২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভালুকার আবাসিক ও ফসলি জমিতে একের পর এক ইটভাটা

ভালুকার ধলিয়া পলাশতলী গ্রামে ইটভাটার চারপাশে এভাবেই স্তুূপাকারে রাখা হয়েছে সংরক্ষিত বন থেকে আনা লাকড়ি হনয়া দিগন্ত -

ময়মনসিংহের ভালুকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে লাইসেন্সবিহীন বেশির ভাগ ইটভাটাই স্থাপন করা হয়েছে আবাসিক এলাকায় ও ফসলি জমিতে। এমনকি জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে তা ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তা ছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে বাধ্যতামূলক কয়লা ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে চোরাইপথে কেটে আনা লাকড়ি। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে ঠিক তেমনি প্রতি বছর সরকার হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে হাইব্রিড হফম্যান, জিগ-জ্যাগ, ভার্টিক্যাল শ্যাফট ক্লিন অথবা পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ইটভাটা করার কথা থাকলেও ভালুকায় দুই-চারটি ছাড়া কোনো ইটভাটাই এ আইনের তোয়াক্কা করছে না। তা ছাড়া লোকালয়ের পাশেই ফসলের মাঠে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার কারণে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি, অন্য দিকে বনভূমি উজাড় করে কাঠ পোড়ানোর কারণে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তবে পরিবেশ অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব ভাটা চালানো হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এ বলা হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, ভার্টিক্যাল সফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরূপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। তা ছাড়া আবাসিক, জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকা, বনভূমি ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না এবং সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে করতে হবে। পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা চালু করলে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এই আইন অমান্য করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আর এসব ইটভাটা তদারকি করার জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় বনবিভাগ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকলেও ভালুকায় এসব কিছুই দৃশ্যমান নয়। বেশির ভাগ ইটভাটা মালিক এসব আইনের তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে দেদার তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে আশপাশের এলাকার আবাদি জমির উর্বরতা হ্রাস পাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছপালা হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিন উপজেলার ধরিয়া পলাশতলী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পলাশতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তরপাশ ঘেঁষে রয়েছে তিনটি ইটভাটা। হুমায়ন কবির খানের আল সাফা ব্রিক্স নামে লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার চারপাশে মজুদ করে রাখা হয়েছে কয়েক শ’ মণ লাকড়ি। চিমনী দিয়ে প্রচণ্ড বেগে বের হচ্ছে ধোঁয়া। আর সেই ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে স্কুলের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। ক্ষতি হচ্ছে আশপাশের জনবসতি ও ফসলের। ধলিয়া গ্রামে অবস্থিত দুলু চৌধুরীর মির্জা ব্রিক্সেও একই চিত্র চোখে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভালুকা উপজেলার খারুয়ালী, ধলিয়া, মেদীলা, মেদুয়ারী, ভাণ্ডাব, বিরুনীয়া, রাংচাপড়া, শান্তিগঞ্জ, চান্দরাটি, হবিরবাড়ি ও সীমান্তবর্তী উরাহাটি গ্রামে এবং পাশের শ্রীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ধামলই গ্রামে ১৬টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার দু’একটি ছাড়া কোনেটিরই লাইসেন্স হালনাগাদ নেই। অভিযোগ রয়েছে, বেশির ভাগ ইটভাটায় শিশু ও নারী শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয় এবং ইট তৈরিতে ছয় থেকে সাত ধরনের ডাইস ব্যবহার করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইটভাটা মালিক জানান, ভালুকার কোনো ভাটারই লাইসেন্স নেই। কিভাবে চলে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, জেলা প্রশাসক ও বনবিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টর ম্যানেজ করেই ভাটা পরিচালনা করা হয়। আর এসব ম্যানেজ করে থাকেন উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারি।
আল সাফা ব্রিক্সের মালিক হুমায়ন কবির খান জানান, ভালুকায় ১৬টি ইটভাটা রয়েছে। দু’একটি ছাড়া কোনোটারই লাইসেন্স নেই। প্রতিটি ইটভাটা থেকে ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দেয়া হয় সব দিক দেখভাল করার জন্য। তা ছাড়া প্রতি বছর পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ট্যাক্স হিসেবেও দেয়া হয়ে থাকে।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আফজাল হোসেন মণ্ডল জানান, ভালুকায় ১০-১২টি ইটভাটা রয়েছে। তবে লাইসেন্স নেই কোনোটিরই। সব দিক ম্যানেজ করেই বরাবর যেভাবে চালানো হতো সেভাবেই ভাটাগুলো পারিচালিত হয়ে আসছে।
পরিবেশ অধিদফতর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক সাবিকুন্নাহার নয়া দিগন্তকে জানান, এই অফিসে ভালুকার ২৯টি ইটভাটার তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টির ছাড়পত্র দেয়া হয়েছিল। চলতি বছর ৯টি ইটভাটার ছাড়পত্র হালনাগাদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেসব ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নেই অভিযান চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে ময়মনসিংহ দক্ষিণ ভালুকা অঞ্চলের সহকারী বন সংরক্ষক আবু ইউসুফের মোবাইল নম্বরে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ কামাল জানান, ভালুকায় ক’টি ইটভাটা রয়েছে বা কতটির কাগজপত্র ঠিক আছে তা না দেখে বলা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরের সাথে কথা বলে দেখছি কোনো কোনো ভাটা মালিক পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই এমনকি ভাটা আইন অমান্য করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। যদি ওরকম পাওয়া যায় তাহলে অভিযানের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুরের ইন্তেকাল থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথেপ্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

সকল