কলারোয়ায় দুর্যোগসহনীয় বাসগৃহ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ
- সাতীরা সংবাদদাতা
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
সাতীরার কলারোয়ায় দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজে পুকুরের নি¤œমানের বালু, ২ নম্বর ইট ও সিমেন্টের মিশ্রণে সরকারি অর্থ লোপাট করা হচ্ছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন বরাদ্দ পাওয়া নির্মাণাধীন বাসগৃহের মালিকরা।
কলারোয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের ত্রেপাড়া গ্রামে দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি বাসগৃহের জন্য সরকারিভাবে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ১ নম্বর ইট দিয়ে নির্মাণকাজ করার কথা। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাসগৃহের নির্মাণকাজে দেখভাল করার জন্য একজনকে সভাপতি ও একজনকে সম্পাদক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদারকি কমিটিও করা হয়। বরাদ্দকৃত অর্থে একটি রান্নাঘর বিশিষ্ট দুই রুম ও আলাদা বাথরুম নির্মাণ করা হবে।
ত্রেপাড়া গ্রামের কানাই দাশের ছেলে নেপাল দাশ জানান, তিনি গরিব মানুষ। তার থাকার মতো বাড়িঘর নেই। সম্প্রতি সরকার তার নামে একটি বাসগৃহ বরাদ্দ করে। ঘর নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে একটি কমিটিও করা হয়। বাসগৃহ নির্মাণের ওই কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান ছামছুদ্দিন আল মাসুদ বাবু। কোনো আলেচনা ছাড়াই ১০ দিন আগে তার তিন শতক জমির ওপর ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার জয়দেব সাহা বাসগৃহ নির্মাণ করার কাজ শুরু করেন। বাসগৃহ নির্মাণে ভিতের মাটি না খুঁড়ে আলগা মাটির ওপর পুকুরের বালুর সাথে সিমেন্ট মিশিয়ে ২ নম্বর ইট দিয়ে কাজ শুরু করা হয়। নিয়মবহির্ভূত কাজ করতে নিষেধ করলে ঘরের টাকা ফিরে যাবে বলে হুমকি দেন তিনি। এ সময় সে প্রতি বস্তা সিমেন্টের সাথে ১৬ ঝুড়ি বালু মিশিয়ে কাজ করতে থাকলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে গিয়ে মৌখিক অভিযোগ দেই। বাসগৃহ নির্মাণে সরকারের প্রায় তিন লাখ টাকা বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার জন্য ইউপি সদস্য জয়দেব সাহা কোনো নিয়ম মানেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই গ্রামের মৃত তকব্বর গাজীর স্ত্রী ফেরদৌসির নামে বরাদ্দকৃত বাসগৃহ নির্মাণেও অনিয়ম হচ্ছে। উঠানের মাটি খুঁড়ে ভিত তৈরি করা হয়নি। ১৫ ইঞ্চি বেজ ও ১০ ইঞ্চি ভিতের উচ্চতা, সিমেন্ট ও বালুর ব্যবহার করা হয়েছে বরাদ্দ পাওয়া বাড়ির মালিককে না জানিয়ে ইচ্ছামতো। সরকারি অর্থ লোপাটের জন্য তড়িঘড়ি করে কাঠের বদলে স্বল্প মূল্যের টিনের দরজা-জানালা লাগানোর কাজ চলছে।
প্রকল্প কমিটির সম্পাদক সংরতি মহিলা মেম্বার জাহানারা খাতুন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান নেপাল দাশের বাসগৃহ নির্মাণ কমিটির সভাপতি। তার অনুপস্থিতিতে ইউপি সদস্য জয়দেব সাহা দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি টাকা লোপাটের জন্য মনগড়া কমিটি করে কাজ শুরু করেছেন। তিনি কমিটির সেক্রেটারি হলেও তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি।
ইউপি চেয়ারম্যান ছামছুদ্দিন আল মাসুদ বাবু জানান, তিনি ছুটিতে কয়েক দিন এলাকার বাইরে অবস্থান করছেন। সপ্তাহখানেক পর বাসগৃহ নির্মাণের কাজটি তিনি স্বচ্ছতার সাথে করতে চেয়েছিলেন। এলাকায় না থাকার সুযোগে সরকারি অর্থ লুটপাট করার জন্য ইউপি সদস্য জয়দেব সাহা রাতদিন শ্রমিক লাগিয়ে যেনতেনভাবে কাজ সম্পাদন করার চেষ্টা করছেন বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি তিনি ইউএনওকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য জয়দেব সাহা জানান, নিয়ম মেনেই বাসগৃহ নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। সরকারি কাজে একটু এদিক-ওদিক হয়েই থাকে। সব দিকে খেয়াল করলে কাজ করা যায় না। তা ছাড়া ঘর নির্মাণ কাজের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান হলেও তিনি দেশের বাইরে থাকায় নতুন কমিটি গঠন করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম শাহ নেওয়াজ বলেন, নির্মাণকাজে অনিয়ম হচ্ছে বলে নেপাল দাশ নামের একজন মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। এ ছাড়া গৃহনির্মাণ কাজের সঠিক কমিটির বাইরে কেউ অনিয়ম করে কাজ করলে বরাদ্দকৃত টাকা ছাড় করা হবে না। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের টাকা হরিলুট করে উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা