১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেহেরপুরে বিনা বেতনের পাঠশালা

-

দুস্থ গরিব ও অসহায় পরিবারের সন্তানদের বিনা পয়সায় কোচিং করিয়ে শিÿা ÿেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন গাংনী উপজেলার স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র ওয়াজ্জেল হোসেন। পাঁচ বছর থেকে তিনি নিজ উদ্যোগে বিনা বেতনের পাঠশালায় শিÿার আলো ছড়িয়ে আসছেন। তার পাঠশালায় লেখাপড়া করে উপকৃত হচ্ছে এলাকার শিÿায় পিছিয়ে পড়া শত শত শিÿার্থী। এলাকার পিছিয়ে পড়া শিÿার্থীদের শিÿা দিয়ে এবং স্থানীয়দের দুঃখ-দুর্দশায় পাশে নিয়োজিত রাখতে চান তিনি। ওয়াজ্জেল হোসেন গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নূর ইসলামের ছেলে।
২০১৩ সালে বিদ্যালয়ে কোচিং না করায় বারবার পরীÿায় ফেল করছিল কসবা গ্রামের এক দিনমজুরের ছেলে ইসরাফিল হোসেন। মেধাবী শিÿার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পড়ালেখা বন্ধ করে দেয় সে। বিষয়টি জানতে পেরে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ান ওয়াজ্জেল হোসেন। নিজ উদ্যোগে সকাল-বিকেল ওই শিÿার্থীকে পড়িয়ে পরীÿায় অংশগ্রহণ করান। পাসও করে ভালোভাবে। পরীÿায় ভালো ফলাফল করায় দু’জনের মধ্যেই আশার আলো জেগে ওঠে। ওয়াজ্জেল উদ্যোম নিয়ে শুরু করেন বিনা পারিশ্রমিকে শিÿার আলো ছড়াতে। বেশ কয়েকজন শিÿার্থীকে নিয়ে শুরু হয় বিনা বেতনের পাঠশালা। সকাল-বিকেল শিÿা দিয়ে অর্ধ-শতাধিক শিÿার্থীকে মেধা তালিকায় নিয়ে আসেন তিনি। খোলা আকাশের নিচের পাঠশালা ও শিÿার্থীদের সফলতা দেখে মুগ্ধ হন এলাকার মানুষ। এলাকার অসহায় ও দুস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েরা ওয়াজ্জেলের বিনা বেতনের পাঠশালায় নিয়মিত পড়তে যায়। তার মানবিকতা ও শিÿার্থীদের সাফল্য দেখে স্থানীয় ইউপি সদস্য হজরত আলী তার একটি ঘর তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। সে ঘরে বসেই ওয়াজ্জেল এখন মাধ্যমিক পড়ুয়া শিÿার্থীদের শিÿা দান করে থাকেন। আর প্রাথমিক শ্রেণীর শিÿার্থীদের পড়ান ওয়াজ্জেলের বাড়ির উঠানে।
যে শিÿার্থীকে ওয়াজ্জেল প্রথম বিনা বেতনে পড়াতে শুরু করেন সেই ইসরাফিল এখন ৯ম শ্রেণীর ছাত্র। ইসরাফিল জানায়, ওয়াজ্জেল স্যার তার পাশে না দাঁড়ালে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যেত। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া জানায়, তার বাবা ও মা দু’জনেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার লেখাপড়ার খরচ জোগানো সম্ভব না হওয়ায় সুরাইয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন ওয়াজ্জেল হোসেন। কসবা গ্রামের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী ছাদিয়া জানায়, পিতা-মাতার অভাবের সংসারে প্রাইভেট পড়ানোর খরচ জোগাতে না পারায় পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছিলাম। ওয়াজ্জেল ভাইয়ের কাছে বিনা বেতনে পড়ে আমি এ বছর পরীÿায় ভালো ফলাফল করেছি। পাঁচ বছর ধরে ওয়াজ্জেল তার অবৈতনিক পাঠশালা পরিচালনা করে আসছেন।
স্থানীয়রা জানান, দিন দিন ওয়াজ্জেলের কাছে শিÿার্থীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে পাঠদানের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত জায়গা ও চেয়ার-টেবিল। এসবের ব্যবস্থা করতে পারলে শত শত শিÿার্থী উপকৃত হবে। এলাকার ছেলেমেয়েরাও শিÿিত হবে।
ওয়াজ্জেল হোসেন জানান, অর্থের অভাবে একজন ছেলেমেয়েরও যাতে লেখাপড়ায় সমস্যা না হয় তার জন্য বিনা বেতনের পাঠশালা চালু থাকবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান বলেন, ওয়াজ্জেল হোসেন তার বাড়িতে বিনা বেতনের যে পাঠশালা চালাচ্ছেন তাতে অনেক মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তিনি যাতে বড় পরিসরে কিছু করতে পারেন সে ব্যাপারে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement