২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভান্ডারিয়ায় ‘টাউট ডালিমের’ সাজানো মামলায় হয়রানি

-

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পুলিশের সোর্স ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী এক প্রতারকের মিথ্যা মামলায় এক পরিবারকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। ওই সাজানো মামলায় ১০ জন আসামীর ৯ জনের জামিন হলেও একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি হাজতবাস করছেন।
মামলায় অন্যায়ভাবে হয়রানীর শিকার পরিবারটির অভিযোগ, ভান্ডারিয়া থানা পুলিশের সোর্স ও কথিত সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ হাওলাদার ওরফে ডালিম সড়ক দুর্ঘটনাকে হত্যা চেষ্টার বানোয়াট অভিযোগ এনে প্রতিপক্ষ ১০ জনের নামে মামলা দায়ের করেনে । আর মামলাটি গ্রহণ করে বিব্রত সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।

এ বিষয়ে ভান্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শেখ আব্দুল আউয়াল বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, আমরা সবাই ওই মামলার বাদীকে প্রতারক বলে জানি। তার দালিলিক কি নাম তা জানি না। তবে আমরা চিনি ‘টাউট ডালিম’ বলে। তিনি পুরো বিষয়টি আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। পাশাপাশি পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে কাউকে হয়রানি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানাগেছে, ভান্ডারিয়া থানার সামনে গেটের বিপরীত পাশে একটি ফটোকপির দোকান চালান এই আরিফ বিল্লাহ হাওলাদার ওরফে ডালিম । তিনি ‘দৈনিক বঙ্গজননী’ পত্রিকার প্রতিনিধি পরিচয় ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় দেন। তার বাড়ি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলায় হলেও জীবিকার তাগিদে ভান্ডারিয়া শহরে থাকেন । ভান্ডারিয়ার পশারিবুনিয়া তার প্রতিবেশী মৃত ইসহাকের আলীর পরিবারের সাথে আব্দুল সালাম হাওলাদারের ছেলে আরিফ বিল্লাহর দীর্ঘ দিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল । এ নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও আদালত আরিফ বিল্লাহ বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। যে কারনে স্থানীয়রা তাকে ‘ঠগা আরিফ’ বলে ডেকে থাকেন।

প্রতিপক্ষদের সাথে মামলায় হেরে এই আরিফ বিল্লাহ নতুন করে হয়রাণির ফন্দি আঁটেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে প্রতিপক্ষ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার সাজানো অভিযোগ এনে গত ৩জুন ভান্ডারিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ১৩ মে রাত আনুমানিক ৯টায় তাকে দক্ষিণ পূর্ব রাজপাশা ১২৬ নম্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আটকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষ ফোরকান মোল্লা, ফারুক মোল্লা, ইব্রাহিম হাওলাদার, কাওসার হাওলাদার, মাসুম হাওলাদার, মানিক হাওলাদার, আবদু রশিদ হাওলাদার, সেলিম হাওলাদার, সোহেল হাওলাদার ও রফিক হাওলাদার। জানা গেছে, এই ১০ জনই পরস্পরে আত্মীয়। মামলা দায়েরের পর বাদী আরিফ বিল্লাহকে সাথে নিয়ে থানার উপ পরিদর্শক মোঃ আঃ কাইয়ূম অভিযান চালিয়ে মামলার ২ নম্বর আসামী ফারুক মোল্লাকে গ্রেফতার করেন ।

জানা গেছে, এই এস আই মোঃ আঃ কাইয়ূম ভান্ডারিয়ায় বদলী হয়ে আসার আগে কাঠালিয়া থানায় দায়িত্ব পালন করেছেন। এস.আই মোঃ আঃ কাইয়ূমের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। ভান্ডারিয়া থানা পুলিশ ও নিশ্চিত করেছে মামলাটি সম্পূর্ণ ভূয়া। পুলিশের অদূরদর্শিতার কারনে সাজানো মামলাটি গ্রহন করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৩ মে আরিফ বিল্লাহ কে কেউ হত্যা হামলা চালাননি। এমন কি তার ওপর কেউ হত্যা চেষ্টাও চালাননি। মূলত, ১৩ মে রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন আরিফ। রাত ৯ টার দিকে আরিফ বিল্লাহ ওরফে ডালিম ভান্ডরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ওই দিনের ভর্তি রেজিষ্টারে তার নাম ও আহত হওয়ার কারন উল্লেখ রয়েছে।

আরিফ বিল্লাহকে চিকিৎসা প্রদানকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রঞ্জন কুমার বর্মণ বলেন, আরিফ বিল্লাহকে চিকিৎসা দিয়েছি যখন তখন তিনি জানিয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। কারও সাথে কোন মারামারি বা তাকে কেউ আক্রমন চালিয়েছে এমন কোন তথ্য জানায়নি। পাশাপাশি আরিফ বিল্লাহর জখম খুব গুরুতরও ছিলনা। সামান্য কেটেছিড়ে গেছে বলে জানান এই চিকিৎসক।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ থানা থেকে আহতর বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেখানে সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখ করেই প্রত্যয়ন দেওয়া হবে।

সাজানো মামলায় হয়রাণির শিকার মো. ইব্রাহিম হাওলাদার অভিযোগ করেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের অন্যায় ভাবে হয়রাণি করেছে । আরিফ বিল্লাহ পুলিশের সোর্স আর সাংবাদিক এমন পরিচয় দিয়ে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন। মিথ্যা মামলায় বাকি ৯ জনকে আদালত জামিন দিলেও ফারুক মোল্লা এখনও জেলহাজতে রয়েছেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভান্ডারিয়া থানার এসআই মো.আঃ কাইয়ূম বলেন, থানায় অভিযোগ নিয়ে আসলে তা খতিয়ে দেখার দরকার পড়ে না। আইন অনুযায়ী অভিযোগ পেলেই গ্রহণ করতে হয়। তারপরে আসামী আটক করে তা খতিয়ে দেখতে হয়। এ কারনে ওই মামলাটি নিতে হয়েছিল। তিনি বলেন, যাছাই বাছাই ছাড়া মামলাটি গ্রহন করা যথার্থ ছিলনা। এখন আদালতের মাধ্যমে মামলাটির সুরাহা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement