২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌন্দর্য হারাচ্ছে সাগর কন্যা কুয়াকাটা

কুয়াকাটা সৈকতজুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট হনয়া দিগন্ত -

পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় সাগর সৈকত দখল করে গড়ে উঠছে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা। একটি প্রভাবশালী মহল সৈকত লাগোয়া জায়গা দখল করে আধাপাকা টিনশেড ঘর নির্মাণ করে সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড লাগিয়ে দখল প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। আদালতের আদেশ অমান্য করে এবং ÿমতাসীন দলের শেল্টার নিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা নির্মাণ করছেন এসব স্থাপনা। এমনকি দখলদাররা নিজেদের সম্পত্তি দাবি করে সৈকত এলাকার জমিতে মার্কেট বানিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল অঙ্কের টাকা। আর এসব কিছু দেখেও অনেকটা অসহায় স্থানীয় প্রশাসন। ফলে দিন দিন সৌন্দর্য হারিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ হারাচ্ছে সাগর কন্যা কুয়াকাটা।
সৈকত এলাকার জমি সরকারি মালিকানাধীন থাকার কথা থাকলেও কুয়াকাটার চিত্র ভিন্নœ। সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে রা¯Íার দুই পাশ নিজেদের মতো করে দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী গ্রæপ। এমনকি সৈকতে প্রতি হাত জমি ২০০ টাকা করে ভাড়া দেয়া হয়েছে ÿুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে। কোনো ধরনের বিধিনিষেধ না থাকায় এখন সৈকতের বড় একটি এলাকা অবৈধ দখলদারদের কবলে। শুধু অস্থায়ী স্থাপনাই নয়, নিয়মনীতির তোয়ক্কা না করে মূল বেড়িবাঁধের বাইরেও পাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজও চলছে জোরেশোরে।
এ দিকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের তীরে থাকা সব স্থায়ী-অস্থায়ী অবৈধ স্থাপনা অপসারণে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে দুই আইনজীবী রিট আবেদন করলে ২ জুন ২০১১ হাইকোর্ট জনস্বার্থে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি করেন। এছাড়া আদালত বিশেষ কমিটির মাধ্যমে সমুদ্রসৈকত এলাকার সীমানা নির্ধারণ, একই সাথে সেখানে যাতে নতুন করে দখল ও স্থাপনা নির্মাণ না হয় সেই নির্দেশনাও দেয়া হয়। এই নির্দেশনার পর জেলা প্রশাসন সৈকতজুড়ে বেড়িবাঁধের বাইরে ২২৮টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে এর ৯০ শতাংশ ভেঙে দেয়। বাকিগুলো মালিক পÿের মামলা জটিলতার কারণে ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি বলে উপজেলা ভ‚মি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
এ দিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও সৈকত এলাকায় নতুন করে দখল ও স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট বেড়িবাঁধ থেকে সৈকতে পৌঁছলেই দুই পাশে অসংখ্য দোকানপাট চোখে পড়ে। আবার দেখা যায় কেউ কেউ কাঠ-টিন দিয়ে দোকানঘর নির্মাণ করছেন। ব্যবায়ীরা বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে দোকান নিয়ে ব্যবসা করছেন।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের সাবেক ডিন আব্দুল আহাদ বিশ্বাস বলেন, আসলে কোনো অবস্থাতেই সৈকতে লাগোয়া দোকানপাট থাকা উচিত নয়। এসব দোকানপাটের বর্জ্য সৈকতের পরিবেশ নষ্ট করছে। সৈকতে যেভাবে দখল হয়ে দোকানপাট উঠছে তাতে করে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সৌন্দর্য হারাচ্ছে। কুয়াকাটা সৈকত রÿায় প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এলাকার হোটেল সান রাইজের মালিক শাহ জালাল সৈকতের জমিতে ঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছেন। প্রতিটি দোকান থেকে তিনি ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের। ছোট বড় মিলিয়ে সৈকত লাগোয়া শতাধিক দোকানপাট রয়েছে বলে তারা জানান। সৈকতের পূর্ব পাশেও অসংখ্য ছোট ছোট দোকান বসিয়ে ব্যবসাবাণিজ্য চলছে। স্থানীয় এক শ্রমিকলীগ নেতা দোকানদারদের কাছ থেকে এককালীন টাকা নিয়ে তাদের বসিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে কুয়াকাটা পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্বাস কাজী বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, সৈকতের পূর্ব দিকে সরকারি জমি। সেখানে দোকানিরাই ঘর তুলে ব্যবসা করছেন। আর সৈকতের পশ্চিম দিকের জমির দাবিদার শাহজালাল মিয়া। তিনিই মার্কেট করে ঘর ভাড়া দিয়ে ভাড়া তোলেন। এর সাথে আমাদের দলীয় লোকজন জড়িত নয়। সৈকত দখল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহ জালাল বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনিসহ ৯ জন মিলে সাত একর ১৫ শতাংশ জমি স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে পটুয়াখালী জেলা জজ আদালতে আমরা মামলা করি। ওই মামলায় আমাদের স্থাপনা উচ্ছেদ না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমরা সরকারি জমি দখল করিনি। এই জমি আমাদের। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও সৈকত এলাকায় নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
সৈকতে কথা হয় ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা আরিফুল হকের সাথে। তিনি বলেন, সৈকত লাগোয়া দোকানপাট থেকে পর্যটকরা বিভিন্ন ড্রিংকস ও ডাব কিনে খাচ্ছেন। প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা দোকানের সামনেই ফেলে সৈকত অপরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে আসা গৃহবধূ জেসমিন পারভিন জানান, এই প্রথমবার তিনি কুয়াকাটায় এসেছেন। তিনি বলেন, সৈকত লাগোয়া দোকানপাটে পর্যটকরা বসছেন। পানি খেয়ে বোতল সৈকতেই ফেলছেন। নানা আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সৈকতে। এত অপরিষ্কার সৈকত শুধু এই দোকানপাটের জন্য। তিনি কুয়াকাটাকে আকর্ষণীয় করার জন্য সৈকত লাগোয়া দোকানপাট উচ্ছেদ এবং সৈকতের পরিবেশ ঠিক রাখার দায়িত্ব স্বেচ্ছাসেবীদের দেয়ার দাবি জানান।
কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) অনুপ দাশ বলেন, সৈকত দখলের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এসেছে। উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রাসাশকের নির্দেশে সৈকতের পূর্ব দিকে ১০০ দখলদারকে চিহ্নিত করে তালিকা করা হয়েছে। তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া ও উচ্ছেদকার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুনর রশিদ বলেন, মামলা জটিলতার কারণে সৈকত থেকে সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। তবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
পিরোজপুরে বাসের ধাক্কায় নদীতে ৪ মোটরসাইকেল ফরিদপুরে নিহতদের বাড়ি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী টিকটকে ভিডিও দেখে পুরস্কার, প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যে পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: পাটমন্ত্রী মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : সালাম নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ সচিব সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি’ মোদি কি হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেনা রাজনীতিতে ফিরছেন? টাঙ্গাইলে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ ফুলগাজীতে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল