২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৬ বছর ধরে শিকলবন্দী প্রতিবন্ধী মোনতাজ

-

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় মোনতাজ উদ্দিন (৩০) নামের এক যুবককে ছয় বছর ধরে একটি ঘরে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে। পরিবারের আর্থিক দীনতার কারণে মানসিক ভারসাম্যহীন এ যুবকের সুচিকিৎসাও করা যাচ্ছে না। উপজেলার চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের ষাইটকাহন গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে মোনতাজ।
জানা যায়, মোনতাজ নামের ওই যুবকের এক চোখ অন্ধ। বাকপ্রতিবন্ধী। বছর ছয়েক আগে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। প্রাথমিকপর্যায়ে কবিরাজি ও পরে ডাক্তারি চিকিৎসা করেও সুস্থ করা যায়নি। একপর্যায়ে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়ে। বাড়ির লোকজনসহ আশপাশের লোকজনদের মারধর শুরু করে সে। এর পর থেকেই তাকে বাড়ির একটি ঘরে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে। ওই ঘরেই কাটছে তার দিনকাল। তিন ভাই ও চার বোন রয়েছে তার। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। ভাইয়েরা কোনো রকমে নিজেদের সংসার চালাচ্ছে। বোনদেরও বিয়ে হয়ে গেছে। বৃদ্ধ মা দোলেনা খাতুন মানসিক ভারসাম্যহীন এ ছেলেকে নিয়ে খেয়ে-না-খেয়ে দিন পার করছেন। আশপাশের লোকজনের বাড়ি থেকে চেয়ে খাবার আনছেন। নিজে খাচ্ছেন তাকেও খাওয়াচ্ছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন ও এ ছেলের একটি প্রতিবন্ধী কার্ডের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে ছোটাছুটি করেও ভাতার কার্ড জোটেনি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
মোনতাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পশ্চিম পাশের একটি দোচালা টিনের ঘর। ওই ঘরের একটি পিলারের সাথে মোনতাজের ডান পা শিকল দিয়ে বাঁধা। ঘরের দক্ষিণ পাশ খানিকটা খোলা। ওই ঘরের মেঝেতে একটি কাঁথা দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় বসে আছে সে। দীর্ঘদিন এভাবে থেকে অনেকটাই উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছে মোনতাজ।
বয়োবৃদ্ধ মা দোলেনা খাতুন জানান, প্রায় ছয় বছর ধরে তার ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। ১৫ দিন কবিরাজের চিকিৎসা দেয়ায় কিছুদিন ভালো ছিল। পরে আবারো সে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এরপর কিশোরগঞ্জ নিয়ে একজন ডাক্তার দখানো হয়। কিন্তু ভালো হয়নি। সংসারের অভাব অনটনের কারণে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য এলাকার অনেক লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি। কিন্তু কারো কোনো সহযোগিতা পাননি। এ ছাড়া একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে ছোটাছুটি করেও কোনো কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে চণ্ডিপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো: শামছুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোনতাজ উদ্দিন যে প্রতিবন্ধী তা আগে শনাক্ত করতে হবে। পরে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের আওতায় আনা হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, মোনতাজ উদ্দিনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে অচিরেই তাকে ভাতার কার্ডের আওতায় আনা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement