ইভটিজারদের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় জীবন দিল মিলি

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ইভটিজারদের বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অকালে ঝড়ে গেলে এক মেধাবী ছাত্রীর প্রাণ। আইসিইউ’তে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬০ ঘন্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে উপজেলার পূর্ব পয়সা গ্রামের টিএম নজরুল ইসলামের মেয়ে ও গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ১০ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী মেনহাজ হাসান মিলি (১৫) গতকাল শুক্রবার সকালে মারা যায়। এ ঘটনায় মিলির স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠীসহ এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহত মিলির বাবা টিএম নজরুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে তিনি উপজেলা সদর থেকে তার মেয়ে মিলিকে ডাক্তার দেখিয়ে মাহেন্দ্র যোগে সন্ধ্যায় নিজের বাড়ির সামনে নেমে রাস্তার উত্তর দিকে ভাড়া পরিশোধ করছিলেন। মিলি রাস্তা পার হয়ে দক্ষিণ দিকে দাড়িয়েছিল। এ সময় পশ্চিম দিক থেকে ৫ টি মোটর সাইকেল নিয়ে বেপারোয়া গতিতে যাবার সময় মোটরসাইকেলে থাকা ইভটিজাররা তার মেয়ে মিলিকে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। মুহুর্তের মধ্যে মিলির নাক কান দিয়ে রক্ত আসতে থাকে। এ সময় ঘাতক মোটরসাইকেল চালক মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা মিলিকে গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা মিলিকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পরামর্শ দেয়। মিলিকে উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

মঙ্গলবার রাতেই স্থানীয় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র উদ্যোগে মিলিকে বরিশাল শেবাচিম হাসাপাতালের আইসিইউ’তে ভর্তি করা হয়। আইসিইউ’তে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে মিলি মারা যায়। মিলি পয়সা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি’তে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছিল। পয়সা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক না থাকায় উপজেলার গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। মিলি পড়ালেখা করে কম্পিউার ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিল।

নিহত মিলির চাচা জব্বার তালুকদার জানান, ইভটিজারদের ফেলে যাওয়া বরিশালে রেজিষ্ট্রেশন করতে দেয়া মোটরসাইকেলের কাগজ অনুযায়ী মালিকের নাম রিফাত আকন, পিতা আতাহার আকন। তার বাড়ি মুলাদি উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের টুমচর গ্রামে। দুর্ঘটনার সময় রিফাত নিজে গাড়ি চালাচ্ছিল। রিফাত বর্তমানে প্যাসিফিক ফার্মাসিউটিক্যাল লিঃ নামে ঔষধ কোম্পানীতে উজিরপুর উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা জানান, তিনি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এসআই জাহিদুর রহমান ও এএসআই রাজু আহম্মেদকে পৃথকভাবে মোটরসাইকেলটি থানায় আনা ও মামলা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তারা মোটরসাইকেলটি পুলিশের কাছে দেয়নি। এ ঘটনায় মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ওসি।

এদিকে মিলির মৃত্যুতে গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকরা শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে। সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি একটি প্রশ্ন সবার মনে ‘কী দোষ করেছিল মিলি? কেনইবা এমন হলো?’ মিলির মত আর কতো মেধাবীরা প্রাণ দিলে থামনো যাবে অপ্রতিরোধ্য ইভটিজারদের?