১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফতুল্লায় দেড় মাস ধরে অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দী

পানি নিষ্কাশন বন্ধ থাকায় পানিবন্দী ফতুল্লা এলাকা : নয়া দিগন্ত -

ফতুল্লার প্রায় দেড় মাস ধরে অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। প্রতিদিনই ডাইংয়ের ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় তাদের। শুষ্ক মৌসুমেও এই জলাবদ্ধতা।
সরেজমিন জানা গেছে, পানি অপসারণে তিনটি পাম্পের বিদ্যুৎ বিলের ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই সংযোগ কেটে দেয়ায় জলাবদ্ধতায় দেখা দিয়েছে। এতে গোটা এলাকার রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকান, প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে অদৃষ্টের আশীর্বাদ কামনা ছাড়া কারো যেন কিছুই করার নেই। অথচ এই এলাকাতে তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান বাস করেন।
এলাকার বাসিন্দা ফতুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন, বক্তাবলী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী, কলাগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান বিভিন্ন দিকে দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না বলে জানান তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ড্রেনের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ফতুল্লা ইউনিয়নের লালপুর, পৌষার পুকুরপাড়, টাগারপাড়, গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। কোনো কোনো এলাকায় পানি উপচে রাস্তা ও বাসা বাড়িতে ঢুকে গেছে। ড্রেনের নোংরা পানি ও মলমূত্রের সাথে যোগ হয়েছে শিল্প-কারখানার কেমিক্যালযুক্ত বিষাক্ত পানি।
বেশির বাগ এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে নোংরা ও ডাইং কলখারখানার গরম পানিতে। রাতে রাস্তা খুঁজে পাওয়াও কঠিন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, দোকানিসহ পানিবন্দী প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এ পানি মাড়িয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের ফলে চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অনেকে বাধ্য হয়েই কয়েক মিনিটের রাস্তা পার হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে।
বকুলতলী এলাকার দোকানি রমিজ মিয়া বলেন, পানি সরে যাওয়ার ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। আর বৃষ্টি হলে তো সাথে সাথে পুরো রাস্তা খালে পরিণত হয়। পানিতে মলমূত্র ভাসছে এবং প্রচণ্ড গরম হওয়ার ফলে পানিতে পা রাখা যায় না। মসজিদে যেতে মুসল্লিদেরও বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। দোকানিরা তাদের ব্যবসা বন্ধ করারও চিস্তা করছেন।
গৃহিণী মিতুল আক্তার জানান, পানির সাথে মলমূত্র ও শিল্প-কারখানার কেমিক্যালযুক্ত বিষাক্ত পানি মিশে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ। ময়লা পানি বাসাবাড়ি রান্নাঘরে ঢুকে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। রান্নাসহ বিভিন্ন কাজকর্মে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে এলাকার সবার সিদ্ধান্তে ৯০ হর্স পাওয়ারের তিনটি মোটরের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন চলত। মূলত আজাদ, রনি ডাইং ও প্রধান টাওয়ারের ডাইংটি মিলে তিনটি ডাইং ফ্যাক্টরির এই ময়লা পানির জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী। তিন বছরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয়ে পড়েছে ৫০ লাখ টাকা। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ছয় লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিষদ করেছি কিন্তু এখনো ৪৪ লাখ টাকা বিল বাকি।
তিনি আরো বলেন, মূলত এই মোটরগুলো চালানোর জন্য দু’জনকে মাসিক ২৫ হাজার টাকা দেয়া হতো। এ টাকা এলাকার মানুষের কাছ থেকে বছরের ৫০০ টাকা করে আড়াই লাখ টাকা তোলা হয় পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমে। কিন্তু সেটি দিয়ে বিদ্যুৎ বিল দেয়া সম্ভব হয়নি। বকেয়া থাকায় ডিপিডিসি বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পানির পাম্প ছাড়া উপায় নেই, কারণ এলাকা নিচু হওয়ায় ড্রেনগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ করে লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী ডাইং ফ্যাক্টরি মালিকদের বারবার নিষেধ করার পরও তারা কেমিক্যালযুক্ত পানি এলাকায় ছাড়ছে। উপায় নেই, মানুষ যাবে কোথায়? আমরা ডাইংগুলোর মালিককে নোটিশ করছি, জানাচ্ছি তবে তারা কেউ গায়েই মাখছেন না কথা। নদীতে পানি ফেলার লাইন থাকার পরও বিদ্যুৎ বিলের ভয়ে তারা এভাবেই পানি ছাড়ছে। জলাবদ্ধতার নিরসনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে।
ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীও থাকেন এই এলাকায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ডাইং ফ্যাক্টরির মালিকদের জন্য জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আজাদ ডাইংকে পানি ছাড়তে নিষেধ করেছি তবে তারা কথা শোনেন না। তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক বলেন, ‘পাঁচ-ছয় মাস আগে আমি ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। এখন আবার কী কারণে পুরো এলাকা পানিবন্দী হয়ে পড়ল বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি ওই এলাকার চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
বকেয়া বিল থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে জানিয়ে ডিপিডিসি ফতুল্লা সাবস্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মজিদ বলেন, ‘বকেয়া বিল পরিশোধ না করা হলে আমাদের কিছুই করার নেই। মানুষ কষ্ট করছে, কিন্তু আমরা আমাদের দায়িত্বের বাইরে যেতে পারি না।’


আরো সংবাদ



premium cement