২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মানিকগঞ্জে গৃহবধূ হত্যা

ফেসবুক প্রেমিককে দিয়েই মাকে হত্যা করিয়েছে মেয়ে

-

পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় মা মাহমুদা বেগমকে (৪৫) ফেসবুক প্রেমিক ও তার বন্ধুদের দিয়ে হত্যা করিয়েছে মেয়ে জুলেখা আক্তার জ্যোতি। পূর্বপরিকল্পিতভাবে বুধবার সকালে মানিকগঞ্জ শহরের দক্ষিণসেওতা এলাকায় নিজ বাড়িতে শ্বাসরোধে খুন করা হয় মাহমুদা বেগমকে। এই হত্যায় অংশ নেয় জ্যোতির ফেসবুক প্রেমিক নাঈম ইসলাম ও তার তিন সহযোগী। গত সোমবার মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় জ্যোতি, নাঈম ও নাঈমের সহযোগী রাকিব।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার এসআই শামীম আল মামুন জানান, মাহমুদা বেগমকে তার নিজ ঘরে খাটের ওপর লেপচাপায় শ্বাসরোধে হত্যার পর জ্যোতিকে হাত, পা, মুখ বেঁধে মাকে হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার লুটের নাটক সাজায় তারা। কিন্তু এক দিনের মাথায় পুলিশের তদন্তে তা ফাঁস হয়ে যায়।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, বুধবার সকালে হত্যাকান্ডের সময় বাড়িতে থাকা নিহতের একমাত্র মেয়ে জ্যোতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে নেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যাকান্ডের সাথে তার সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে সে। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার বিকেলে তাকে মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল আদালতের মানিকগঞ্জ সদরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়। হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আরো তথ্য আদায়ের লক্ষ্যে বিচারকের কাছে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে বিচারক ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুক্রবার বিকেলে নিহতের স্বামী জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মেয়ে জ্যোতি আক্তার, তার কথিত ফেসবুক প্রেমিক নাঈম ইসলাম ও রাকিবসহ তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তের স্বার্থে ওই দুই সহযোগীর নাম পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জ্যোতি আক্তার তার মায়ের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতেই তার কথিত প্রেমিক কেরানীগঞ্জের আরাকুল গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে নাঈম ইসলাম এবং তার সহযোগী একই গ্রামের মৃত আবদুল বারেকের ছেলে রাকিবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আরো দুই সহযোগীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, মোবাইল ফোন-ফেসবুক-ম্যাসেঞ্জারের আলাপচারিতায় আট মাস আগে ভোলা জেলার নির্মাণশ্রমিক নাঈমের সাথে জ্যোতির অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হননি মা। তাই তিন মাস আগে জ্যোতি ও নাঈম পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করার। পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতেই নাইম ও তার চার সহযোগি জ্যোতির ঘরে প্রবেশ করে। রাতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও হত্যার সুযোগ পায়নি। পরে সকাল ৭টার দিতে জ্যোতির বাবা ফজরের নামাজ শেষে প্রাতঃভ্রমণে বের হলে তারা মাহমুদা বেগমকে হত্যা করা হয়। নিহতের স্বামী জহিরুল ইসলাম জানান, তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজস্ব পাঁচতলা ভবনের দোতলার একটি ইউনিটে বসবাস করেন। তিনি ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কাতারে প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে এসে পোলট্রি ব্যবসা শুরু করেন। তিন বছর আগে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট উচ্ছেদের সময় তার দোকান ভাঙা পড়ে। ব্যবসা বাদ দিয়ে ২০১৫ সালে তিনি জেলা শহরের সেওতা এলাকায় গড়ে তোলেন একটি পাঁচতলা ভবন। বছর তিনেক আগে মেয়ে জ্যোতি আক্তারকে বিয়ে দেন ঢাকার ধামরাই এলাকার মারুফ সরকারের সাথে। কিন্তু মেয়ের নৈতিক স্খলনের কারণে সেই স্বামীর সাথে তিন মাস আগে বিচ্ছেদ ঘটে। তার পর থেকে মেয়ে তাদের সাথেই থাকে। একমাত্র ছেলে মাজহারুল ইসলাম তুহিন (১৫) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মিতরা এলাকায় একটি আবাসিক মাদরাসায় থেকে লেখাপড়া করে।


আরো সংবাদ



premium cement