২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঝিনাইদহে থমকে গেছে আড়াই শ’ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণকাজ

ঠিকাদার ও নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরোধ
-

ঝিনাইদহে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের নির্মাণকাজ প্রায় ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হলেও ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর বিরোধের জেরে অবশিষ্ট কাজ থমকে গেছে। শতভাগ সম্পন্ন না হওয়ায় হস্তান্তর হচ্ছে না। ১০০ বেডের হাসপাতালে শত শত রোগীর ভিড়। সেবা পেতে হিমশিম খাচ্ছে তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলা শহরে অবস্থিত ১০০ শয্যার হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে বর্তমান সরকার হাসপাতলটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করে। সে লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৭ সালে টি ই অ্যান্ড ইউসিসিজেভি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ শুরু করে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে রোগী সেবার জন্যে স্থানান্তর করার কথা। এ নির্মাণকাজের টেন্ডার এমাউন্ট ৩৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ভেরিয়েশন, রিভাইসড এবং ওপি সমন্বয়সহ বৃদ্ধি ছয় কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মোট নির্মাণমূল্য ৪৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
কিন্তু বিলের প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে টাকা ছাড় করা হচ্ছে না এমন অভিযেগে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টি ই অ্যান্ড ইউসিসিজেভি। নির্বাহী প্রকৌশলীর দাবি, ঠিকাদার কাজ শেষ না করেই অতিরিক্ত বিল চাচ্ছেন। অন্য দিকে ঠিকাদারের অভিযোগ একগুঁয়েমি করে নির্বাহী প্রকৌশলী টাকা ছাড় দিচ্ছেন না। এতে ঠিকাদার আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টি ই অ্যান্ড ইউসিসিজেভির যৌথ ঠিকাদার আশফাক মাহমুদের দাবিÑ এ কাজে তাদের সাড়ে ৯ কোটি টাকা পাওনা আছে এবং গ্যারান্টি ও সিকিউরিটি মানি আরো সাড়ে ৯ কোটিসহ মোট ১৯ কোটি টাকা পড়ে আছে। গত অক্টোবরে কন্ট্রাক্ট এমাউন্ট থেকে মন্ত্রণালয় বরাদ্দকৃত বিল তিন কোটি টাকা ছাড়ের অনুমোদ দিয়েছে; কিন্তু ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এক রকম জেদ করেই পেমেন্ট দিচ্ছেন না। ওই টাকা পেমেন্ট দিলেই দ্রুততম সময়ে কাজটি সম্পন্ন করা সহজ হয়। বিলটি পেমেন্ট দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। ঠিকাদার আরো অভিযোগ করে বলেন, তিন কোটি টাকার ১০ ভাগ টাকা নির্বাহী প্রকৌশলী ঘুষ দাবি করেছেন। ঘুষের টাকা না দিলে তিনি বিল ছাড় করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তারা ঘুষ দিচ্ছেন না বলে বিলও পাচ্ছেন না। ঠিকাদার টিপু সুলতান অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহ, কালিগঞ্জ ও হরিণাকুণ্ডতে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি মডেল মসজিদ নির্মাণকাজে ওই নির্বাহী প্রকৌশলী মসজিদপ্রতি ৪০ লাখ টাকা করে মোট এক কোটি ২০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ঝিনাইদহ ২৫ বেড জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণাজের বিল আটকিয়ে রেখেছেন।
গণপূর্ত বিভাগের ঝিনাইদহ নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখের দাবি, ঠিকাদার কাজ শেষ না করেই অতিরিক্ত বিল চাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, বিলের জন্য ঠিকাদার তাকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি আরো জানান প্রয়োজনে অন্য ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানো হবে। তিনি ঘুষের টাকা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান।
এ দিকে ঝিনাইদহে কয়েকটি কাজ না করে কাজ করা দেখিয়ে ওই নির্বাহী প্রকৌশলী প্রায় এক কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তদন্তে নেমেছে দুদুকের অনুসন্ধানী টিম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর দুদকের উপপরিচালক নাজমুস সাদাত জানান,পত্রপত্রিকায় ওঠা খবরের প্রথমিক সত্যতা মেলায় নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুদক।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: আয়ুব আলী জানান, প্রতিদিন ১০০ বেডের এ হাসপাতালে ৪০০ রোগী ভর্তি থাকে। জনবল কম। ২৫০ বেডের কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালের শেষে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু হয়নি। তারা জানান, দ্রুত অবশিষ্ট কাজÑ সাবস্টেশন, লিফট, জেনারেটর ও ফিনিশিং সম্পন্ন করে হস্তান্তর করা হোক। তাহলে জনবলসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাবে। বিষয়টি তারা নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। সচিবও জানেন।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, ২৫০ বেডের হাসপাতাল নির্মাণকাজে পিছিয়ে আছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকৌশলীর ওপর দোষ চাপাচ্ছেন; অন্য দিকে প্রকৌশলী বলছেন, ঠিকাদার কাজ শেষ না করেই অতিরিক্ত বিল চাচ্ছেন। অন্য দিকে হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে রোগীরা কষ্ট পাচ্ছেন। আমরা চাই দ্রুত কাজটি সম্পন্ন হোক। প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরোধ কিংবা অবহেলায় ঝিনাইদহসহ এ অঞ্চলের মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে এটা আমরা সহ্য করব না। আমরা ব্যবস্থা নেব।


আরো সংবাদ



premium cement