২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পঞ্চগড়ে মীরগড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

টাকা হাতে মীরগড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা : নয়া দিগন্ত -

স্কুলে যাওয়ার সময় সব বাবা-মা হাত খরচের জন্য সাধ্যমতো সন্তানদের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন। এই টাকা দিয়ে তারা স্কুলের পাশের দোকান থেকে নানা ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার খায়। এসব খাবারের বেশির ভাগ মানসম্মত না হওয়ায় অনেক সময় শিশুরা পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। শিশুদের এসব বাজে খাবার থেকে বিরত রাখতে ও তাদের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব সৃষ্টি করতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে তারা পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সপ্তাহের চার দিন হাত খরচের টাকা নিয়ে তা জমিয়ে ব্যাংকে জমা রাখেন। আর শিক্ষাবর্ষ শেষে তারা শিক্ষার্থীদের এক বছরের জমানো টাকা একসাথে ফেরত দেন। এতে করে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা একসাথে অনেক টাকা পেয়ে তাদের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি, পোশাক তৈরিসহ অন্য খরচের টাকা নিজেরাই জোগান দিতে পারছে।
এবার ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ৫১ জন শিক্ষার্থীর হাতে তাদের জমানো এক লাখ ১১ হাজার ৪৯০ টাকা তুলে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১০৫ টাকা ফেরত পায় লৌভন নামের এক শিক্ষার্থী। আদিব ও রোদেলা পায় ছয় হাজার ২২০ টাকা করে। দুই হাজার টাকার নিচে পায়নি কোনো শিক্ষার্থী। টাকা বিতরণের সময় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিন্নাজ আলী, প্রধান শিক্ষক নুর আজমসহ স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থী লৌভন জানায়, আমি স্কুলের আসার সময় বাবা আমাকে খাওয়ার জন্য ১০-২০ টাকা করে দেয়। সাথে দুপুরে খাওয়ার জন্য টিফিনও স্কুলে নিয়ে আসি। স্যারদের কথামতো আমি বাইরের দোকান থেকে কিছু কিনে না খেয়ে ওই টাকা স্যারকে জমা দেই। আজ আমি একসাথে ১০ হাজার ১০৫ টাকা পেলাম। আমার খুব আনন্দ লাগছে।
ওই স্কুলের শিক্ষক আতাউর রহমান জানান, তাদের ক্লাস নেয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থী বলে-স্যার পেট ব্যথা করছে। সকালে পাতলা পায়খানা হয়েছে। ভালো লাগছে না। পড়া হয়নি। বিষয়টি আমাকে চিন্তায় ফেলে। অনেক চিন্তা করে দেখি তারা স্কুলের বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্যই এই সমস্যা হচ্ছে। তাদের বাইরের খাবার বন্ধ করলে আর এ সমস্যা থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে আলাপ করার পর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই বাড়ি থেকে আনা শিক্ষার্থীদের টাকা আমরা স্কুলে জমা রাখব। স্কুল ম্যানেজিং কমিটিও আমাদের সিদ্ধান্তের সাথে একমত হয়। এতে করে শিক্ষার্থীদের টাকা জমা নিলে তারা আর বাইরের খাবার খেতে পারবে না। সেই সাথে তাদের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে উঠবে। প্রাথমিকভাবে গত বছর পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমানো শুরু করি। কিন্তু তারা সচেতন না হওয়ায় বছর শেষে জমা হয় মাত্র ১৮ হাজার ৩৭০ টাকা। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে এসেছে সাফল্য। এবার পঞ্চম শ্রেণীর ৫১ জন শিক্ষার্থী সারা বছর জমিয়েছে এক লাখ ১১ হাজার টাকারও বেশি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুর আজম বলেন, সহকারী শিক্ষক আতাউর রহমানের পরামর্শে আমরা পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমানো শুরু করি। আমাদের বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র। তারা সবাই কম বেশি টাকা জমা করে। জমাকৃত টাকা থেকে অনেক শিক্ষার্থী খাতা-কলম কেনার টাকাও অগ্রিম নিয়ে যায়।
স্কুলের সভাপতি বলেন, এই স্কুলের ফলাফলও খুব ভালো। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমা করে বছর শেষে একসাথে ফেরত দেয়া একটি অনন্য উদ্যোগ বলে আমি মনে করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement