২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
গোলাম কিবরিয়া বরগুনা 

পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি পরিবর্তনের ডাক আ’লীগে

পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি পরিবর্তনের ডাক আ’লীগে - ছবি : সংগৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরগুনায় সরগরম হয়ে উঠেছে প্রধান দুই দলের রাজনীতি। মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অনেকে। ১০৯ বরগুনা-১ (বরগুনা-আমতলী-তালতলী) আসন আ’লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও এ আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় মরিয়া বিএনপি। এ আসনটিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ্জামান মামুন মোল্লাকে পেয়ে আসন পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট বিএনপি।

নেতৃত্ব পরিবর্তনের ডাক নিয়ে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন আ’লীগের একাধিক তরুণ নেতা। তাদের অভিযোগ, সারা দেশে উন্নয়ন হলেও স্থানীয় এমপির অবহেলায় উন্নয়ন হয়নি বরগুনায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে প্রধান দু’টি দলের নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আলোচনা এখন দুই দলের প্রার্থী নিয়ে। আ’লীগের বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন অন্ত নেই। বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সাথে দলীয় উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড নেতাদেরও সুসম্পর্ক নেই বললেই চলে। আর এ সুযোগে জনসম্পৃক্ততায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে তরুণ নেতা কেন্দ্রীয় আ’লীগের সহ-সম্পাদক (উপ-কমিটি) ও জেলা আ’লীগ নেতা মশিউর রহমান শিহাব। ব্যবসায়ী এ তরুণ নেতার দান অনুদানে মুগ্ধ এলাকাবাসী।

তাদের আশা সৎ, যোগ্য ও শিক্ষিত তরুণ প্রার্থীকেই এবার মনোনয়ন দেবে আ’লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা।
আ’লীগ তথা সরকারের দমনপীড়ন গুম-খুন, মিছিল, সভা-সমাবেশে বাধাসহ বিভিন্ন অভিযোগ জনসাধারণের সামনে তুলে ধরে আ’লীগবিরোধী ভোট তাদের পক্ষে নিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা বরগুনা-১ আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় ব্যস্ত। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সবারই একই সুর। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ্জামান মামুন মোল্লা এবার মনোনয়ন নিয়ে এলে তার পক্ষেই দলের হয়ে কাজ করবেন তারা। 

এ দিকে সিডর-পরবর্তী সময়ে ফ্রি চিকিৎসাসহ এলাকার অসহায়দের সহযোগিতায় নাম উঠে এসেছে প্রথিতযশা চিকিৎসক ও বর্ষীয়ান সাংবাদিক, দৈনিক আমার সময় পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ডা: এ জি খানের। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা চলছে।

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে দান অনুদান, মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা ও স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডা: এ জি খানের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতা করার সম্ভাবনা সুশীলসমাজসহ সাধারণ মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে। এলাকায় সহস্র্রাধিক দুস্থÑদরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি, শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, রিকশাচালকসহ অসহায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে দান-অনুদান প্রদানসহ মসজিদ, বিদ্যালয় ও সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মান-উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকায় তার হাত রয়েছে। মুসলমানদের ঈদ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন পূজায় আর্থিক সহযোগিতাসহ নানা ধরনের সেবামূলক কাজে নিজেকে উৎসর্গ করে চলছেন ডা: এ জি খান।

বরগুনার তিনটি আসনকে একত্রিত করে ২০০৮ সালে দু’টি আসন করা হয়। বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলা নিয়ে ১০৯ বরগুনা-১।

আওয়ামী লীগ
বরগুনা-১ আসনে আ’লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, কেন্দ্রীয় আ’লীগ উপকমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আ’লীগের সদস্য মশিউর রহমান শিহাব, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক আলহাজ মো: জাহাঙ্গীর কবির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বরগুনা-১ আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে আ’লীগের রাজনীতি করে আসছি। বরগুনার জনগণকে একত্রিত করে আ’লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত করেছি। আশা করি, আগামী নির্বাচনেও দল আমার ওপর আস্থা রাখবে।

এ দিকে সফল ব্যবসায়ী তরুণ নেতা মশিউর রহমান শিহাব বলেন, ১/১১ থেকে এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য দলের সব নেতাকর্মীর সুখে-দুঃখে পাশে থেকে আসছি। ব্যক্তি উদ্যোগে এলাকার হতদরিদ্রদের আর্থিক সহযোগিতা করে আসছি। মসজিদ-মাদরাসা ও গরিব শিক্ষার্থীদের অনুদান দেই। ঈদ, কুরবানিতে অসহায়দের সহযোগিতা করে আসছি। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। এর আগেও মনোনয়ন চেয়েছি, এবারো চাইবো। আশা করি দল বিবেচনায় নেবে।

জেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, বিগত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দলের আন্দোলন সংগ্রামে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। দলের ও নৌকা প্রতীকের সম্মান অক্ষুণœœ রাখতে পৌর নির্বাচনে গুলি খেয়েছি। নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদে পাশে ছিলাম, আছি থাকব। বরগুনার উন্নয়ন এবং মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পরিবর্তন দরকার। দল মনোনয়ন দিলে বিজয়ের ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ রাখতে পারব বলে আমি বিশ^াস করি।

বিএনপি 
বরগুনা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ্জামান মামুন মোল্লা, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও এমপি আলহাজ মো: মতিয়ার রহমান তালুকদার ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক দলের সভাপতি লে. কর্নেল (অব:) আবদুল খালেক, জেলা বিএনপির সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম মোল্লা, সুপ্রিম কোর্ট জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও আমতলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গাজী তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

তবে স্থানীয় নেতাদের দাবি দলের এ দুর্দিনে ফিরোজ উজ্জামান মামুন মোল্লা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন তাই তাকে যাতে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় এটিই প্রত্যাশা তাদের।

কেন্দ্রীয় সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপি নেতা ফিরোজ উজ্জামান মামুন মোল্লা নয়া দিগন্তকে বলেন, বরগুনা-১আসনে এন্টি আ’লীগ ভোট ক্যারি করার মতো কোনো প্রার্থী বিগত বছরগুলোতে ছিলেন না। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিশ্রুতি দলীয় মনোনয়নে তরুণদের অগ্রাধিকার থাকবে। তিনি আরো বলেন, আমি কেন্দ্রঘোষিত সব কর্মসূচি নেতাকর্মীদের সামনে থেকে পালন করে আসছি। যত দিন জীবিত থাকব শহীদ জিয়ার আদর্শ ধারণ করে দলের জন্য কাজ করে যাব। নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হয়ে বিএনপিকে আসনটি আবার উপহার দিতে পারব বলে আশাবাদী। 

সাবেক সংসদ সদস্য মো: মতিয়ার রহমান তালুকদার বলেন, দুইবার সংসদ সদস্য ও একবার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমতলী-তালতলী অঞ্চলের মানুষ ছিল অবহেলিত। আমি সংসদ সদস্য থাকাকালীন এলাকার উন্নয়নে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল, ব্রিজ, কালবাট, স্কুল, কলেজসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছি এবং দলের আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। তাই আমার বিশ্বাস দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে মনোনয়ন দেবেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা: এ জি খান বলেন, বরগুনা-আমতলী-তালতলীর অবহেলিত সিডর অঞ্চল নামে পরিচিত। এই এলাকায় উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। এলাকায় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাদকের বিস্তার ঘটেছে এবং যুবসমাজের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। রাজনৈতিক হানাহানি দলীয়করণসহ সামাজিক অবক্ষয় প্রসারিত হয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ আজ পদে পদে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। যদি নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে ও নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী ম্যাজিসট্রেসি ক্ষমতাসহ মোতায়েন থাকে তবে এলাকার জনগণের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে এবং অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে উন্নতর জীবনযাপনের সব ধরনের অধিকার আদায়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রার্থী হতে পারেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ডা: এ জি খান।


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হয়েছেন যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিজ দেশে ৫ বছর পর ফিরল দিপক চট্টগ্রামে ৬ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ সদস্য আটক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : শামসুল ইসলাম ইউরো ২০২৪’কে সামনে রেখে দল নির্বাচনে বিপাকে সাউথগেট ভারতীয় পণ্য বর্জনকে যে কারণে ন্যায়সঙ্গত বললেন রিজভী মাকে ভরণ-পোষণ না দেয়ায় শিক্ষক ছেলে গ্রেফতার প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত ঢাবির সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিরাপত্তা-বিষয়ক আলোচনা করতে উত্তর কোরিয়ায় রুশ গোয়েন্দা প্রধান

সকল