২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজবাড়ীতে ২৬৭ জনের কারাদণ্ড তবুও থামছে না ইলিশ শিকার

শিকার নিষিদ্ধ সময়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাছ শিকারে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন জেলেরা : নয়া দিগন্ত -

চলমান ইলিশ রক্ষা অভিযানের চতুর্দশ দিনে রাজবাড়ীতে ২৬৭ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা করা হলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জীবিকার তাগিদে নদীতে নামছেন জেলেরা। এর বিরুদ্ধে অভিযানে গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত ২৬৭ জন জেলেকে আটকের পাশাপাশি দুই হাজার ৬৪০ কেজি (৬৬ মণ) ইলিশ মাছ, ১২ লাখ ৮৫ মিটার জাল ও চারটি নৌকা জব্দ করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত ১৪ দিনে রাজবাড়ীতে মোট ২৬৭ জন জেলেকে আটক করা হয়। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদরে ১৪২ জন, পাংশায় ১৪ জন, কালুখালীতে ২৮ ও গোয়ালন্দে ৬৪ জনকে আটক করা হয়।
তাদের মধ্যে ২৪৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল এবং ১৯ জনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে দুই হাজার ৬৪০ কেজি ইলিশ মাছ, ১২ লাখ ৮৫ হাজার মিটার জাল ও চারটি নৌকা জব্দ করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, মৎস্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের সহযোগিতায় প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে দিনে-দুপুরে জেলায় বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে মাছ ধরছেন জেলেরা। প্রতিটি নৌকায় দুই থেকে চারজন করে জেলে মাছ ধরায় ব্যস্ত থাকেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অভিযানে যাওয়ার আগেই জেলেরা সংবাদ পেয়ে যান। তারা জাল গুটিয়ে নৌকা নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান।
এ ছাড়া রাতেও নদীতে নামেন জেলেরা। ইলিশের প্রজনন মওসুম হওয়ায় অল্প সময়ে অনেক মাছ পাওয়া যায়। সেই মাছ নদীর পারে আসা ক্রেতাদের কাছে অল্প দামে বিক্রি করা হয়। বড় মাছ ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং ছোট মাছ ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া জেলেদের সহযোগিতায় মওসুমি ব্যবসায়ীরা মাছ নিয়ে বিভিন্ন এলাকার বাড়িতে রেখেও বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে। এ দিকে প্রশাসনের অভিযান চলমান থাকলেও এরই মধ্যে নদীতে নামছেন জেলেরা। এক দিকে চলে প্রশাসনের অভিযান, অন্য দিকে জেলেদের মাছ ধরা। অভিযানের সময়ে প্রতি বছর জেলার বিভিন্ন গ্রামে রাতে ও ভোরে মাথায় ও ভ্যানে করে মাছ বিক্রি করতে দেখা গেলেও এবার তেমনটি চোখে পড়ছে না। তবে নদীর পাড়ে মিলছে মাছ। অনেকে পালিয়ে পালিয়ে সেখান থেকে মাছ কিনছেন।
রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলার চারটি পদ্মা নদীর কোলঘেঁষা, যা পাংশা থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রতিদিন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, জেলা ও উপজেলা মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশ, ২০ আনসার ব্যাটালিয়ানের সদস্যরা ভোর রাত থেকে সকাল এবং বিকেল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন অংশে অভিযান পরিচালনা করেন।
এলাকাবাসী জানান, জেলার কালীতলা, নয়নসুখ, অন্তারমোড়, দেবগ্রাম, কাওয়ালজানিসহ বিভিন্ন স্থান জেলে ও ক্রেতাদের অভয়াশ্রম। এসব স্থানে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রায়ই ভিড় জমান। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলে মওসুমি ব্যবসায়ীদের দেখা মিলছে মাঝে মধ্যে। পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো থাকতে জেলেরা মাছ ধরেছেন এবং প্রশাসনের ভয়ে বিক্রি করছেন কম দামে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলেরা জানান, তারা মাছ ধরে সংসার চালান। ২২ দিন মাছ না ধরে বসে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে; যে কারণে তারা জেল-জরিমানার ভয় না করে মাছ ধরছেন। অভিযানের শুরুতে মৎস্য বিভাগ ২০ কেজি করে চাল দিয়েছে। কিন্তু শুধু চাল দিয়ে কি চলে? সংসারে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাসহ কত খরচ। তাই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মজিনুর রহমান জানান, জেলায় ৯ হাজার ১১৯ জন নিবন্ধিত জেলে থাকলেও ইলিশ ধারার সাথে সম্পৃক্ত আছেন চার হাজার ৬৪০ জন। যাদের প্রত্যেককে অভিযানের শুরুতে ২০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। আগামীতে তার যাতে ৩০ কেজি করে চাল পায় সে বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। ইলিশ রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। অভিযানে তার দফতরসহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আনসার ব্যাটালিয়ান, নৌ পুলিশ সহযোগিতা করছে। এ দিকে অভিযানে যাওয়ার আগেই জেলেরা জেনে যান স্বীকার করে তিনি বলেন, একটি চক্র তার অফিস ও গোদারবাজার এলাকায় তাদের ওপর নজর রাখে। যখন তারা নদীতে অভিযানে যান, তখন তারা জেলেদের সতর্ক করে দেয়।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, ইলিশ রক্ষায় নদীতে জেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করছে। অভিযানের শুরুতেই জেলেদের চাল বিতরণ করা হয়েছে। সে সময় জেলেদের বোঝানো ও সচেতন করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও কেন তারা নদীতে নামছে বুঝতে পারছি না। তবে এ ২২ দিন জেলেরা ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলে তাদের জন্যই ভালো। কারণ মাছগুলো ডিম দিলে নদীতে প্রচুর মাছ হবে এবং জেলেরা আগামীতে বেশি ও বড় বড় মাছ পাবেন। এতে তারাই তখন আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। সে জন্য এখন তাদের দেশ ও জাতির স্বার্থে মাছ ধরা বন্ধ রাখা উচিত। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর রাজবাড়ীর নদীর পাড় ও গ্রামগুলোতে বেশি মাছ বিক্রি হচ্ছেÑ এমন সংবাদ তেমন শোনা যাচ্ছে না। মাছ বিক্রি হচ্ছে এমন সংবাদ পেলে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসনের লোকজনকে পাঠানো হয়। কিন্তু দূরত্ব ও সময়ের কারণে ওই স্থানে গিয়ে তাদের পাওয়া যায় না। অভিযোগের সত্যতা পেলে জেলা প্রশাসনের দিক থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন

সকল