যশোরের ৮ উপজেলায় সাড়া জাগিয়েছে ব্রি-৮৭ ধান
- আব্দুল মান্নান শার্শা (যশোর)
- ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
যশোরের শার্শাসহ আট উপজেলায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি-৮৭ জাতের চিকন ধানচাষে সাড়া পড়েছে কৃষকদের মধ্যে। আর স্বর্ণা জাতের চাষে আগ্রহ কমছে। ব্রি-৮৭ জাতের চিকন ধান প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ২৭ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। এ ছাড়া স্বর্ণা ধান কাটার ১৫ দিন আগেই কাটা যায় ব্রি-৮৭ চিকন আমন ধান। মোটা জাতের স্বর্ণা ও গুটি স্বর্ণা ধান বাজারে বিক্রি করতে গেলে আড়তদার বা মহাজনরা যেখানে কথাই বলতে চান না সেখানে ব্রি-৮৭ ধান কিনতে তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এ কারণে চাষিদের মধ্যে নতুন এই ধান নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এই জাতের আমন ধানের ফলন ও দাম দুটোই বেশি। শুধু তাই নয়, চিকন এই জাতটি উঁচু জমিতে লাগালেও আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। তা ছাড়া এই ধান অনেক আগেই কাটার উপযুক্ত হওয়ায় যেসব জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন হয় সেসব জমিতে ব্রি-৮৭ ধান কাটার পর সরিষা, মসুর ডাল, ছোলাসহ বিভিন্ন ডালজাতীয় ফসল আবাদ করা যায়। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি-৮৭ চিকন ধান যশোরের শার্শা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, অভয়নগর, বাঘারপাড়া, কেশবপুরসহ আট উপজেলার কৃষকদের ভাগ্য খুলে দিয়েছে। এ বছর শার্শা উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে ১১ ইউনিয়নের ৩০ জন চাষির মাধ্যমে ৩০ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের এই চিকন ধানের চাষ করা হয়েছে। প্রত্যেক চাষি সফল হয়েছেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকের মাধ্যমে চাষ করে ফলন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কৌলিক সারির মাধ্যমে জীবনকাল নির্ধারণ করে আমন ধানের ব্রি-৮৭ জাতের ধানটি চাষ করার উদ্যোগ নেয়। গবেষণা সূত্র থেকে জানা গেছে, পূর্ণবয়স্ক ধানগাছের গড় উচ্চতা ১২২ সেন্টিমিটার, ধানগাছের কাণ্ড শক্ত, গাছ লম্বা হলেও ঢলে পড়ে না। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কোনো কোনো সময় হেলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাতা হালকা সবুজ, ডিগ পাতা খাড়া এবং ব্রি-৪৯ জাতের চেয়ে লম্বা ও প্রশস্ত। ধান পাকার সময় কাণ্ড ও পাতা সবুজ থাকে। চালের আকার ও ধানের আকৃতি চিকন লম্বা। এ ধানের অ্যামাইলোজ ২৭ শতাংশ। ব্রি-৮৭-এর জীবনকাল ব্রি-৪৯-এর চেয়ে সাত দিন কম এবং ফলনও বেশি। ১ আষাঢ় থেকে ২১ আষাঢ়ের মধ্যে ব্রি-৮৭ জাতের ধান রোপণ করতে হয়। চারার বয়স ২৫ থেকে ৩০ দিন হতে হবে। প্রতি গুছিতে দুই-তিনটি চারা রোপণ করতে হবে। ২১ আষাঢ়ের পরও এই ধান রোপণ করা যাবে, তবে ওই জমিতে নির্ধারিত সময়ে সরিষা চাষ করার পর তা কেটে বোরো ধান চাষ করা যাবে না। ধানের ফলন ঠিক রাখতে হলে চারার বয়স ২৫-৩০ দিন হতে হবে।
প্রতি বিঘা জমিতে ইউরিয়া ২৪ কেজি, টিএসপি ১১ কেজি, এমওপি-১৩ কেজি, জিপসাম ৯ কেজি ও জিংক সালফেট ১.৬ কেজি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অঞ্চল ভিত্তিতে সারের মাত্রা কিছু বাড়াতে পারেন চাষিরা। চাল শক্ত ও পরিপূর্ণ হওয়া পর্যন্ত পানির প্রয়োজন হলে সেচ দিতে হবে। ব্রি-৮৭ জাতের ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেকাংশে কম। পোকামাকড় ও রোগবালাই দেখা দিলে অবশ্যই কৃষি দফতরের সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা