্টা যুদ্ধ করে বেঁচে যাওয়া এক মাস এগার দিন বয়সী ডলি এখন কবিরাজপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী। লেখাপড়া অদম্য বাসনা থাকলেও পারিবারিক দারিদ্রতাই প্রধান অন্তরায়। সেই ভয়াবহ দিনের স্মৃতি তার কাছে নতুন গল্প। পরিবারের ১১ জনকে হারিয়ে মূহ্যমান খলিল। স্বজনহারা বেদনা নিয়ে খলিল আজও কাঁদছে। বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে সিডরের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে যাওয়া এক মাস এগার দিনের কন্যা ডলিকে নিয়ে।

সেই ভয়াবহ রাতের অজানা কথা বলে কাঁদলেন পরিবারের ১১ সদস্যকে হারিয়ে বেঁচে যাওয়া খলিল ও তার মেয়ে ডলি। ঘূর্ণিঝড় সিডরের সতর্কবানী সংঙ্কেত উপেক্ষা করে আশার চরে বসবাস করেছিল প্রায় ১০ হাজার জেলে পরিবার। ১৮ সদস্যের পরিবারের মধ্যে খলিল হাওলাদার একজন। তাদের প্রধান কাজ সাগরে মাছ ধরা। রাত নয়টার দিকে সিডর উপকুলে আঘাত হানে। এ আঘাতের দৃশ্য দেখার জন্য বড় ভাই জলিল ও ভগ্নিপতি সোহরাফ বাড়ির বাইরে বের হয়। এরমধ্যে বাতাসের গতি বৃদ্ধি পেয়ে সাগরের ঢেউ কিনারে আঘাত হানে। ঢেউয়ের আঘাতে বাসা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ওই সময় বাড়িতে থাকা সবাই বিছিন্ন হয়ে পড়ে। এসময় খলিল তার বাবা খালেক হাওলাদার, মা নুরজাহান বেগম, স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও এক মাস এগার দিনের কন্যা ডলিকে আকড়ে ধরে। ঢেউয়ের তোরে প্রথমে বাবা খালেক হাওলাদার পরে মা নুরজাহান বেগম তার হাত থেকে ছুটে যায়। স্ত্রী আনোয়ারা ও শিশু কন্যা ডলিকে নিয়ে খলিল একটি রশি ধরে কতক্ষণ অবস্থান করে। কিছুক্ষণ পরে স্ত্রী আনোয়ারা বেগম স্বামী খলিলকে ডেকে বলে তোমার কন্যাকে তুমি নেও আমি আর পারছি না। এই বলে কন্যাকে স্বামীর হাতে তুলে দিয়ে স্ত্রী আনোয়ারা ছুটে যায়। একা খলিল শিশু কন্যা ডলিকে নিয়ে সাগরে ভাসতে থাকে। কখনো শিশু কন্যাকে দু’হাতে উপরে তুলে রাখে, আবার কখনো মুখ দিয়ে শিশু কন্যার সোয়েটার কামড়ে ধরে রাখে। তিনবার মৃতভেবে শিশু কন্যাকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে আবার বেঁচে রয়েছে ভেবে আগলে ধরে। এভাবে আট ঘন্টা সাগরে ভাসতে থাকে শিশু কন্যা ডলিকে নিয়ে বাবা খলিল। সকাল সাড়ে চারটার দিকে একটি গাছের সাথে খলিল ও শিশু কন্যা ডলি আটকা পড়ে। ওই সময় স্থানীয় মানুষ খলিল ও কন্যা ডলিকে উদ্ধার করে বাড়ীতে নিয়ে আসে।

সিডরে ওই পরিবারের বাবা খালেক হাওলাদার, মা নুরজাহান বেগম, স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, বোন রেহেনা বেগম, ভাইয়ের ছেলে সোহাগ, ভাগ্নি সারমিন, খুকুমনি, সীমা, শিউলি, ভাইয়ের মেয়ে দুলিয়া ও বোনের নাতি সোনামনি এ ১১ জন মারা যায়। ১০ জনের লাশ পেলেও স্ত্রী আনোয়ারার লাশ এখনো পায়নি। পরিবারের ১১ জনকে হারানোর দূঃসহ বেদনা নিয়ে খলিল তার শিশু কন্যা ডলিকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে। সিডরের পরে বাবা খালেক হাওলদারের রেখে যাওয়া ৩০ শতাংশ জমি বিক্রি করে খলিল কোন মতে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে।

খলিল হাওলাদার সিডরে আট ঘন্টা যুদ্ধ করে একমাস এগার দিনের শিশু কন্যা ডলিকে নিয়ে বেঁচে যাওয়ার ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, আমার পরিবারের ১১ জন লোক সিডরে নিহত হয়েছে। ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে দাফনের জন্য টাকা বরাদ্দ থাকলেও আমার কপালে জুটেনি। সিডরে সবকিছু হারিয়েছি আর সিডরের পরে বাবার রেখে যাওয়া ৩০ শতাংশ জমি হারিয়েছি। ওই সময় থেকেই সাগরে মাছ ধরা বন্ধ করে দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। স্বপ্ন দেখছি শিশু কন্যা ডলিকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করে বেঁচে থাকার কিন্তু অভাবেব সংসার কতটুকু পারি জানিনা।


আরো সংবাদ



premium cement