২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

১৩ দিনেও খোঁজ মেলেনি ৭ জেলের

নিখোঁজ ছিদ্দিকুরের পরিবারের স্বজনরা জানে না ছিদ্দিকুর বেঁচে আছেন না কি মারা গেছেন। - ছবি: নয়া দিগন্ত

বঙ্গোপসাগরে ২টি মাছ ধরা ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৭ জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। ১৩ দিনেও তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে তাদের স্বজনরা মৎস্যবন্দর মহিপুর-আলীপুর আড়ৎ পল্লীর বিভিন্ন গদিতে (দোকানে) ঘুরছে আর কাঁদছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাদের উদ্ধারের জন্য কোন প্রকার তৎপরতা নেই।

মহিপুরের নজিবপুর ওই সকল জেলে পল্লী ঘুরে দেখাগেছে, স্বজনদের ফিরে পেতে তাদের আহাজারি ও আর্তনাদের করুণ দৃশ্য।

অভিজ্ঞ মহল ও স্বজনদের ধারণা হয়তো আর বেঁচে নেই তারা। অথচ এই অসহায় পরিবারগুলোর পাশে এখন পর্যন্ত ট্রলার মালিক কিংবা সরকারী ও বেসরকারী কোন লোক সহানুভূতি ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এসে দাঁড়ায়নি। ওই সকল পরিবারের অনেকেই এখন অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

জেলে পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, নিখোঁজ জেলে মাহাবুবের পরিবারে পাঁচজন সদস্য। স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে। বড় ছেলে মো: শফিক (০৯) বিপিনপুর কওমী মাদ্রাসায় পড়া লেখা করে, মেয়ে শিল্পী (০৭) নজিবপুর নূরাণী মাদ্রাসায় পড়ে এবং এক বছরের মনিয়া বাড়িতে থাকে। এ নিয়েই তাদের সংসার। মাহাবুবই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যক্তি। তার উপার্জনেই সংসার চলতো। মাহাবুব নিখোঁজ হওয়ায় তার সংসারের প্রদ্বীপ নিভে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

নিখোঁজ ইব্রাহিম, কাদেরসহ অন্য পরিবার গুলোর একই অবস্থা।

নিখোঁজ জেলে ছিদ্দিকের বাড়ি গেলে দেখা যায় আরও করুন দৃশ্য। ছিদ্দিকের সাড়ে তিন বছরের কন্যা সামিরা শুধু বাবা বাবা করছে, বাবা ফিরে আসবে মজা খাবে আরও কত কি? এমন আকুতি তার। কিন্তু বাবা ফিরে আসবে কি আসবে না, জীবিত আছে না মৃত কেউ জানে না। শুধু অপেক্ষার প্রহর।

ছিদ্দিকের স্ত্রী শারমিন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমি আমার স্বামীকে ট্রলারে যেতে দিতে চাইনি, ট্রলার মালিক জোরপূর্বক নিয়ে গেছে। আর এখন তার কোন খোজ-খবর টুকু পর্যন্ত নিচ্ছে না। আমি কিচ্ছু চাইনা-আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই’।

মা পরিভানু’র একই কথা ‘কিছুই চাইনা আমার সন্তান চাই, আমার সন্তান চাই, আমার সন্তান চাই’।
স্থানীয়রা মনে করছেন, নিখোঁজ জেলে পরিবার গুলোকে আর্থিক সহযোগিতাসহ পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা দরকার।

উল্লেখ্য গত ৫ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে হঠাৎ গভীর সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠে। প্রচন্ড ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে তীরে ফিরে আসার সময় মহিপুরের নজিবপুর এলাকার ‘এফ,বি, ইলিয়াছ’ ও লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আনছার উদ্দিন মোল্লার মালিকানাধীন ‘এফ,বি মারজিয়া আক্তার রিমা’ নামের মাছ ধরা ২টি ট্রলার বুধবার গভীর রাতে মাঝি মাল্লাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়।

এসময় নজিবপুর এলাকার এফ,বি, ইলিয়াছ ট্রলারের ১৩ জেলের মধ্যে ৬ জেলে অন্য একটি ট্রলারের সাহায্যে তীরে ফিরে আসে। তবে ট্রলার ডুবির ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও নিখোঁজ ৭ জেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজ জেলেরা হচ্ছে মাঝি মনির হাওলাদার, কাদের, ইব্রাহিম, মাহাবুব, ছিদ্দিক, ফাইজুল ও জাহিদ। নিখোঁজ জেলে জাহিদের বাড়ি বরগুনা জেলার খাকবুনিয়া এবং অন্যদের বাড়ি মহিপুরের নজিবপুর এলাকায় বলে জানা যায়।

অপরদিকে এফ,বি মারজিয়া আক্তার রিমা ট্রলারের ১৭ জেলে আরেকটি ট্রলারের সাহায্যে মৎস্য বন্দর আলীপুর নিয়ে আসলেও নিমজ্জিত ট্রলার ২টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এব্যাপারে নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ও ডেমরাঘাট শাখার সভাপতি, বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সদস্য মোঃ জাকির হোসেন বলেন, নিখোঁজ জেলেরা জীবিত থাকলে এতদিনে কোন না কোন জায়গায় ভেসে উঠত, মনে হয় তারা জীবিত নেই। তাই অবিলম্বে ট্রলার মালিক ও সরকারের পক্ষ থেকে ওই সকল জেলে পরিবার গুলোকে পূনর্বাসন ও আর্তিক সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

এব্যাপারে কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নিখোঁজ জেলেদের পক্ষ থেকে মৎস্য অধিদপ্তরে আবেদন করা উচিৎ তাহলে সেখান থেকে কিছু একটা সাহায্য সহযোগিতা পেতে পারে।

 

আরো পড়ুন: সাগরে ট্রলার ডুবিতে ৭ জেলে নিখোঁজ

মিজানুর রহমান, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী), ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় গভীর সমুদ্রে ২টি মাছ ধরা ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৭ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।

নিখোঁজ জেলেরা হচ্ছে মাঝি মনির হাওলাদার (৩২), কাদের (৫৫), ইব্রাহিম (৪৫), মাহাবুব (২৬), ছিদ্দিক (২৮), ফাইজুল (২৮) ও জাহিদ (২৭)। নিখোঁজ জেলে জাহিদের বাড়ি বরগুনা জেলার খাকবুনিয়া এবং অন্যদের বাড়ি মহিপুরের নজিবপুর এলাকায় বলে জানাযায়।

বুধবার সকাল থেকে গভীল সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠে। প্রচণ্ড ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে তীরে ফিরে আসার সময় মহিপুরের নজিবপুর এলাকার এফ,বি, ইলিয়াছ ও লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আনছার উদ্দিন মোল্লার মালিকানাধীন এফ,বি মারজিয়া আক্তার রিমা নামের দুটি ট্রলার বুধবার গভীর রাতে মাঝি মাল্লাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়।

এসময় নজিবপুর এলাকার এফ,বি, ইলিয়াছ ট্রলারের ১৩ জেলের মধ্যে ৬ জেলে অন্য একটি ট্রলারের সাহায্যে তীরে ফিরে আসে। তবে ট্রলার ডুবির দু’দিন অতিবাহিত হলেও নিখোঁজ ৭জেলের সন্ধান মেলেনী আজও।

অপরদিকে এফ,বি মারজিয়া আক্তার রিমা ট্রলারের ১৭ জেলে আরেকটি ট্রলারের সাহায্যে মৎস্য বন্দর আলীপুর নিয়ে আসলেও নিমজ্জিত ট্রলার ২টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার শেষ বিকেল পর্যন্ত মাছ ধরা ট্রলারগুলো উপকূলে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তবে এখনও কিছুসংখ্যক মাছ ধরার ট্রলার তীরে এসে পৌঁছাতে পারেনি।

জেলেরা বরফ, তৈল ও দৈনন্দিন বাজার নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফিরে আসতে হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে সবগুলো ট্রলার ঘাটে এসে পৌঁছাবে এমনটাই জানিয়েছেন এখানকার ট্রলার মালিকরা।

কুয়াকাটা সংলগ্ন আলীপুর-মহিপুর শিববাড়িয়া নদীতে নিরাপদে আশ্রয় নোঙর করে আছে সহস্রাধিক মাছ ধরা ট্রলার। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন নদী, খালে মাছধরা ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

সাগর থেকে ফিরে আসা জেলে সোহরাফ হোসেন বলেন, সাগর উত্তাল হওয়ার কারণে আমাদের ট্রলারের মাঝি মাল্লা সবাই বমি করেছে। মনে করছিলাম কুলে ফিরতে পারবো না, ট্রলার সমুদ্রে পড়ে যাবে।

নজিবপুর এলাকার এফ,বি, ইলিয়াছ ট্রলারের মালিক মো: ইলিয়াছ বলেন, অনেক সখ করে একটি ট্রলার সাগরে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু সে ট্রলারটি আজ ডুবে গেল, ট্রলার ডুবিতে আমার ১০ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। শুধু তাই নয় আমার ১৩ জেলের মধ্যে সাত জেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছে এটা আরও কষ্টদায়ক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কুয়াকাটা আলীপুর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতি লিঃ’র সভাপতি ও লতাচাপলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো: আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, হঠাৎ সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। জেলেরা সমুদ্রে টিকতে না পেরে নিরাপদে আশ্রায় ফেরার পথে সুন্দরবন সংলগ্ন সমুদ্রে আমার ট্রলারটি ডুবে গেছে। অন্য একটি ট্রলার আমার মাঝি মাল্লাদের ঘাটে নিয়ে এসেছে।

এব্যাপারে নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ও ডেমরাঘাট শাখার সভাপতি মো: জাকির হোসেন বলেন, এই সময় সরকারের পক্ষে জরুরীভাবে শক্তিশালী নৌ-যান নিয়ে নিমজ্জিত এলাকা চিহ্নিত করে জেলেদের খুজে দেখা উচিৎ।

নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন, ডেমরাঘাট শাখার কার্যকরী সভাপতি মোঃ ফারুক হোসেন এর সাথে তিনি বলেন, গভীর সমুদ্রে যেকোন ট্রলার ডুবির ঘটনা হলে তাৎক্ষণিক কোষ্টগার্ডের হেলিকপ্টার নিয়ে অনুসন্ধান করা।

 


আরো সংবাদ



premium cement