২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাগাতিপাড়ায় আমন ক্ষেতে ইঁদুরের হানায় দিশেহারা কৃষক

বিলগোপালহাটি গ্রামে এভাবেই ধান কেটে সাবাড় করেছে ইঁদুর : নয়া দিগন্ত -

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ক্ষেতের কাঁচা ধানের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে ইঁদুর। ইঁদুরের উৎপাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ধান চাষিরা। এক দিকে বোরো ধান ও পাটের দাম না পেয়ে অনেক কৃষক লোকসান গুণছেন। সেই লোকসান মাথায় নিয়ে আমন চাষাবাদে নেমেছেন তারা। কিন্তু আমন ধান ক্ষেতে ব্যাপকভাবে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দেয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। আমনের মাঝা-মাঝি সময়ে ইঁদুরের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, মওসুমের শুরু থেকেই ইঁদুর দমনে আদাজল খেয়েই মাঠে নেমেছেন। মাঠ থেকে ইঁদুর তাড়াতে নানা পদ্ধতির ব্যবহারসহ সমন্বিতভাবে কাজ করার পরামর্শ দিতে কৃষকদের সাথে আলোচনা সভা, ব্যানার, লিফলেট বিতরণসহ নানা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তা ছাড়া মাসব্যাপী ইঁদুর নিধন অভিযানেরও উদ্বোধন করা হয়েছে।
উপজেলার বিলগোপালহাটি গ্রামের আবু রায়হান, জিগরী গ্রামের সাজেদুল, ক্ষিদ্রমালঞ্চি গ্রামের আসমত আলি, মল্লিকপুর গ্রামের শাজাহান, বাজিতপুর গ্রামের রাজন, কাঁকফো গ্রামের ওসমান, কোয়ালিগাড়া গ্রামের আমিন, চকগোয়াশ গ্রামের আলা উদ্দিনসহ বেশ কিছু কৃষকদের সাথে প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা জানান, মওসুমের শুরুতেই বৃষ্টির অভাবে ধান রোপণের কিছুটা সমস্যা হলেও মওসুমের শেষের দিকে এসে বৃষ্টি হওয়ায় ও কৃষকদের চেষ্টায় কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছেন তারা। এ দিকে সবুজে সবুজে ভরে উঠছে পুরো মাঠ। সেইসাথে রঙিন হয়ে উঠেছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। এমন সময় ক্ষেতের কাঁচা ধানে ইঁদুরের আক্রমণে যেন কৃষকের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হতে চলেছে। কাঁচা ধানের গাছ বরাবর ঈঁদুর কেটে দেয়ায় নতুন করে চিন্তায় পড়েছেন তারা। ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষক। কৃষকরা ক্ষেতে বিষমাখা বিভিন্ন পদ্ধতিতে টোপ, আতব চালের টোপ কিংবা ফাঁদ পেতেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। তারা আরো জানান, আমন ধানে এত পরিমাণে ইঁদুরের আক্রমণ আগে কোনো দিন দেখেননি।
বিলগোপালহাটি গ্রামের কৃষক আবু রায়হান জানান, চলতি মওসুমের শুরুতে শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে মাত্র ৩.৫ বিঘা জমিতে ধানচাষ করেছেন তিনি। ক্ষেতে পোকা আক্রমণ করলে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা দমন করা যাচ্ছে। কিন্তু এই বছর ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। তার ৩.৫ বিঘা ধানের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতক ধান কেটে সাবাড় করে ফেলেছে ইঁদুর। ইঁদুর দমনে নতুন পদ্ধতি বের না হলে আগামীতে ক্ষেতের অর্ধেক ফসল ইঁদুরের পেটে চলে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলার তমালতলা বাজারের সার ও কীটনাশক বিক্রেতা মেসার্স শিশির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকার মো: আলাউদ্দিন বলেন, তার ত্রিশ বছরের ব্যবসা জীবনে এ বছরের মতো ইঁদুরের আক্রমণ তিনি আগে দেখেননি। ইঁদুর নিধনের কীটনাশকও তিনি গত বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি করেছেন। তা ছাড়াও ইঁদুর মারার কীটনাশকের এত বেশি চাহিদা যে কোম্পানিগুলোও ঠিক মতো জোগান দিতে পারছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাগাতিপাড়া উপজেলায় এ বছর চার হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে ধানচাষ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন। এ দিকে বৃষ্টিপাত কম এবং দ্রুত বংশবিস্তারকারী প্রাণী হওয়ায় ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। কিন্তু চলতি মওসুমের শুরু থেকেই উপজেলা কৃষি অফিস ইঁদুর দমনে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। তারা কৃষকদের ধান ফাঁড়ি দেয়া, শামুক ও শুটকির সাথে বিষ মিশিয়ে জমিতে দেয়া, আইল পরিষ্কার রাখা, ইঁদুরের গর্তে গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়া, শুকনা মরিচ পুড়িয়ে গর্তে দেয়া এবং সমন্বিতভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামে দলীয় আলোচনা ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সচেতন করছেন। স্থানীয় উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবি, প্রথম দিকে ইঁদুরের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলেও তাদের পরামর্শ মতো কৃষকরা কাজ করায় বর্তমানে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে আসছে।
তারা জানান, উপযুক্ত এবং অনুকূল পরিবেশে একজোড়া প্রাপ্তবয়স্ক ইঁদুর বছরে তিন হাজারটি বংশধরের সৃষ্টি করে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে সরাসরি ভক্ষণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখে এমন প্রাণীগুলোর মধ্যে পেঁচা, শিয়াল, বনবিড়াল, সাপ, গুঁইসাপ এবং বিড়ালের আবাসস্থল নষ্ট হওয়ায় খাদ্য শৃঙ্খল অনেকটা ভেঙে যাওয়ার ফলে ইঁদুরের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ দিকে একজোড়া পেঁচা চার মাসের একটি প্রজনন চক্রে চার-ছয়টি বাচ্চা লালন পালনে প্রায় তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার ইঁদুর ভক্ষণ করে থাকে। অথচ গ্রামের মানুষ এই পেঁচাকে অলক্ষ্মীর প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করে নিধন করে থাকে।
এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী জানান, চলতি মওসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য থাকায় ও ফসলের জমিতে পুকুর খনন করার ফলে উপযুক্ত বাসস্থান তৈরি হওয়ায় মাঠে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রতিদিন দলীয় আলোচনা, ব্যানার, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তা ছাড়াও মাসব্যাপী ইঁদুর নিধন অভিযান চলমান রয়েছে। ফলে বর্তমানে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সমন্বিত ইঁদুর দমন পদ্ধতি ও জৈবিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে বলে তিনি পরামর্শ দেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য বাংলাদেশের প্রাথমিক দল ঘোষণা বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় গাজীপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে মৃত হাতি উদ্ধার প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলির নিন্দা জামায়াতের রাজধানীতে তৃষ্ণার্তদের মাঝে শিবিরের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ রাজশাহীতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার হেরোইনসহ যুবক গ্রেফতার এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা গাজার বালিতে আটকে পড়েছে ইসরাইলি বাহিনী : হামাস মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন : যা বলছে আওয়ামী লীগ মান্দায় বিদ্যুতের আগুনে পুড়ল ৮ বসতবাড়ি

সকল