১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তাড়াশে দেদার পুকুর খনন : কমছে ফসলি জমি, বাড়ছে জলাবদ্ধতা

তাড়াশ পৌর সদর সংলগ্ন মাঠ থেকে এভাবে পুকুর খনন করে মাটি অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

তাড়াশে আবাদি জমি দখল করে দেদার পুকুর খননের কারণে ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। আর নদী ও খাল দখল করে পুকুরের পাড় তৈরি করায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ দিকে দাবি মিটলে পুকুর খনন, না মিটলে অভিযানÑ এমন অভিযোগ উঠেছে তাড়াশ উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। অবশ্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ অভিযোগ অস্বীকার করে তাদের জনবল সঙ্কটকে দায়ী করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের এমন দ্বিচারিতায় এক দিকে কমছে ফসলি জমি, অন্য দিকে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। খাল ও নদী দখল করে পুকুরের পাড় করায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে এ বছর উপজেলায় সরিষার আবাদ নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। সরিষার আবাদ না হওয়ায় কোটি টাকার মধু আহরণও সম্ভব হয়নি। অথচ গত বছর এ উপজেলায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বাড়তি ফসল হিসাবে সাত হাজার ৭০০ মেট্রিক টন সরিষা পেয়েছিলেন কৃষক; যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ধানের দাম কম হওয়ায়, উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে পুকুর খননের দিকে ঝুঁকে পড়েন কৃষক। নিচু জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় গণহারে চলতে থাকে পুকুর খনন। সরকারি অনুমতি ছাড়া পুকুর খনন বেআইনি হলেও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতি বছর শত শত পুকুর খনন করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রমতে, গত এক দশকে এ উপজেলায় পুকুর খননের ফলে প্রায় পাঁচ শ’ হেক্টর কৃষিজমি কমেছে; যা বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তাড়াশ উপজেলায় ৫১৫টি পুকুর খনন করা হয়। এর ফলে ৩১৫ হেক্টর আবাদি জমি কমে যায়। চলতি বছরও এ উপজেলায় শতাধিক পুকুর খনন চলমান রয়েছে কিন্তু প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার।
স্থানীয় কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত জারিকারক মোসলেম উদ্দিন, দফতরি সানোয়ার হোসেন ও ড্রাইভার আল মামুন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের রহুল আমিন, সদর তহশীল অফিসের পিয়ন মোহাম্মদ রাকিব ও পুলিশের এএসআই আল আমিন খননকৃত এসব পুকুরে গিয়ে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দাবি করেন। তাদের দাবি মেটালে পুকুর খনন করা যায় আর না মেটালে অভিযান চালিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হয়।
উপজেলার চকজয়কৃষ্ণপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আজিজল হক ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘এরা আমার কাছে টাকা দাবি করেছিল, না দেয়ায় আমার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অথচ প্রতিদিন কী করে অসংখ্য পুকুর প্রকাশ্যে খনন করা হচ্ছে তা উপজেলা প্রশাসনই বলতে পারবে।’
সূত্র মতে, তাড়াশ উপজেলার পুকুর খননকারী চক্রের মূলহোতা আড়ঙ্গাইল গ্রামের জান মাহমুদ, শোলাপাড়া গ্রামের মুরশিদ ও আসাদ, সলঙ্গার নান্নু, কাউরাইলের আবদুস সাত্তার, তাড়াশ পৌর এলাকার আমিন ও আবদুল জলিল প্রতিটি পুকুর খননের জন্য জমির মালিকদের কাছ থেকে প্রতি বিঘা জমির জন্য ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেন। তারাই প্রশাসন, পুলিশ ও সাংবাদিকদের সাথে অর্থের বিনিময়ে চুক্তি করে পুকুর খনন করেন।
জানতে চাওয়া হলে তাড়াশ থানার ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ জানান, তিনি একাই তিনটি পদের দায়িত্ব পালন করার করণে অনেক সময় সব বিষয় দেখা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া তার জনবলের সঙ্কটও রয়েছে। তবে যে অভিযোগ পেলেন তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ বলেন, চলনবিল অঞ্চলের জন্য পুকুর খননের আলাদা নীতিমালা জরুরি। নিচু জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষক পুকুর খনন করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রশাসন বাধা দিয়েও বিশেষ কিছু করতে পারছে না বলে তিনি স্বীকার করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement