২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রফতানি হচ্ছে ভাণ্ডারিয়ার মিষ্টি পান

-

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নে ৩৬০ হিন্দু পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে ২০০ পরিবারই মিষ্টি পানের চাষ করে। অর্ধশত বছর ধরে এ গ্রামে পান চাষ হয়। পান চাষই গ্রামের পরিবারগুলোর উপার্জনের প্রধান উপায়।
উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তরে দক্ষিণ ভিটাবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটিতে যে দিকে চোখ যায়, কেবলই পানের বরজ। কৃষকরা বরজ থেকে তুলে আনা পান ও পানের খোতা এনে স্থানীয় কাপালিহাট বাজারে স্তূপ করে রাখছেন। সেখানে স্তূপ করা পান ক্রয় করতে আসছে ভাণ্ডারিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা। এসব মিষ্টি পান ক্রয় করে অনেকেই দেশ-বিদেশে রফতানি করছেন।
ভাণ্ডারিয়া কৃষি অফিসের হিসাবে উপজেলায় গেল বছর ২২০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মিষ্টি পানের বরজগুলো ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। সেখানে ৫০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি পান চাষ হচ্ছে। ওই ইউনিয়নে পান চাষের মধ্যে দক্ষিণ ভিটাবাড়িয়া অন্যতম গ্রাম। তবে গ্রামটিতে ঠিক কী পরিমাণ জমিতে পান চাষ হয়, সেই হিসাব উপজেলা কৃষি অফিসের কাছে নেই। তবে উপজেলার ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর শিয়ালকাঠী, উত্তর ভিটাবাড়িয়া, মেদিরাবাদ ও সদর ইউনিয়নে কানুয়া গ্রামেও মিষ্টি পানের চাষ হয়। দক্ষিণ ভিটাবাড়িয়া গ্রামের পানচাষিদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গ্রামটিতে দুই শতাধিক পানের বরজ আছে। গ্রামের কৃষকরা জানান, সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার স্থানীয় কাপালিহাটে বিক্রির জন্য বরজ থেকে পান তোলা হয়। এ হাটে পিরোজপুর জেলা, রাজাপুর, কাউখালী, কাঁঠালিয়া উপজেলার ব্যবসায়ীরা এখানে এসে মিষ্টি পান কিনে নিয়ে যান এবং সেই পান দেশ-বিদেশেও রফতানি করছেন। স্থানীয় বাজারে বড় আকারের এক বিড়া (৮০টি) পান বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। মধ্যম আকারের এক বিড়া পান ৪৫ থেকে ৭০ টাকায় আর ছোট পানের বিড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। দক্ষিণ ভিটাবাড়িয়া গ্রামের পানচাষি নির্মল দত্ত বলেন, ‘আমার বাপ-দাদারাও পান চাষ করতেন। এখন আমি করছি। উপার্জনের একমাত্র পথ হচ্ছে পান চাষ। এখানকার পান বিদেশেও যায়। এ বছর ৬৬ শতক জমিতে পান চাষ করেছি। খরচ হয়েছে লাখ টাকা। এর মধ্যে দেড় লাখ টাকার পান বিক্রি হয়েছে। আরো কয়েক লাখ টাকার পান বরজে রয়েছে। তবে কৃষি ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে তার বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর পানের দামও ভালো পাওয়া গেছে। পান চাষের টাকায় ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছে। গ্রামের পানচাষি পথিৎ দাশ বলেন, তিনি ৪৮ শতক জমিতে পান চাষ করেছেন। এক লাখ টাকার পান বিক্রি হয়েছে এরই মধ্যে। আরো দেড় লাখ টাকার পান বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি। গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি বিড়া পান ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি বন্যায় তার বরজের ক্ষতি হয়। পান বিক্রি করে তিনি ৭ পরিবারের সংসার চালান। ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্রফুল্ল মিশ্র ও দুলাল চন্দ্র বলেন, ভিটাবাড়িয়ায় ৩৬০ ঘর হিন্দু পরিবার বসবাস করছেন। তার মধ্যে ২০০ পরিবার পান চাষ করে। দক্ষিণ ভিটাবাড়িয়া গ্রামসহ অত্র ইউনিয়নে পানের বরজ রয়েছে প্রায় ৫০০টি। এ বছর ফলন খুবই ভালো হয়েছে। শুধু আমাদের কাপালিহাটে প্রতি সপ্তাহে দুই লাখ থেকে তিন লাখ টাকার পান বিক্রি হয়। তবে সুদমুক্ত ঋণসুবিধা দিলে পানচাষিরা আরো উপকৃত হতেন।
সদরের পান ব্যবসায়ী পলাশ রায় বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকার বেশির ভাগ পান ঝাল। কিন্তু ভিটাবাড়িয়া-কাপালিহাট বাজার এলাকার পান মিষ্টি ও সুস্বাদু। তাই বাজারে ওই পানের কদর রয়েছে। আমি পাইকারি দরে পান কিনে রাজধানীসহ ভাণ্ডারিয়া বাজার ও রাজাপুর-কাউখালী এলাকায় পাইকারি বিক্রয় করি।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন নয়া দিগন্তকে বলেন, দক্ষিণ ভিটাবাড়িয়া গ্রামে এলাকায় পান চাষ বাড়ছে। তবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের সাহায্য করার জন্য তাদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই অতিদ্রুত তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা দেয়া হবে। পানচাষিরা যাতে সহজে ঋণসুবিধা পান, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement