২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা

ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা - ফাইল ছবি

অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বরিশালের উজিরপুর পৌরসভাসহ উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ডাকাত আতঙ্কে গত দুই সপ্তাহ ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। লাঠি, রামদা, বল্লম, টর্চলাইট নিয়ে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে পাহারা দেয়া হচ্ছে। রাত নয়টা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত চলছে এই পাহারা।

জানা যায়, উজিরপুর পৌরসভার সিকদারপাড়া, দক্ষিন শিকারপুর, কালিরবাজার ও উপজেলার শিকারপুর, ওটরা, শোলক ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের চিত্র এখন এমনই। এসব এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, অস্ত্রধারী ডাকাতরা রাতে হামলা চালিয়ে টাকা ও স্বর্নালংকার লুট করে নেয়ার ঘটনা এখন খুব সাধারণ চিত্রে পরিণত হয়েছে। মাঝে মধ্যে নারী ও শিশুদের ওপর পাশবিক নির্যাতনের চেষ্টাও চালায় ডাকাতরা। আর তাই ভয় ও আতঙ্কে প্রায় সময়ই পাঁচ-ছয় বাড়ির লোকজন একই ঘরে রাত কাটান।

শুক্রবার রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর নগরীর ৬ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কে ৩০ জন গ্রামবাসী তিনটি দলে ভাগ হয়ে পাহারা দিচ্ছেন।

তাদের মধ্য থেকে কলেজছাত্র রাহাত জানায়, আমি গত দুই রাত ধরে পাহারা দিচ্ছি। উপজেলার বিভিন্নস্থানে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনার পরই পুলিশ আমাদের গ্রামে পাহারা চালু করেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে লাঠি, বাঁশি ও টর্চলাইট নিয়ে ভোর চারটা পর্যন্ত পালা করে এ পাহারা চলে। পুলিশও এতে সহযোগিতা করছে।

জনপ্রতিনিধি ও শিকারপুর, উজিরপুরের স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক মাস ধরে পৌর শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে ডাকাতির ঘটনায় জনমনে এক ধরনের অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সর্বশেষ গত ১৬ অক্টোবর রাতে উজিরপুর থানা সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন ফকিরের বাড়িতে ডাকাতরা আক্রমণ করে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৬ লক্ষ টাকা ও ২৫ ভরি স্বর্নালংকার লুট করে নেয়।

এর আগে গত ৩ অক্টোবর রাতে একই কায়দায় উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বাদল হাওলাদারের মুন্ডপাশা গ্রামের বাসায় ও শিকারপুর গ্রামের বাদশা হাওলাদারের বাসায় হানা দিয়ে নগদ টাকা ও স্বর্নালংকার লুটে নেয় ডাকাতরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্থানীয় মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করলেও কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।

আর এ সকল ডাকাতির ঘটনা ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নীরব ভূমিকার অভিযোগ ছিলো উজিরপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

এরপর থেকেই ডাকাত আতঙ্কে এলাকার মানুষ প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত ঘরবাড়ি পাহারা দিচ্ছে।
সম্প্রতি পৌরসভার প্রায় সবগুলো ওয়ার্ডে মাইকিং করে ডাকাতদের মোকাবিলায় সতর্ক থাকার জন্য এলাকাবাসীকে আহ্বান করেছে উজিরপুর থানা পুলিশ। ফলে পৌর নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শুরু হয় নৈশকালীন পাহারা।

উপজেলার শিকারপুর ও ওটরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব এলাকায় সর্বত্রই বিরাজ করছে ডাকাতের আতঙ্ক।

ওটরা ইউনিয়নের মশাং গ্রামের কলেজ ছাত্র মিরাজ আহম্মেদ জানান, গ্রামের মানুষ চোর-ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। প্রতি রাতেই গ্রামের কোনো না কোনো ঘরে চুরি-ডাকাতি হচ্ছে। আর এতে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাই রাত জেগে তরুণেরা পাহারা দিচ্ছে।

মিরাজ আরও জানায়, এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবীরাই এ সকল চুরি-ডাকাতির সাথে জড়িত রয়েছে।
তবে এ সকল ব্যাপারে উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পাল বলেন, এরই মধ্যে এসব এলাকায় কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রম বাড়িয়ে চুরি-ডাকাতি রোধে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সামনেই জাতীয় নির্বাচন তাই সকল প্রকার বিচ্ছিন্ন ঘটনা এড়াতে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতেও কাজ চলছে।

উজিরপুরে জেল হত্যা দিবসে স্মরণসভা

এদিকে ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে বরিশালের উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় উপজেলা ডাকবাংলো মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম জামাল হোসেনের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস।

বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল, পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিন বেপারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু, ভাইস চেয়ারম্যান অপূর্ব কুমার বাইন রন্টু।


আরো সংবাদ



premium cement