২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দক্ষিণ চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই : লাখো মানুষ ঝুঁকিতে

রায়পুরে দক্ষিণ গহিরা প্রাথমিক কাম সাইক্লোন সেল্টারের ভগ্নদশা হনয়া দিগন্ত -

দক্ষিণ চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় লাখ লাখ মানুষ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীবেষ্টিত বাঁশখালী আনোয়ারা ও বোয়ালখালী উপজেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই ঝুঁকিতে রয়েছেন। বর্তমান সরকার দক্ষিণ চট্টগ্রামে সাগর ও নদীভাঙন প্রতিরোধে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করলেও সেই অনুপাতে উপকূলে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করেনি।
সরেজমিন জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলায় গত ৩০ বছরে সরকারি-বেসরকারিভাবে বাঁশখালী উপজেলায় ১০২টি, আনোয়ারা উপজেলায় ৫৯ এবং বোয়ালখালী উপজেলায় মাত্র ছয়টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এই ১৬৭টি সাইক্লোন শেল্টারগুলোর ধারণক্ষমতা রয়েছে মাত্র এক লাখ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষের। তা ছাড়া এসব সাইক্লোন শেল্টার বছরের পর বছর ধরে মেরামত না করার কারণে ব্যবহার অনুপযোগীও হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০১২ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ সমগ্র জেলায় ৪৮৯টি সাইক্লোন শেল্টার ছিল। বর্তমানে প্রায় ৫২০টিতে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় আরো ১০টি নতুনভাবে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণকাজ চলছে। তিনি জানান, বর্তমানে পুরো জেলার সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে মাত্র পাঁচ লাখ মানুষের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।
বাঁশখালী গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী বলেন, সাগরঘেঁষা ইউনিয়ন গণ্ডামারা পুরো ইউনিয়ে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই, যা আছে তাও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
একইভাবে উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল ছিদ্দিক আবু বলেন, তার ইউনিয়নে ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে, সেই অনুপাতে ৮-১০টি সাইক্লোন শেল্টার থাকলেও মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই, টিউবওয়েল নেই, বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই, শৌচাগারও নেই। তা ছাড়া পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার না থাকার কারণে আপদকালীন সময়ে হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম বলেন, তার ইউনিয়নে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই, যা আছে তার মধ্যে অনেকগুলো মেরামতের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
বোয়ালখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: ইসমাইল বলেন, উপজেলায় মাত্র পাঁচটি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। নতুন নির্মিত আরো একটিসহ ছয়টি সাইক্লোন শেল্টারে ধারণ ক্ষমতা রয়েছে তিন হাজার ৭০০ জনের। এসব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন বলেন, উপজেলায় জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ হলেও ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস দেখা দিলে উপজেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এই উপজেলায় আরো নতুনভাবে ছয়টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণকাজের দরপত্র হয়েছে। আরো নতুনভাবে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, ১০৩টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে, তার প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা রয়েছে গড়ে ৩০০ থেকে ৬০০ জন। উপজেলা প্রকৌশলী আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, ২০টি সাইক্লোন শেল্টার মেরামতের কাজ চলছে।
আনোয়ারা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ৫৯টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে, তা ছাড়া রায়পুরে আরো একটি নতুন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে ৬০ হাজার থেকে ৬৫ হাজার মানুষ এসব শেল্টারে আশ্রয় নিতে পারেন।
উপজেলা প্রকৌশলী তাছলিমা জাহান বলেন, ২৪টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণকাজের দরপত্র হয়েছে; কিছু কিছু মেরামতের কাজ চলছে বলে তিনি জানান। ওই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের বলেন, আপদকালীন সময়ে সাইক্লোন শেল্টার ছাড়াও উপজেলার স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় হাজার হাজার মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। তা ছাড়া উপজেলায় আরো সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের বিষয়ে প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৬০ সালে ও ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর দক্ষিণ চট্টগ্রামের পুরো উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছিল। ওই সময়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা ও পটিয়ার, পশ্চিম পটিয়া বর্তমানে কর্ণফুলী উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষসহ হাজার হাজার গবাদিপশু প্রাণ হারায়। ওই দুটি বড় দুর্যোগে উপকূলীয় এলাকার প্রাণহানিসহ কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছিল। এর পরই সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের আর্থিক সহযোগিতায় পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ পুরো জেলায় সাইক্লোন শেল্টার স্থাপন করা হয়েছিল। তবে তা ছিল লাখ লাখ মানুষের জন্য অপ্রতুল।

 


আরো সংবাদ



premium cement