২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পেকুয়ায় নির্বিচারে সড়কের বৃক্ষ নিধন, নির্বিকার প্রশাসন

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালীতে এভাবেই সড়কের পাশে নির্বিচারে গাছ কেটে সাবাড় করে দেয়া হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

পেকুয়া উপজেলার শিলখালীতে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন চলছে। এতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীরা। ওই ইউনিয়নের স্কুল স্টেশন এলাকায় সড়কের পাশে এরই মধ্যে শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হলেও সে দিকে প্রশাসনের কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় লোকজন। এ দিকে গাছগুলোর মালিক দাবিদার ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী দাবি করেন, তিনি ১২ বছর আগে গাছগুলো তার মৎস্য খামারের পুকুর পাড়ে লাগিয়েছিলেন এবং গাছগুলো থেকে ‘নিথিয়াম গ্যাস’ বের হয়ে পুকুরের মাছ আক্রান্ত হওয়ার কারণেই মৎস্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তিনি গাছগুলো কেটেছেন। সড়কের পাশে এত গাছ একসাথে কেটে সাবাড় করে দিলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছেন বলে জানান এলাকাবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান, শিলখালী ইউনিয়নের স্কুল স্টেশনের একটু দক্ষিণ দিক থেকে হেদায়তাবাদ হতে একটি সরকারি রাস্তা পূর্ব দিকে গিয়ে শিলখালী জনতা বাজারে মিলিত হয়। সে রাস্তার পাশেই শুরুর দিকে ছিল শতাধিক বড় বড় পরিবেশবান্ধব গাছ যেগুলো দৃষ্টিনন্দন ছিল। গাছগুলো পথচারীদের ছায়া ও অক্সিজেন দিয়ে আসছিল বছরের পর বছর। কিন্তু হঠাৎ করে এক দিনে একসাথে গাছগুলো কর্তন করে ফেলায় বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় অধিবাসী সেলিম উদ্দিন জানান, ‘গাছগুলোর কান্না কারো কানে যাচ্ছে না। গাছগুলো কাটার ফলে এলাকার পরিবেশের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যক্তিমালিকনাধীন গাছ হলেও প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিরেকে এতগুলো গাছ কাটা যায় কি না সে প্রশ্ন থেকেই যায়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় এম ইউপি শাহাব উদ্দিন জানান, ‘গাছগুলো সরকারি সড়কের পাশে হলেও সেগুলো কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল। আর তাই ব্যক্তিগত গাছ কাটছেন মনে করে কেউ বাধা দেয়নি আর আমরাও পরিবেশের ক্ষতির কথাটা সেভাবে চিন্তা করিনি।’
জানতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন জানান, ‘গাছগুলোর মালিক আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই আমি সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে একসাথে এতগুলো গাছ কাটায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পেকুয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট মীর মোশাররফ হোসেন টিটু জানান, গাছগুলো ছিল পরিবেশবান্ধব। যেগুলো পরিবেশের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। গাছগুলো কাটায় পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন এস বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে বৃক্ষ নিধনকারীরা আরও উৎসাহ পাবে বলে মনে করেন তিনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাছের মালিক দাবিদার ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমি ১০-১২ বছর আগে ইন্ডিয়া থেকে পরিবেশবান্ধব গাছগুলো এনে আমার মৎস্য প্রজেক্টের পুকুর পাড়ে রোপণ করি। কিন্তু আমার কাজে নিয়োজিত মৎস্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে গাছগুলো থেকে এক প্রকার ‘নিথিয়াম গ্যাস’ নির্গত হয়ে পুকুরের মাছের ক্ষতি হচ্ছে; যে কারণে প্রজেক্টের সব গাছ কেটে ফেলি। তাদের পরামর্শে আমি পুকুর পাড়ে নতুন করে নারিকেল গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও বারবাকিয়া রেঞ্জ অফিসার আবদুল গফুর মোল্লা জানান, ‘ব্যক্তিমালিকনাধীন হোক আর যাই হোক গাছ কাটার এখতিয়ার কারো নেই। যদি কেটে থাকে তা হলে এটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। একসাথে এতগুলো গাছ কাটার ফলে পরিবেশের যে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে. তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, আপনি সন্তান জন্ম দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু আপনি তাকে গলা টিপে হত্যা করতে পারেন না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা শাহাদাতের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে প্রকৃত বিষয় জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।’
কক্সবাজার জেলা পরিবেশ অধিদফতরের ডেপুটি ডাইরেক্টর নাজমুল হুদা জানান, ‘গাছ কাটা পরিবেশ আইনে মারাত্মক অপরাধ। দেশীয় আইনে গাছ কাটার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। তবে যে সড়কের পাশ থেকে গাছগুলো কাটা হয়েছে সে সড়কটি সরকারি কোনো অধিদফতরের অধীনে তা দেখে তাদেরকেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement