২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

২১ বছরেও এমপিও হয়নি জীবননগর পাকা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের

-

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার এক প্রত্যন্ত এলাকার নাম পাকা। শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের কিছু মানুষের উদ্যোগে মনোরম পরিবেশে পাকা নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা সব সময় ভালো ফল করলেও ২১ বছর পরও সরকারি কোনো সহয়োগিতা না পাওয়ায় অবকাঠামো উন্নয়নসহ সব ধরনের উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়েছে সম্ভাবনাময় বিদ্যালয়টি। সর্বশেষ সব শর্ত পূরণের পরও স্কুলটি এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান না পাওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অন্য দিকে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের পাকা গ্রামের আশপাশের কোনো গ্রামে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়ে গ্রামটি। ফলে কোমলমতি শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে অল্প বয়সেই কৃষিকাজের সাথে জড়িয়ে পড়ত। আর নারীশিক্ষার কথা তো কেউ ভাবতেই পারতেন না। এসব দিক বিবেচনায় এনে এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক পাকা গ্রামে একটি নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেন।
এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় ১৯৯৮ সালে পাকা নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলটি প্রথম স্বীকৃতি পায় ২০০৪ সালে। পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে স্বীকৃতি মেলে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২১ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকসহ ১০ জন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী বাড়ির খেয়ে পকেটের টাকা খরচ করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করিয়ে আসছেন। এলাকার কিছু দানশীল মানুষ আর শিক্ষকদের পকেটের টাকায় স্কুলঘর মেরামতের কাজ চলছে। শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির আশায় ২১ বছর ধরে ঘরের খেয়ে পাঠদান করে এলেও সম্প্রতি এমপিওভুক্তির তালিকায় স্কুলটির নাম স্থান না পাওয়ায় সবাই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ময়েজ উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়টি স্থাপনের পর থেকে প্রতিটি পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা ভালো রেজাল্ট করে আসছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৪৭ জন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘ দিন ধরে পকেটের পয়সা খরচ করে আর ঘরের খেয়ে নিরলসভাবে কাজ করে আসছেন; কিন্তু সম্প্রতি ঘোষিত এমপিওর তালিকায় স্কুলটির নাম না থাকায় তাদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। বিদ্যালয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একটানা সময় দেয়ার কারণে অন্য কোথাও আর কোনো কাজের সুযোগ না পাওয়ায় বড় কষ্টে কাটছে তাদের জীবন। তার ওপর ২১ বছরেই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্তি না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীদের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম আলী বলেন, আজ পর্যন্ত কোনো সরকারি অনুদান বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ে নিরাপত্তাপ্রাচীর ও শহীদ মিনার পর্যন্ত নেই। টিনশেড ভবন অনেক আগেই ফুটো হয়ে বর্ষার সময় পানি পড়ে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যতবার পরিদর্শন করেছেন, ততবারই স্কুলের পরিবেশ দেখে সন্তুষ্ট হয়েছেন।
২০১০ সালে এমপিওভুক্তির সব সুযোগ থাকলেও সে সময় হয়নি। শিক্ষক-কর্মচারী সবাই বিনা বেতনে খাটতে খাটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের সবার সংসার চলে ধারদেনা করে। আমাদের সবার শতভাগ আশা ছিল এবার বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হবে; কিন্তু এবারো আমাদের বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্তির তালিকায় আসেনি। তারপরও স্কুলটি যাতে এমপিওভুক্ত হয় সে জন্য আমরা আমাদের সাফল্য ধরে রাখব ইনশা আল্লাহ।

 


আরো সংবাদ



premium cement