ধর্ষণের পর হত্যা করা সেই তরুণীর পরিচয় মিলেনি এক বছরেও
- পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদদাতা
- ১৩ আগস্ট ২০১৮, ১১:১৮
বরগুনার পাথরঘাটায় ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে চাঞ্চল্যকর তরুণী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার এক বছর পরেও বিচার শুরু হয়নি। নিহত তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত করাই এখন প্রধান অন্তরায় বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঘটনায় অভিযুক্ত চার ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে বন্দি। এদের মধ্যে দুইজনকে অপর ২টি হত্যা মামলায় আবার গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গত বছর ১০ আগস্ট পাথরঘাটা কলেজ পুকুর থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক তরুণীর লাশ উদ্ধার হলে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা হয় এবং জেলা গোয়েন্দা শাখা ঘটনার তদন্ত করছে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, পাথরঘাটা কলেজ এলাকায় পশ্চিম প্রান্তের একটি পুকুর থেকে অর্ধগলিত এক তরুণীর লাশ গত বছর ১০ আগস্ট উদ্ধার করে পাথরঘাটা থানা পুলিশ এবং একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা রেকর্ড করে। পুলিশের ধারণা লাশ উদ্ধারের ১০ থেকে ১২ দিন আগে তাকে হত্যা করে পুকুরে পনির নিচে রাখা হয়েছে।
লাশ উদ্ধারের প্রায় তিন মাস পর ৯ নভেম্বর পাথরঘাটা কলেজের নৈশপ্রহরী মো: জাহাঙ্গির হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে বেড়িয়ে আসেন। তার জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মো: মাহমুদ ও পাথরঘাটা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মাহিদুল ইসলাম রায়হানকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তাদের জবানবন্দিতে কারা তরুনীকে ধর্ষন করে ও হত্যাকান্ড করেছে এবং পুকরের মধ্যে পানির নীচে খুটির সাথে বেঁেধ গুম করার তথ্য বেড়িয়ে আসে।
এর পর ঘটনার সূত্র ধরে পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল ও সাাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছোট্টকে পুলিশ গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত চার ছাত্রলীগ নেতাকে জেলা কমিটির সুপারিশে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি দল থেকে বহিষ্কার করে।
এ ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনায় দেশব্যাপী আন্দোলন ও প্রতিবাদ হয়। পরে মামলা পাথরঘাটা থানা পুলিশের হাত থেকে জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়। এখনো মামলার তদন্ত রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।
তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক মো: বশির আলম জানান, মামলা তদন্তাধীন আছে। অভিযুক্তদের জবানবন্দিতে ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করা হয়। মামলায় যে উপাদান আছে তাতে হত্যাকান্ড প্রমাণ করা সম্ভব। কিন্তু আমরা নিহত তরুণীর পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা এখনো চালাচ্ছি। সারা দেশের থানাসমূহে এ সংক্রান্ত বার্তা পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার সময় একটি মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়েছিল, কিন্তু জব্দ হয়নি তার কোনো হদিস আছে কিনা? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা শিগগিরই মামলার চার্জশিট দিতে পারব। ঘটনার প্রায় ৮০ ভাগ তদন্ত শেষ হয়েছে।
অপরদিকে পাথরঘাটা থানা পুলিশ পৃথক ২টি হত্যা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা রুহি আনান দানিয়াল ও সাদ্দাম হোসেন ছোট্টকে গ্রেফতার দেখায়। এর একটি ২০১৫ সালে পাথরঘাটা কে এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে পিছনের ডোবায় পাওয়া অজ্ঞাত পরিচয় একটি লাশ ও পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের পুকুরের ঘাটলার নিচে ২০১৭ সালে অজ্ঞাত পরিচয় অপর একটি লাশ পাওয়া গিয়েছিল। যথাক্রমে এ বছর ২১ ও ও ২৮ মে আদালতে পাথরঘাটা পুলিশ আবেদন করলে আদালত তাদের গ্রেফতার দেখান।
এ ব্যপারে গ্রেফতার ছাত্রলীগ কলেজ শাখার (বহিষ্কৃত) সভাপতি রুহি আনান দানিয়ালের বড় ভাই পাথরঘাটা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: মোফাচ্ছের হোসেন বাবুল দাবি করেন, তরুণী ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় তার ভাইয়ের কোনো অপরাধ নেই। নিহত তরুণীর আজ পর্যন্ত কোনো পরিচয় সন্ধান বের করতে পারেনি পুলিশ। তার ভাই জামিনে যাতে বের হতে না পারে সে জন্য পুলিশ অন্য ২টি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো: জাবির হোসেন বলেন, অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের অপরাধের বিচার দ্রুত শুরু করা দরকার, নতুবা জনমনে ন্যায়বিচার নিয়ে সংশয় তৈরী হতে পারে।
এ ব্যাপারে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক জানান, মামলার অনেককিছ্ইু আমরা নিশ্চিত হয়েছি, নিহত তরুণীর পরিচয় উদ্ধার করা গেলেই আদালতে চার্জশীট প্রদান করে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন :
মির্জাপুরে চলন্ত বাসে গার্মেন্টসকর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যা
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা, ২৬ জুলাই ২০১৮
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে চলন্ত বাসে শিউলী আক্তার (২৬) নামের এক নারী গার্মেন্টসকর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাওয়ার কুমারজানি এলাকায় বর্বর এ ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল (মহাসড়কের পাশ থেকে) ওই গার্মেন্টসকর্মীর লাশ উদ্ধার করলেও বাস ও ধর্ষণকারীদের আটক করতে পারেনি।
পুলিশ সূত্র জানায়, শিউলী আক্তারের স্বামীর নাম মো: শরিফ মিয়া। বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার পুষ্টকামুরী চরপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম মো. আলেফ খান, বাড়ি একই উপজেলার রোয়াইল গ্রামে।
শিউলীর চাচাতো ভাই মো: মালেক মিয়া জানায়, শিউলী গোড়াই শিল্পাঞ্চলের কম্পিট কম্পোজিট গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যাওয়ার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চরপাড়া নামক স্থানে এলে তাদের বহনকারী বাস এসে দাঁড়ায়। কিন্ত ভুলক্রমে আইডি কার্ড বাড়িতে রেখে আসায় তিনি ঐ বাসে না উঠে বাড়ি চলে যায়।
বাড়ি গিয়ে আইডি কার্ড নিয়ে এসে রাস্তার পাশে দাঁড়ায় গার্মেন্টসে যাওয়ার জন্য। এ সময় টাঙ্গাইল থেকে কালিয়াকৈর-চন্দ্রাগামী একটি বাসকে থামার জন্য ইশারা করলে বাসটি থাকায়। তিনি বাসে উঠে দেখতে পান অন্য কোনো যাত্রী নেই। এই সুযোগে বাসের হেলপার ও সুপারভাইজারসহ তাদের সহযোগী কয়েকজন মিলে শিউলীকে ধর্ষণ করে। শিউলী বাসের মধ্যে বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তচিৎকার করেও ধর্ষণকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
বাসটি বাওয়ার কুমারজানি নামক স্থানে এলে কয়েকজন কৃষক বাসে চিৎকারের শব্দ শুনে রাস্তার পাশে ছুটে এলে ধর্ষণকারীরা শিউলীকে হত্যার পর বাস থেকে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
আশপাশের লোকজন ছুটে এসে লাশ দেখতে পেয়ে হাইওয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে গোড়াই হাইওয়ে থানায় নিয়ে যায়।
শিউলীর অসহায় পরিবার যাত্রীবাহী বাসটি আটক ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানায় যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার এএসআই লিপি আক্তার বলেন, মহিলার লাশ উদ্ধার করে হাইওয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। থানায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।
শিউলীর পরিবার জানিয়েছে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা