১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মামলার ভয় দেখিয়ে এএসআইয়ের চাঁদাবাজি

মামলার ভয় দেখিয়ে এএসআইয়ের চাঁদাবাজি - প্রতীকি ছবি

বরিশালের উজিরপুর মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মোঃ বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে চার যুবকের নিকট থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার দুপুরে এ ঘটনায় হয়রানির শিকার উপজেলার উত্তর সাতলা গ্রামের তরিকুল ইসলাম বালী (২৮) নামে এক যুবক বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম এর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছন।

অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় উত্তর সাতলা গ্রামের মনির হাওলাদারের নির্মাণধীন ভবনে তাস খেলার অভিযোগে একসাথে স্থানীয় চার যুবককে আটক করে এএসআই বেল্লাল। আটককৃতরা হলেন নির্মাণধীন ওই ভবনের মালিক উত্তর সাতলা গ্রামের লাল মিয়া হাওলাদারের পুত্র মনির হাওলাদার, একই গ্রামের সেকেন্দার বালীর পুত্র তরিকুল ইসলাম, আক্কাচ শেখের পুত্র হোসাইন শেখ ও ইদ্রিস শেখের পুত্র সাফায়েত শেখ।

পরে তাদের সবাইকে নির্মাণধীন ওই ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন এএসআই বেল্লাল। এরপর তাদেরকে ইয়াবা দিয়ে মাদক মামলায় জড়ানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়।
একপর্যায়ে এএসআই বেল্লালের কাছে ওই ভবনের মালিক মনির হাওলাদার দশ হাজার, তরিকুল এক হাজারসহ চারজনে মোট সাড়ে ১৪ হাজার টাকা দেয় এবং পরবর্তীতে আরও ২০ হাজার টাকা দেয়ার শর্তে তাদের মুক্তি দেয়া হয়।

পাশাপাশি টাকা নেয়ার ঘটনা প্রকাশ করলে তাদেরকে অস্ত্র ও মাদক মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয়ার হুমকি দেন এএসআই বেল্লাল।

হয়রানির শিকার তরিকুল বালী জানান, আমরা চারজন কেবল সময় কাটানোর জন্য তাস (টুয়েন্টি নাইন) খেলছিলাম অথচ মিথ্যা অপরাধে মামলার ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে আমাদের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এএসআই বেল্লাল।

তরিকুল বালী আরও বলেন, জোরপূর্বক অর্থ আদায়ের বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাকে ও মনির হাওলাদারকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছে এএসআই বেল্লালের কথিত সোর্স স্থানীয় জসিম বালী।

তরিকুল আরও জানান, মোটা অঙ্কের টাকা উৎকোচ দিয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশের হাত থেকে রেহাই পেলেও ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় এএসআই বেল্লালের অব্যাহত হুমকিতে তিনি গত চার দিন ধরে ঘর থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না।

অভিযুক্ত এএসআই বেল্লালের হয়রানির শিকার উত্তর সাতলা এলাকার আরেক যুবক রুবেল বালী (৩০)। সে একই এলাকার কবির বালীর পুত্র।

রুবেল অভিযোগ করেন, গত ১৬ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সাতলা বাজারে যাওয়ার পথে এএসআই বেল্লাল তার দেহ তল্লাশির নামে পকেটে গাঁজা ঢুকিয়ে দেয়। পরে তার নিকট থেকে ছয় হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের এলাকাবাসী পুলিশের এএসআই বেল্লালের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

এছাড়াও থানার এএসআই বেল্লাল এলাকার সাধারণ মানুষকে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে হয়রানি করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকা না দিলে সাধারণ মানুষকে মাদকদ্রব্য দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়।

তাস খেলার অপরাধে তরিকুলসহ চারজনকে আটকের কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত এএসআই বেল্লাল জানান, ওদেরকে স্থানীয় ব্যক্তিদের অনুরোধে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে জোরপূর্বক অর্থ আদায়ের অভিযোগটি সঠিক নয়।

এ ব্যাপারে জানতে উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পালের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উজিরপুরে ফের ডাকাতি, এবার বৃদ্ধাকে কুপিয়ে জখম

এদিকে বরিশালের উজিরপুরে ডাকাতদের হামলায় কুলসুমি বেগম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধা গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শুক্রবার রাতে উপজেলার আটিপাড়া গ্রামের (সেনেরবাড়ি) নির্মাণ শ্রমিক রাজুর বাসায় এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির পরপরই খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

নির্মাণ শ্রমিক রাজু জানান, স্ত্রীকে নিয়ে তিনি শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়ায় শুক্রবার রাতে বাসায় তার মা কুলসুমি বেগম একাই ছিলেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে ৪-৫ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে তার মা কুলসুমি বেগমকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্নালংকার লুট করে। ডাকাতি শেষে পালিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার দিলে ডাকাতরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মা’কে কুপিয়ে জখম করে।

পরে স্থানীয়রা তার মা’কে উদ্ধার করে উজিরপুর হাসপাতালে নিয়ে আসলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

রাজু আরও জানান, ডাকাতদের হামলায় তার মায়ের একটি চোখ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এ বিষয়ে জানতে উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উজিরপুরে জেলা প্রশাসকের সাথে মতবিনিময় সভা

এদিকে বরিশাল জেলায় নবযোগদানকৃত জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান উজিরপুর উপজেলার সকল শ্রেণী পেশার মানুষের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন। রোববার বিকেলে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগন এই মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহন করেন।

 উজিরপুরে মতবিনিময় সভায় বরিশালের নতুন জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান

 

এ সময় উজিরপুর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা আক্তারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নবাগত জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল, পৌর মেয়র মোঃ গিয়াস উদ্দিন বেপারী, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এস এম জামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন তালুকদার, গুঠিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ডা. দেলোয়ার হোসেন, উজিরপুর থানার ওসি শিশির কুমার পাল প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement