২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৌলতদিয়ায় প্রতিদিন ২৫ লাখ টাকার ছন ও কাশ বিক্রি

দৌলতদিয়ার চরাঞ্চল থেকে নদী পথে আসা ছন ও কাশ ট্রলার থেকে নামানো হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ছন ও কাশের বিশাল আড়ত জমে উঠছে। পদ্মাপাড়ের চরাঞ্চলে গজানো ছন ও কাশ বেচাকেনার জন্যই মূলত আড়তটি গড়ে উঠেছে। দৌলতদিয়া থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৫ লাখ টাকার ছন ও কাশ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে।
বর্ষা মৌসুম শেষে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে গড়ে ওঠা আড়তগুলোতে ছন ও কাশের জমজমাট ব্যবসা শুরু হয়েছে। কার্তিক মাসের প্রথম দিকে সবুজ রঙ পেরিয়ে ছন ও সাদা কাশফুল পেকে যখন বাতাসে উড়তে থাকে তখন থেকে ছন ও কাশবন কাটা শুরু হয়। পদ্মাচরের গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া এলাকার কুশাহাটা, ধোপাগাতি, ঢালারচর, আলোকদিয়া, কানাইদিয়া, রাখালগাছি, বেতকা, এলাইল, ফরিদপুরের ঢোলারচর, মজলিশপুর, কচালিয়া, ভাতার মারা চর, কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহ, হরিণবাড়িয়া, কুমারখালীর বিভিন্ন এলাকায় জেগে ওঠা হাজার হাজার বিঘা চরে গজানো ছন ও কাশফুল সংগ্রহ করে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আনা হয়। এরপর দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় গড়ে ওঠা শত শত পানের বরজে ব্যবহারের জন্য ব্যাপারিরা এখান থেকে ছন ও কাশ কিনে নিয়ে যান। দৌলতদিয়ায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছন ও কাশ কাটা, সংগ্রহ ও পরিবহনসহ নানা কাজ করছেন বলে জানা যায়।
সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটসংলগ্ন নদীপাড়ে হাজার হাজার বেঝা ছন ও কাশ ট্রাকে তোলার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ সময় নদীপথে ট্রলার ও নৌকা বোঝাই করে আসা ছন ও কাশ নামাতে দেখা যায়। শ্রমিকরা সেগুলো ট্রাকে লোড করছেন। এ ছাড়া ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়িতে করেও বিভিন্ন চর থেকে ছন ও কাশ আসছে। শ্রমিকরা জানান, প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে দৌলতদিয়া ঘাটে এ ব্যবসা চলে আসছে। প্রতিবছর বর্ষার পর থেকে দুই-তিন মাস পর্যন্ত এ ব্যবসা চলে। এর আগে ফসল আবাদের জন্য হাজার হাজার বিঘা জমিতে আগুন ধরিয়ে কাশবন ও ছন পুড়িয়ে ফেলা হতো। পরে দক্ষিাণাঞ্চলের পানের বরজ মালিকদের চাহিদার কারণে দৌলতদিয়ায় এ ব্যবসা গড়ে উঠেছে। পানের বরজে ছায়া ও বেড়া দেয়ার কাজেই এগুলো বেশি ব্যহৃত হয়। এ ছাড়া ঝাড়– ও বেড়ার কাজেও এগুলো ব্যবহার করা হয়।
দৌলতদিয়ায় ছন ও কাশবন বিক্রির জন্য প্রায় পাঁচ-ছয়টি আড়ত রয়েছে। আবুল কাসেম খান নামে একজন আড়তদার জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শেষে ব্যাপারি ও শ্রমিকদের দাদন (অগ্রিম টাকা) দিয়ে চরে পাঠানো হয়। তারা চরাঞ্চলের জমি মালিকদের কাছ থেকে ছন ও কাশ সংগ্রহ করে দৌলতদিয়ায় নিয়ে আসেন। এরপর সেগুলো যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। ওই সব এলাকার ব্যাপারিরা এসে সেগুলো পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যান। প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ ট্রাক ছান ও কশ দৌলতদিয়া থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়ে থাকে। প্রতি ট্রাকে দুই হাজার আঁটি ছন এবং পাঁচ হাজার আঁটি কাশ লোড দেয়া যায়। আঁটি-প্রতি ছন ২০-২৫ টাকা এবং কাশ ৮-১০ টাকায় বিক্রি হয়। সেই হিসাবে এক ট্রাক ছন ৪০-৪৫ হাজার টাকা ও কাশ ৪৮-৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
দৌলতদিয়া ৩ নম্বর ফেরিঘাটে ট্রাকে কাশ তোলার সময় শ্রমিকদের সরদার সকেল উদ্দিন জানান, পাঁচ হাজার আঁটি কাশ ট্রাকে লোড দেয়া বাবদ তারা আড়াই হাজার টাকা মজুরি পান। প্রতিদিন ১০ জন শ্রমিক মিলে দুই-তিন ট্রাক মালামাল লোড দিতে পারেন। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন জমি থেকে ছন ও কাশ কাটা, নৌকায় তোলা ও নামানো, ট্রাকে তোলা বিভিন্ন কাজের জন্য প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement